আইকিউ এয়ারের হিসাবে কানপুর ভারতের দূষিত (বায়ু) শহরগুলোর একটি। নির্দিষ্ট করে বললে, ভারতের দূষিত শহরগুলোর মধ্যে কানপুরের অবস্থান সপ্তম। সেটি ভুলিয়ে দিতেই কি স্টেডিয়ামের নাম গ্রিন পার্ক?
রসিকতা নয়, স্টেডিয়ামের পাশেই বহতা গঙ্গা নদী আর তার চারপাশটা জুড়ে নগরায়ণের মধ্যে গাছগাছালিও কম নেই। তবে গ্রিন পার্কে যে জমিনটুকু—২২ গজ—আগামী কিছুদিন সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে, তাতে সবুজের ছোঁয়া নেই। কালো মাটি। ইএসপিএনক্রিকইনফো জানিয়েছে, গ্রিন পার্কে উইকেট হবে কালো মাটির। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামকে মনে পড়ল কি?
শেরেবাংলার কালো মাটির উইকেটের সুখ্যাতির চেয়ে কুখ্যাতিই বেশি। ব্যাটিং করা কঠিন, রান ওঠে না—এমন সব সমালোচনা আছে শেরেবাংলার ২২ গজ নিয়ে। কিন্তু গ্রিন পার্ক তেমন নয়, ফ্ল্যাট উইকেটের জন্য সেখানের উইকেটকে কেউ কেউ ‘বিলিয়ার্ডস টেবিল’ বলেও ডাকেন। কারণ? বিলিয়ার্ডের বোর্ডও একদম সমান তো তাই। বল এদিক-সেদিক করে না। ক্রিকেটীয় ভাষায় সোজা সোজা আসে। যদিও গ্রিন পার্কে একটু থেমে আসবে। মানে বল ব্যাটসম্যানের ব্যাটে।
গ্রিন পার্ক ভারতের সবচেয়ে পুরোনো ক্রিকেট স্টেডিয়ামগুলোর একটি। ৭৯ বছর আগে যাত্রা শুরু করা এই স্টেডিয়ামের নাম রাখা হয়েছে এক ব্রিটিশ নারীর নামে। ম্যাডাম গ্রিন—চল্লিশের দশকে তিনি সেখানে ঘোড়া চালনা শিখতেন। আরও একটি নাম আছে গ্রিন পার্কের—উলমারস টার্ফ। স্টেডিয়ামের উল্টো পাশে ম্যাকরবার্ট হাসপাতালে প্রয়াত কোচ বব উলমারের জন্ম। হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডও নাকি তাঁর নামে।
কানপুর টেস্টে স্পিনারদের দাপট দেখার সম্ভাবনাই বেশি। সেখানে এর আগে ২টি টেস্ট খেলে ১৬ উইকেট নিয়েছেন চেন্নাই টেস্টে সেঞ্চুরি ও ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়া ভারতের স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন।
অর্থাৎ ঐতিহ্য খুঁজতে চাইলে গ্রিন পার্ক হয়তো নিরাশ করবে না। কিন্তু কানপুরের উদ্দেশে আজ চেন্নাই থেকে যাত্রা শুরু করা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সেখানে এসব খুঁজে কাজ নেই। খুঁজতে হবে জয়, যা পুঁজি করে তাঁরা সমতায় ফিরতে পারবে টেস্ট সিরিজে। আর সেই জয় খোঁজার জায়গা একটাই—গ্রিন পার্কের ২২ গজ।
চেন্নাইয়ের লাল মাটিতে প্রথম টেস্টে ২৮০ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। সেই উইকেটে কিছুটা ঘাসও ছিল, সকালের সেশনে উইকেটে আর্দ্রতা থাকায় সাহায্য পেয়েছেন পেসাররা। কিন্তু গ্রিন পার্কের উইকেট ঐতিহ্যগতভাবে তেমন না। ফ্লাট উইকেট হওয়ায় ঐতিহ্যগতভাবে সেখানকার ২২ গজ ব্যাটসম্যান-সহায়ক। তবে ম্যাচের সময় গড়ানোর সঙ্গে উইকেটের আচরণও পাল্টে যেতে থাকে। স্পিনারের বলে বাঁক পান। উইকেটে আর্দ্রতা থাকলে সকালের সেশনে পেসারদের জন্যও কিছু না কিছু থাকবে। তবে বাউন্স ও ‘ক্যারি’ (পিচে পড়ার পর গতি পাওয়া ও বল ওঠা) বেশিক্ষণ পাবেন না পেসাররা। আর স্পিনারদের জন্য দুঃসংবাদ হলো, এই উইকেটে ‘র্যাঙ্ক টার্ন’ (অস্বাভাবিক বাঁক) পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
চেন্নাইয়ের উইকেটে অন্তত তৃতীয় দিন পর্যন্ত ‘ট্রু বাউন্স’ পেয়েছেন বাংলাদেশ ও ভারতের পেসাররা। কানপুরের গ্রিন পার্কে এই ধারা থাকবে না। বল ধীরে ধীরে নামতে শুরু করবে দ্রুতই। বলের গতিও মন্থর হয়ে উঠবে ধীরে ধীরে টেস্ট ম্যাচ গড়িয়ে চলার সঙ্গে। তখন চলবে স্পিনারদের রাজত্ব। ক্রিকইনফো জানিয়েছে, কালো মাটির কারণে বলের গতি মন্থর হয়ে আসে।
সাকিব আঙুলে চোট পেলেও কানপুর টেস্টে তাঁর অলরাউন্ডার হিসেবে খেলার সম্ভাবনা বেশি। তাঁর বাঁহাতি স্পিনের সঙ্গে অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজও খেলেছেন চেন্নাই টেস্টে। ভারতের প্রথম চার ব্যাটসম্যানের মধ্যে তিন ডানহাতি থাকায় তৃতীয় স্পিনার হিসেবে বাঁহাতি তাইজুল ইসলামকে খেলাতে পারে বাংলাদেশ।
অর্থাৎ কানপুর টেস্টে স্পিনারদের দাপট দেখার সম্ভাবনাই বেশি। সেখানে এর আগে ২টি টেস্ট খেলে ১৬ উইকেট নিয়েছেন চেন্নাই টেস্টে সেঞ্চুরি ও ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়া ভারতের স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। তাঁর সঙ্গে রবীন্দ্র জাদেজা তো থাকবেনই, এর পাশাপাশি গ্রিন পার্কের উইকেটের আচরণ মাথায় রেখে দলে তৃতীয় পেসারের জায়গায় তৃতীয় একজন স্পিনার খেলাতে পারে ভারত। সেই স্পিনার কে হবেন—কুলদীপ যাদব না অক্ষর প্যাটেল?
চেন্নাইয়ে বাংলাদেশের চার বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের টপ অর্ডার বিবেচনায় নিলে বাঁহাতি কবজির স্পিনার কুলদীপের খেলার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ, বোলিং বিভাগে তাতে বৈচিত্র্য বাড়বে। আর বাংলাদেশের বিপক্ষে ১ টেস্টে কুলদীপের শিকার যেখানে ৮ উইকেট, অক্ষর সেখানে ২ টেস্ট খেলে নিয়েছেন ৮ উইকেট।
বাংলাদেশের কৌশলও একই হতে পারে। সাকিব আঙুলে চোট পেলেও কানপুর টেস্টে তাঁর অলরাউন্ডার হিসেবে খেলার সম্ভাবনা বেশি। তাঁর বাঁহাতি স্পিনের সঙ্গে অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজও খেলেছেন চেন্নাই টেস্টে। ভারতের প্রথম চার ব্যাটসম্যানের মধ্যে তিন ডানহাতি থাকায় তৃতীয় স্পিনার হিসেবে বাঁহাতি তাইজুল ইসলামকে খেলাতে পারে বাংলাদেশ। সে ক্ষেত্রে পেসার নাহিদ রানাকে হয়তো তাইজুলের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে হতে পারে। কারণ, গ্রিন পার্কে বল ওঠার ধারা যেহেতু বেশিক্ষণ থাকবে না, গতিও কমবে, আর নাহিদের শক্তিই যেখানে গতি ও বাউন্স, তাই রণকৌশলের হিসাবে তাঁকে পিছিয়ে থাকতে হচ্ছে। ২০২১ সালে এই মাঠে সর্বশেষ টেস্টে তিনজন করে স্পিনার খেলিয়েছিল ভারত ও নিউজিল্যান্ড। ম্যাচ পঞ্চম দিনে ড্র হয়েছিল।
গ্রিন পার্কে টেস্টে ইনিংসে সেরা দুই বোলিংও দুজন স্পিনারের। ১৯৫৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্টে ৬৯ রানে ৯ উইকেট নিয়েছিলেন ভারতের সাবেক অফ স্পিনার জশুভাই প্যাটেল। তার আগে এই মাঠে ইনিংসে সেরা বোলিংয়ের কীর্তি ছিল ভারতের সাবেক লেগ স্পিনার সুভাষ গুপ্তের। ১৯৫৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১০২ রানে ৯ উইকেট নিয়েছিলেন। আর এ মাঠে শীর্ষ পাঁচ উইকেটশিকারির মধ্যে চারজনই স্পিনার। এই মাঠে ২৩ টেস্টে ১৬৮ জন স্পিনার মিলিয়ে নিয়েছেন ৩৪৬ উইকেট। সমান টেস্টে ১৩৯ জন পেসারের শিকার ২৬০ উইকেট।