দ্যা নিউ ভিশন

নভেম্বর ২৫, ২০২৪ ০৩:২০

চেন্নাইয়ে শোয়েব আখতারকে মনে করাচ্ছেন নাহিদ রানা

বাংলাদেশ দলের পেসার নাহিদ রানা। শামসুল হক

এমএ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামের মিডিয়া সেন্টারের সামনে দুজন ভারতীয় ইউটিউবারকে দেখা গেল। ট্রাইপডে মোবাইল বসিয়ে দুজনই লাইভে দর্শকদের সঙ্গে কথা বলছেন। একজন হিন্দিতে, একজন তামিল ভাষায়। দুজনের মুখে কিছুক্ষণ পরপরই একটা নাম শোনা যাচ্ছিল—নাহিদ রানা। পাকিস্তানের এক নম্বর ব্যাটসম্যান বাবর আজমকে যেভাবে আউট করেছেন, তা নিয়ে একজনকে অনেকক্ষণ আলাপ করতে শোনা গেল। ছোট ছোট স্পেলের আগুনে বোলিংয়ে কীভাবে নাহিদ ম্যাচ ঘুরিয়ে দেন, সেই গল্প বলছিলেন অন্যজন।

চিপকের প্রেসবক্সে কয়েকজন ভারতীয় সাংবাদিকও ২১ বছর বয়সী চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছেলেটির উঠে আসার গল্প শুনতে চাইলেন। বছর চারেক আগে ক্রিকেট বল হাতে নেওয়া ছেলেটার এত অল্প সময়ে এত দূর পৌঁছে যাওয়ার কথা কিছুক্ষণ মনোযোগ দিয়ে শুনলেন।

একজন আবার এই প্রতিবেদকের কথা শুনতে শুনতেই নোট নিয়ে রাখলেন। যদি স্টোরিতে কাজে লাগে! তাঁদের নিজেদের মধ্যেও নাহিদকে নিয়ে কথা চলছিল, কখনো হিন্দি ভাষায়, কখনো তামিলে। এর মধ্যেই একজনকে হিন্দি আর ইংরেজিতে বলতে শুনলাম, ‘বাংলাদেশের ট্রাম্প কার্ড নাহিদ রানা।’ চারপাশ থেকে কিছুক্ষণ পরপরই কানে আসছিল একটাই নাম—নাহিদ রানা, নাহিদ রানা, নাহিদ রানা…।

আলোচনাটা যে শুধুই সাংবাদিকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ, তা নয়। ভারতীয় দলও হয়তো নাহিদকে নিয়ে আলাদা করে ভাবছে। ঋষভ পন্ত ও সরফরাজ খানের কথাই ধরুন। দুজনই যেহেতু মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান, তাঁদের বেশির ভাগ সময় স্পিনই সামলানোর কথা। কিন্তু গতকাল অনুশীলন দেখা গেল, স্পিনের সঙ্গে থ্রো-ডাউন স্পেশালিস্টের ছুঁড়ে দেওয়া বলও খেলছেন দুজন। সেই থ্রো-ডাউন স্পেশালিস্ট আবার ডক স্টিক দিয়ে বল ছুড়ছেন চেয়ারে দাঁড়িয়ে। ৬ ফুট ২ ইঞ্চির বেশি লম্বা নাহিদকে খেলার প্রস্তুতিই যে নিচ্ছিলেন পন্ত-সরফরাজরা, তা বুঝতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

মাত্র তিন টেস্ট খেলেই কোনো ফাস্ট বোলার এর আগে কবে এত আলোচিত হয়েছেন, তা একটা প্রশ্ন বটে। শোয়েব আখতারের ১৯৯৯ সালের ইডেন-কীর্তির কথা মনে পড়তে পারে কারও।

মাত্র তিন টেস্ট খেলেই কোনো ফাস্ট বোলার এর আগে কবে এত আলোচিত হয়েছেন, তা একটা প্রশ্ন বটে। শোয়েব আখতারের ১৯৯৯ সালের ইডেন-কীর্তির কথা মনে পড়তে পারে কারও। সেই টেস্ট, যেখানে পরপর দুটি ইয়র্কারে রাহুল দ্রাবিড় ও শচীন টেন্ডুলকারের স্টাম্প উড়িয়ে দিয়ে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিলেন শোয়েব।

কিন্তু শোয়েব ভারতে সেই প্রথম সফরের আগে ৯টি টেস্ট খেলে ফেলেছিলেন। ডারবানে দক্ষিণ আফ্রিকাকে উড়িয়ে দিয়েছেন, বুলাওয়েতে জিম্বাবুয়েতে। পাকিস্তান ভারতে আসার দিন থেকেই দলের নতুন ফাস্ট বোলার শোয়েব আখতারকে নিয়ে অনেক কথাবার্তা হয়েছিল। ২৫ বছর পর সেই ভারতেই নাহিদকে নিয়ে চর্চা হচ্ছে। এতটাই যে, ভারতীয়দের কাছে বাংলাদেশ দলের মুখ এখন নাহিদ রানা।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধি হয়ে যে-ই আসুন কেন, নাহিদকে নিয়ে প্রশ্ন হবেই।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধি হয়ে যে-ই আসুন কেন, নাহিদকে নিয়ে প্রশ্ন হবেই। আগের দিন চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সংবাদ সম্মেলনে হয়েছে। গতকাল বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেনের সংবাদ সম্মেলনেও এক ভারতীয় সাংবাদিক দ্বিতীয় প্রশ্নটাই করলেন নাহিদকে নিয়ে। নাজমুলও তরুণ এই গতি তারকাকে নিয়ে নিজের উচ্ছ্বাস লুকাননি, ‘সে খুবই রোমাঞ্চকর প্রতিভা। সে যেভাবে পাকিস্তানে বোলিং করেছে, সেটা দেখতে অসাধারণ ছিল।’

রানাকে কীভাবে ব্যবহার করবেন, তা নিয়েও ছিল ভারতীয়দের কৌতূহল। নাজমুল অবশ্য তাঁর কৌশল খোলাসা করলেন না, ‘সে আমাদের জন্য বিশেষ একজন খেলোয়াড়। তবে আমি তাকে নিয়ে খুব ভাবছি না। কীভাবে তাকে ব্যবহার করব, কখন করাব, কন্ডিশন বুঝে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেব।’ পরে একটু হেসে আলোচনাটা ছড়িয়ে দিলেন পুরো পেস বোলিং বিভাগে, ‘আমি শুধু একজনকে নিয়েই ভাবছি না। পাকিস্তানে সব পেসারই ভালো করেছে। আমি আশা করি, ওরা এখানেও ভালো কিছু করবে।’

চিপকে যখন নাহিদকে নিয়ে এত আলোচনা, তখন তিনি টিম হোটেলে বিশ্রাম নিয়ে দিন কাটাচ্ছিলেন। ঐচ্ছিক অনুশীলন হওয়ায় গতকাল বাংলাদেশ দলের পেসারদের কেউই মাঠে আসেননি। কথায় কথায় তাঁকে নিয়ে ভারতীয়দের হইচইয়ের খবরটাও পৌঁছানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু নাহিদ পাত্তাই দিলেন না। তিনি বরাবরই মতোই নির্লিপ্ত। আড়মোড়া দিতে দিতে ছোট্ট করে বললেন, ‘এসব নিয়ে ভাবছি না, ভাই।’

কিন্তু তাঁকে নিয়ে ঠিকই ভাবছে ভারত।

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ

ঝলমলে আইপিএল নিলামের অন্য রূপ: কালো তালিকা, রাতারাতি কোটিপতি আর ক্ষমতা প্রদর্শন

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ললিত মোদি। ভারতীয় ক্রিকেট