দ্যা নিউ ভিশন

মার্চ ১০, ২০২৫ ০৮:৩৫

নীল সমুদ্র উত্তাল করে ভারতের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়

চ্যাম্পিয়নস ট্রফির জয়ের পর ট্রফি নিয়ে ভারতের খেলোয়াড়দের উচ্ছ্বাস

কাইল জেমিসনের শর্ট বলটা কোমর উচ্চতায় উঠেছিল। রোহিত শর্মাকে এমন বল দিয়ে তিনি বেঁচে যেতে পারতেন কেবল রোহিত যদি ভাবতেন, ‘মাত্রই তো ইনিংস শুরু হলো…।’ কিন্তু রোহিত রোহিত বলেই তা ভাবেননি। ২৫১ রান তাড়া করার ম্যাচেও ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই পুল শটে স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা।

চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে সবকিছু ভারতের জন্যই সাজানো ছিল। নিউজিল্যান্ড যেন উপলক্ষ মাত্র। ফাইনালে আরেকটা দল লাগে বলেই তারা খেলল। তবু অদৃষ্ট হয়তো চাইল, নিউজিল্যান্ড যেহেতু খেলছেই, বিষয়টাকে আরেকটু বাস্তব রূপ দেওয়া যাক। টসটা তারাই জিতুক, বাকি সবই তো ভারতেরই। হ্যাঁ, শেষ পর্যন্ত সেটাই হয়েছে। দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের ‘নীল সমুদ্রে’ সব আতশবাজি আজ রাতে ফুটল ভারতের বিজয় উদ্‌যাপনে। ২০১৩ সালের পর দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়। সব মিলিয়ে তৃতীয়। গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর টানা দ্বিতীয় আইসিসি শিরোপা। তা-ও সেই নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে, আইসিসির কোনো আসরের ফাইনালে যাদের সঙ্গে আগে কখনো জেতেনি ভারত।

দুপুরে মিচেল স্যান্টনার টসে জিতে ব্যাটিং নিয়েছিলেন, ওদিকে হিসেব চলতে থাকল রোহিত শর্মা তো টানা ১২ ওয়ানডেতে টস হেরে ব্রায়ান লারাকে ধরে ফেললেন! যেন এতগুলো ম্যাচে টসে হারা বিশাল এক লজ্জা ভারত অধিনায়কের জন্য। খেলা ততক্ষণে শুরু হয়ে গেছে। সুন্দর শুরু নিউজিল্যান্ডের জন্য। দুই ওপেনার উইল ইয়াং-রাচিন রবীন্দ্র মিলে ৭.৫ ওভারেই করে ফেললেন ৫৭। কিন্তু টস থেকে এ পর্যন্তই। মাঝে একটু টুইস্টের মতো হলেও এরপর থেকেই গল্পটা বদলাতে থাকল। কিংবা কে জানে, গল্পটা হয়তো এভাবেই লেখা ছিল।

ওরকম শুরু এবং শেষে হাতে ৩ উইকেট রেখেও দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের উইকেটে ২৫১ রানই করতে পেরেছে ব্ল্যাক ক্যাপরা। ভারতের গভীর ব্যাটিং লাইন আপের জন্য যা পেরোনো মনে হচ্ছিল কেবলই সময়ের ব্যাপার। স্যান্টনারের করা ১৯তম ওভারের চতুর্থ বলে শর্ট এক্সট্রা কাভারে গ্লেন ফিলিপসের অসামান্য ক্যাচে ফিরে যান ওপেনার শুবমান গিল। তার আগেই রোহিতের সঙ্গে হয়ে গেছে ১০৫ রানের ওপেনিং জুটি। ম্যাচ ৪০ ওভার যাবে কি না, তাই নিয়ে তখন প্রেসবক্সে আলোচনা। কিন্তু খেলাটা তো ক্রিকেট, তার ওপর চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনাল। টুর্নামেন্টের শুরু থেকে ফাইনাল পর্যন্ত মাঠ-মাঠের বাইরে ভারতীয় আধিপত্য, ফাইনালের দিন দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামকে ভারতীয় দর্শকদের নীল সমুদ্র করে তোলা; সব চোখের সামনে দেখেও মস্তিষ্কের কোণে রেখে দিতে হয়েছে একটা তথ্য—ভারতের সঙ্গে ফাইনালে কখনো হারে না নিউজিল্যান্ড।

কাজেই ম্যাচে টুইস্ট এল। গিল আউট হওয়ার পরের ওভারে প্রথম বলে বিরাট কোহলিও নেই। গতি কমে আসে রোহিতের ব্যাটে। ১ রান করে কোহলি যখন আউট হন, রোহিতের রান ৬৩ বলে ৬৯। গ্যালারিতে নিয়ে ফেলা ছক্কা তখনই মেরে ফেলেছেন তিনটি, সঙ্গে সাত বাউন্ডারি। সেই রোহিতই এরপর আর কোনো চার-ছক্কা মারতে পারেননি। রাচিন রবীন্দ্রকে সামনে এগিয়ে এসে খেলে স্টাম্পড হলেন ৮৩ বলে ৭৬  রান করে। বিনা উইকেটে ১০৫ থেকে ভারত ৩ উইকেটে ১২২। দুবাইয়ের উইকেটে ২৫২ রানের লক্ষ্যও যে জটিল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে, সেই বাস্তবতাই তখন সামনে।

গিলের আগের দিনের কথাটা মনে পড়ল তখন। পরের দিকে শ্রেয়াস আইয়ার, অক্ষর প্যাটেল, কে এল রাহুল, হার্দিক পান্ডিয়ারা আছেন। ১৭ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলা চাপ হবে কেন তাদের জন্য, তাও আবার ২৫১ রানের ম্যাচে! চতুর্থ উইকেটে আইয়ার-প্যাটেলের ৬১ রানের জুটিতে আবারও ম্যাচে ফিরে ভারত। দুজনের কেউই শেষ পর্যন্ত থাকতে না পারলেও সময়ের দাবি মানা ব্যাটিংয়ে তাদের ৪৮ আর ২৯ রানের ইনিংস দুটিই বিপর্যয় কাটিয়ে জয়ের দিকে নিয়ে যায় দলকে।

ভালো শুরুর পরও ভারতের সামনে নিউজিল্যান্ডের বড় লক্ষ্য দিতে না পারার মূল কারণ, তাদের ব্যাটসম্যানরাও পারেননি নিজেদের ভালো শুরুগুলোকে বড় ইনিংসে অনুবাদ করতে। কুলদীপ যাদবের গুগলিতে রাচিন রবীন্দ্র বোল্ড ২৯ বলে ৩৭ করে, বরুণ গ্লেন ফিলিপসকে ফেরান ৫২ বলে ৩৪- রেখে। ব্যর্থ ইয়াং, কেইন উইলিয়ামসনও। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরি করে ইয়াং সেই যে রান করা ভুলেছেন, আজও ভুলেই থাকলেন। ২৩ বলে ১৫ করে এলবিডব্লু হয়েছেন বরুণের বলে। আইসিসি টুর্নামেন্টের আরেকটি ফাইনাল হতাশার নাম হয়ে থাকল ১৪ বল ১১ করা উইলিয়ামসনের জন্যও। অন্যপ্রান্তে ধরে খেলতে গিয়ে ৬৩ রান করতেই ১০১ বলে খেলে ফেলেন ড্যারিল মিচেল। শেষ দিকে মাইকেল ব্রেসওয়েলের ৪০ বলে ৫৩ রানের ইনিংসটাতেই শুধু মনে হলো নিউজিল্যান্ডও আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে পারে।

এ রকম ব্যাটিং করে একটা দলের পক্ষে ২৫১-এর চেয়ে বেশি করা কঠিন। আবার এ রকম উইকেটে বোলিং ভালো হলে ২৫১-ও চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো স্কোর। কিন্তু ভারতের ব্যাটিং লাইন আপটাই এমন গভীর যে তাদের বোলিং করতে গিয়ে ওয়ানডে ম্যাচেও বোলাররা অনেক সময় ক্লান্ত বোধ করেন। গিল আউট হলে রোহিত, রোহিত আউট দলে আইয়ার, আইয়ার আউট হলে রাহুল, রাহুল আউট হলে…।

না, রাহুল আর আউট হননি। পান্ডিয়া ও রবীন্দ্র জাদেজাকে নিয়ে এক ওভার বাকি থাকতে ম্যাচ শেষ করেছেন ভারতকে চ্যাম্পিয়ন করেই। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির চ্যাম্পিয়ন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

নিউজিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৫১/৭ (মিচেল ৬৩, ব্রেসওয়েল ৫৩*, রবীন্দ্র ৩৭, ফিলিপস ৩৪; কুলদীপ ২/৪০, চক্রবর্তী ২/৪৫)।
ভারত: ৪৯ ওভারে ২৫৪/৬ (রোহিত ৭৬, আইয়ার ৪৮, রাহুল ৩৪*, গিল ৩১, অক্ষর ২৯; ব্রেসওয়েল ২/২৮, স্যান্টনার ২/৪৬)।
ফল: ভারত ৪ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: রোহিত শর্মা।
ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট: রাচিন রবীন্দ্র।

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ

খালেদা জিয়া হেঁটে জেলে গেছেন, স্বৈরাচার নির্যাতন করে হুইলচেয়ারে বসিয়ে দিয়েছে: ইকবাল হাসান মাহমুদ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ (টুকু) বলেছেন, ফ্যাসিস্ট