টনি হেমিং যে ধারণা দিলেন, তাতে আজ রানবন্যায় ভাসতে পারে বাংলাদেশ–নিউজিল্যান্ড ম্যাচ। এখন রানবন্যায় নিউজিল্যান্ড বাংলাদেশকে ভাসাবে, নাকি বাংলাদেশ ভাসাবে নিউজিল্যান্ডকে, সেটাই দেখার বিষয়।
বিসিবির চাকরি ছেড়ে সাত–আট মাস হলো হেমিং পিসিবির প্রধান কিউরেটর। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির উইকেট তাঁর রেসিপিতেই করা। সেই হেমিং যখন বলেন, রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়ামের উইকেট হতে পারে ব্যাটিং–স্বর্গ, তাতে বিশ্বাস না রেখে উপায় কি! গত ডিসেম্বরে টানা ঘরোয়া ক্রিকেটের খেলা হওয়ায় কিছুদিন আগপর্যন্তও পিন্ডির উইকেটে ঘাসের দেখা ছিল না, যা এখন অনেকটাই সবুজ।
আমিরাত ও পাকিস্তান মিলিয়ে হওয়া এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে কাল পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচের তিনটিই তিন শর বেশি রান দেখে ফেলেছে। লাহোরে তো ইংল্যান্ডের ৩৫১ রান তাড়া করেও জিতে গেছে অস্ট্রেলিয়া! হেমিংয়ের দেওয়া পূর্বাভাসের পর মনে হচ্ছে, রাওয়ালপিন্ডির উইকেটেও নিরাপদ হবে না সে রকম রান। বাংলাদেশ দলের কোচ ফিল সিমন্সেরও সেটাই ধারণা। কাল সংবাদ সম্মেলনে কোচ বলেছেন, ‘এটা বড় রানের মাঠ এবং সেটা আমরা কাল লাহোরেও দেখেছি। কাজেই বড় রান করাই লক্ষ্য আমাদের। রান করতে হবে তিন শর বেশি।’
কাল দুপুরে নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনারও একই কথা বলেছেন। বড় রানে চোখ তাঁদেরও। কিন্তু নিউজিল্যান্ড যদি আগে ব্যাট করে ৩০০–৩৫০ করে ফেলে, সেটা তাড়া করে জেতার সামর্থ্য কি আছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের! বিশেষ করে দুবাইয়ে টপ অর্ডারকে অমন ভেঙে পড়তে দেখে সে আশা করাটাই অসম্ভব মনে হচ্ছে। তবে সিমন্স যেহেতু কোচ, তিনি আশা ছাড়বেন কেন, ‘গত পাঁচটি ওয়ানডেতে আমরা কয়েকবারই তিন শর বেশি রান করেছি। কাজেই আমাদের তা করার সামর্থ্য আছে। সর্বশেষ ম্যাচে আমরা ভালো শুরু করিনি। যদি শুরুটা ভালো করি, আমরা তিন শর বেশি রান করতে পারব।’
কয়েকবার অবশ্য নয়, দুবাইয়ে হওয়া ভারত ম্যাচটা বাদ দিলেও আগের পাঁচ ওয়ানডেতে মাত্র একবারই তিন শর বেশি রান করেছিল বাংলাদেশ। গত বছরের ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের সেই ম্যাচে ৩২১ রান করেও অবশ্য ৪ উইকেটে হারতে হয়েছিল ২৫ বল বাকি থাকতেই।
অর্থাৎ তিন শ রান যদি এনেও দেন ব্যাটসম্যানরা, সেটাকে নিরাপদ রাখতে বোলারদের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। সিমন্স এরও সুন্দর একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন, যেটা আসলে সবারই জানা, ‘সেসব ম্যাচে প্রতিপক্ষ আমাদের চেয়ে ভালো ব্যাটিং করেছিল। আমরা ৩০০ করেছি, তারা তার চেয়ে বেশি করেছে। আমরা তাদের আটকে রাখার মতো ভালো বল করিনি। খেলাটা আসলে এ রকমই।’
সিমন্স জানিয়েছেন, আজ নিউজিল্যান্ডকে চমকে দেওয়ার জন্য ভিন্ন রকম অনেক কিছুই নাকি ভাবছে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট। বলা যায়, কিছুটা বাধ্যও হচ্ছে ভাবতে। কারণ, পরশুর মতো কাল সন্ধ্যায়ও নেটে ব্যাটিং করা মাহমুদউল্লাহ আজ খেলবেন কি না, সেটি কাল অনুশীলনে নামার আগেও নিশ্চিত করে বলতে পারেননি কোচ। রাতে মাহমুদউল্লাহর ফিটনেস টেস্ট হওয়ার কথা। এরপরই বোঝা যাবে তাঁর চোটের প্রকৃত অবস্থা।
আজকের ম্যাচের পরিকল্পনা, একাদশ—এসবের অনেকখানিই ঝুলে ছিল মাহমুদউল্লাহর খেলা না–খেলার ওপর। সিমন্স বলেছেন, ‘আমরা ভিন্ন রকম অনেক কিছুই ভাবছি। প্রথমত, দেখতে হবে মাহমুদউল্লাহ ফিট কি না। এরপরই আমরা ঠিক করব, কীভাবে দলে ভারসাম্য আনা যায়। আজ (গতকাল) রাতে তার ফিটনেস টেস্ট হবে। কাজেই আজকের অনুশীলন শেষ হলে আরও কিছু বিষয় পরিষ্কার হবে। উইকেটসহ অন্যান্য বিষয়ও দেখতে হবে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে অনুশীলনের পর।’
সেই অনুশীলনে কাল তাসকিন আহমেদকে মৃদু হাত ঘোরাতেই দেখা গেছে কেবল, সেভাবে বোলিং করেননি। তাসকিন বোলিং করেননি আগের দিন ইসলামাবাদ ক্লাবের অনুশীলনেও। ওদিকে নেটে সিরিয়াল ধরে ব্যাটিং করেছেন মাহমুদউল্লাহসহ ওপরের দিকের নিয়মিত ছয় ব্যাটসম্যানই।
বাংলাদেশ–নিউজিল্যান্ড সর্বশেষ ওয়ানডেতে জয় ছিল বাংলাদেশের। সেটাও নেপিয়ারে নিউজিল্যান্ডকে মাত্র ৯৮ রানে অলআউট করে দিয়ে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের সেই ম্যাচের ফলের প্রভাব অবশ্য এত দিন কারও মানসিকতায় থাকার কথা নয়। তবে রাওয়ালপিন্ডির মাঠে বাংলাদেশের অতি সাম্প্রতিক স্মৃতিটা তাজাই থাকার কথা। গত বছরের আগস্টে এখানেই স্বাগতিক পাকিস্তানকে ২–০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজে হারিয়েছে বাংলাদেশ। সিমন্সেরও বিশ্বাস, পাকিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানকে হারানোর সে অভিজ্ঞতা আজ বাংলাদেশকে বাড়তি আত্মবিশ্বাস জোগাবে।
তবে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা নিউজিল্যান্ড কঠিন প্রতিপক্ষ। তাদের বিপক্ষে নিজেদের সেরা খেলা না খেললে জয়টা কঠিন। সিমন্স অবশ্য বিষয়টাকে আরও ছড়িয়ে দিয়ে দেখার পক্ষে। তাঁর দৃষ্টিতে বিশ্ব ক্রিকেটের শীর্ষ আট দলের এ টুর্নামেন্টের সব ম্যাচই কঠিন ও চাপের। তারপরও নতুন দিনে নতুন কিছুর আশা করতে হবে, এটাই কোচের দর্শন, ‘এ রকম টুর্নামেন্টে প্রতিটা ম্যাচকেই কঠিন ধরে নিতে হবে। নিউজিল্যান্ড ভালোও খেলছে। তবে আগামীকাল আরেকটা নতুন দিন। আমরা এটা নিশ্চিত করতে চেষ্টা করছি, তারা যেন তাদের মতো ভালো ক্রিকেট না খেলতে পারে।’