৩৫ রানে নেই ৫ উইকেট। ভারতের বিপক্ষে এমন পরিস্থিতিতে কত দূরই বা আর যেতে পারবে বাংলাদেশ! অনেকে হয়তো বিরক্ত হয়ে টেলিভিশন বন্ধ করে উঠেও পড়েছিলেন। কিন্তু দুই তরুণ তাওহিদ হৃদয় এবং জাকের আলী ভেবেছেন অন্য ভাবে।
কঠিন পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়িয়ে গড়লেন ২০৬ বলে ১৫৪ রানের জুটি। যে জুটি বাংলাদেশকে গড়ে দেয় ২২৮ রানের ভিত। ইনিংসের শেষ ওভারে আউট হওয়ার আগে হৃদয় খেলেন ১১৮ বলে ১০০ রানের ইনিংস। আর জাকের খেলেছেন ১১৪ বলে ৬৮ রানের ইনিংস। দুজনের জুটিটি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ষষ্ঠ উইকেটে এবং ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের যে কোনো উইকেটে সর্বোচ্চ।
হৃদয়-জাকের জুটির অবদানে বাংলাদেশ জিততে না পারলেও ম্যাচ শেষে প্রশংসিত হয়েছেন দুজন। বিশেষ করে শেষ দিকে ক্র্যাম্প (মাংসপেশির টান) নিয়েও হৃদয়ের ব্যাটিং অনেককে আকৃষ্ট করেছেন। যার মধ্যে আছেন পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার রমিজ রাজাও। গতকাল রাতে ম্যাচ শেষে নিজের ইউটিউব চ্যানেল ‘রমিজ স্পিকস’-এ পাকিস্তানের সাবেক এ ওপেনার বলেছেন, হৃদয় বাংলাদেশের জন্য অমূল্য এক সম্পদ।
বাংলাদেশকে বিপর্যয় থেকে উদ্ধার করা হৃদয়কে নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় উল্লেখ করে রমিজ বলেছেন, ‘বাংলাদেশ যে অবস্থায় ছিল, মনে হচ্ছিল এক শ রানও হয়তো করতে পারবে না। কিন্তু সেখান থেকে ইনিংসকে টেনে নেওয়াটা (দারুণ ছিল)। জাকেরের পারফরম্যান্সও অসাধারণ ছিল। দারুণ একটি জুটি গড়েছে তাঁরা। তবে ভারতের মতো শক্তিশালী বোলিং লাইনআপের বিরুদ্ধে এমন পরিস্থিতিতে দলকে উদ্ধার করা এবং তারপর সেঞ্চুরি করা অনেক দুর্দান্ত ব্যাপার। হৃদয় অনেক নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়। সে যদি নিজেকে সময় দেয় তবে ধারাবাহিকভাবে এমন বড় ইনিংস খেলতে পারবে। হৃদয়ের মাঝে দারুণ সম্ভাবনা আছে।’
কেন হৃদয়ের মাঝে বড় কিছু সম্ভাবনা দেখছেন রমিজ সেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন এভাবে—‘হৃদয় বড় শট খেলতে পারে, আগ্রাসী মনোভাব আছে এবং রানিং বিটুইন দ্য উইকেটও ভালো। পাশাপাশি প্রাণশক্তিও প্রচুর। মিডলঅর্ডারে বাংলাদেশ অমূল্য এক সম্পদ পেয়েছে। কারণ, যেদিন সে খেলে এমন দুর্দান্ত খেলতে পারে। আজ সেই সম্ভাবনা দেখা গেছে। এই ইনিংসের পর সে আরও অনেক দূর যাবে। এত বড় একটি দলের বিপক্ষে যে পরিস্থিতিতে সেঞ্চুরি করেছে সেটা অনেক বড় ব্যাপার। ফলে নির্ভরযোগ্যতা, সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো এবং মানের দিক থেকে সবগুলো কাজই সে ঠিকঠাকভাবে সম্পন্ন করেছে।’
হৃদয় ও জাকেরের জুটি থেকে রমিজ পাকিস্তান দলকে শিক্ষা নিতে বলেছেন। পাশাপাশি পাকিস্তানের পরের দুইটি ম্যাচ যে ভারত ও বাংলাদেশের বিপক্ষে সেটিও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি, ‘জাকের এবং তাওহিদের (হৃদয়) জুটি থেকে পাকিস্তান চাইলে অনেক কিছু শিখতে পারে। ৩৫ রানে পাঁচ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর পরিস্থিতির সঙ্গে তারা যেভাবে মানিয়ে নিয়েছে এবং ইনিংসকে টেনে নিয়েছে সেটা অনেক বড় দৃষ্টান্ত। পাকিস্তানের কথা আমি এ জন্য বলছি পাকিস্তান এরপর বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলবে। ভারতের সঙ্গেও ম্যাচ আছে। ফলে নিজেদের ভুল থেকে শেখাটা খুবই জরুরি। এখান থেকে এই দৃষ্টান্তটা পাওয়া যে, কখনো হার মানা যাবে না। যে কোনো পরিস্থিতি থেকে আপনি চাইলে বেরিয়ে আসতে পারেন, যদি আপনার মধ্যে সাহস, তাড়না, পরিকল্পনা এবং উপায় জানা থাকে। এই জুটিতে আমরা এগুলো সবই দেখেছি।’
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে হারা বাংলাদেশ ২৪ ফেব্রুয়ারি পরের ম্যাচ খেলবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে পরের ম্যাচ খেলবে ২৭ ফেব্রুয়ারি। আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৬০ রানে হেরে টুর্নামেন্ট শুরু করা পাকিস্তান রোববার খেলবে ভারতের বিপক্ষে।