দ্যা নিউ ভিশন

ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৫ ০৯:৪৯

দুবাইয়ে হয়নি, পাকিস্তানে টপ অর্ডার রানে ফিরবে আশা জাকেরের

ভারতের বিপক্ষে বিপর্যয় ঠেকিয়ে ফিফটি তুলে নেন জাকের

বাংলাদেশের ২২৮ রান তাড়া করতে নেমে ভারত জিতেছে ৬ উইকেট ও ২১ বল হাতে রেখে। এ তথ্যটুকু একটি বিষয় তুলে ধরে—বাংলাদেশের পুঁজি একটু কম হয়েছে। আরও ৩০–৩৫ রান হলে ভারত অন্তত এত সহজে ম্যাচটি জিততে পারত না। কিংবা কে জানে, ফল অন্য রকমও হতে পারত! কিন্তু ম্যাচ শেষে তো আর ‘যদি–কিন্তু’ নিয়ে আলোচনায় ফল নেই। এখন প্রস্তুতি নিতে হবে পরের ম্যাচের। সে ম্যাচ শেষে যেন এমন সব আক্ষেপ জেগে না ওঠে, নিশ্চিত করতে হবে সেটাও।

দুবাইয়ে কাল ভারত–বাংলাদেশ ম্যাচটি দেখে থাকলে নিশ্চয়ই এটাও জানা, নাজমুল হোসেনের দল এমন পরিস্থিতিতে পড়েছিল যে, দুই শ পার করা সংগ্রহটাই অনেকের কাছে স্বস্তির। ৮.৩ ওভারে ৩৫ রানে পড়েছিল ৫ উইকেট। ওপরের ছয় ব্যাটসম্যানের মধ্যে পাঁচজনই ড্রেসিংরুমে ফিরেছেন, যেখানে ০ রানে আউট হয়েছেন তিনজন। এমন বিষম চাপের মধ্যে ষষ্ট উইকেটে ২০৬ বলে রেকর্ড ১৫৪ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশের সংগ্রহকে ভদ্রস্থ জায়গায় নিয়ে যান জাকের ও তাওহিদ হৃদয়। ৪২.৪ ওভারে দলীয় ১৮৯ রানে জাকেরের আউটে ভেঙেছে এই জুটি। হৃদয় পরে সেঞ্চুরি পেলেও জাকের ১১৪ বলে ৬৮ রানে আউট হন।

সন্দেহ নেই, স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের ইনিংসকে এগিয়ে নেওয়ার বীরত্ব দেখিয়েছেন হৃদয় ও জাকের। হৃদয় মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান, নেমেছিলেন পাঁচে। প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলা কিংবা চাপ থেকে দলকে টেনে বের করাটাই তাঁর দায়িত্ব। জাকেরের ভূমিকা কিছুটা আলাদা। সাতে নেমে ‘ফিনিশ’ করাটা তাঁর মূল দায়িত্ব, যার মধ্যে দ্রুত রান তোলাটা গুরুত্বপূর্ণ। কিংবা তাড়া করতে নেমে ম্যাচ পরিস্থিতি বুঝে ব্যাট করে দলকে জয়ের বন্দরে নোঙর করানোর চেষ্টা করাটাই তাঁর কাজ।

তবে কাল যে অবস্থায় ক্রিজে নামতে হয়েছে—জাকের নিশ্চয়ই পরের ম্যাচগুলোয় অমন পরিস্থিতি দেখতে চাইবেন না। কারণটা পরিস্কার। টপ অর্ডার ভালো শুরু এনে দিতে পারলে বাংলাদেশের রান আড়াই শ পেরোনো সহজ হতে পারত। তখন রান তাড়ায় ভারতের কাজটাও আরও কঠিন হতো।

অর্থাৎ, দলের টপ অর্ডারকে বড় ভূমিকা রাখতেই হয়। জাকের চান, দুবাইয়ে ভারতের বিপক্ষে না হলেও পরের ম্যাচগুলোয় শুরুর দিকের ব্যাটসম্যানেরা আরও দায়িত্বশীন হোন। সোমবার রাওয়ালপিন্ডিতে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। একই ভেন্যুতে আগামী বৃহস্পতিবার নিজেদের শেষ ম্যাচে প্রতিপক্ষ স্বাগতিক পাকিস্তান। জাকের মনে করেন, পাকিস্তানের উইকেটে এ দুই ম্যাচে ভালো করবে বাংলাদেশের টপ অর্ডার।

বার্তা সংস্থা এএনআইয়ের খবরে বলা হয়, ভারত ম্যাচের পর জাকের ওপেনারদের প্রতি প্রত্যাশার কথা জানিয়ে বলেন, ‘(রাওয়ালপিন্ডির) পিচ নিয়ে আমরা আশাবাদী। আশা করি আমাদের টপ অর্ডার ওখানে রান করবে। ওপেনাররা রান পেলে কাজটা সহজ হয়ে যায়। উইকেট ভালো আছে, যেটা আমরা সর্বশেষ পাকিস্তান–নিউজিল্যান্ড ম্যাচে দেখেছি। ভালো উইকেট পেলে আমরা দল নিয়ে আশাবাদী।’

ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে দুবাইয়ের উইকেট নিয়েও কথা বলেন জাকের, ‘উইকেট একটু কঠিন ছিল, ব্যাট করা সহজ ছিল না। ইনিংসজুড়েই বল বাঁক নিয়েছে। উইকেটের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়ে আমরা খেলার চেষ্টা করেছি।’

ওয়ানডেতে ষষ্ট উইকেটে কাল রেকর্ড–রানের জুটি গড়েন জাকের ও হৃদয়। আগের রেকর্ডের সঙ্গেও জড়িয়ে আছে জাকেরের নাম। গত ডিসেম্বরে সেন্ট কিটসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ষষ্ট উইকেটে ১৫০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েছিলেন জাকের ও মাহমুদউল্লাহ। সে ম্যাচে ৩০.৩ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ৫ উইকেটে ১৭১ থেকে শেষ পর্যন্ত ৩২১–এ নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। ৫৭ বলে ৬২ রানে শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন জাকের।

একদম ভিন্ন দুটো পরিস্থিতিতে দুটো ভিন্ন মেজাজের ইনিংস উপহার দেওয়ায় জাকেরের টেম্পারামেন্টের গভীরতাও বোঝা যায়। ভালো ভিত পাওয়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ইনিংসটি সাজাতে পেরেছিলেন ১০০–এর ওপরে স্ট্রাইক রেটে। কিন্তু কাল ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে সবকিছু নতুন করে নির্মাণের চ্যালেঞ্জ নেওয়ায় জাকেরের স্ট্রাইক রেট ৫৯.৬৪।

আরও কিছু রান করতে না পারার আক্ষেপ ঝরেছে জাকেরের কণ্ঠে, দ্রুত ৫ উইকেট হারানোয় শুরুটা কঠিন হয়ে উঠেছিল। তাওহিদ ও আমি ভালো স্কোর করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ভালোভাবে ফিনিশ করতে পারিনি। আরও বড় সংগ্রহ পেলে ম্যাচটি আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়ে উঠত। আমি দ্রুত রান তুলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আউট হয়ে যাই। (ওই সময়) দ্রুত রান তোলার কথা মাথায় ছিল।’

প্রায় সাড়ে তিন মাসের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এ পর্যন্ত ৬ ইনিংসে ব্যাট করতে নেমেছেন জাকের। স্কোরগুলো দেখুন—৩৭*, ১, ৪৮, ৩, ৬২* ও ৬৮। স্ট্রাইক রেট ৮৭.৯৫। গড় ৫৪.৭৫।

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ