৫০ ওভার দৈর্ঘ্যের একটি ইনিংস। কিন্তু খুব সহজেই তিন অধ্যায়ে ভাগ করা যায়। প্রথম অধ্যায়ে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং বিপর্যয়। দ্বিতীয় অধ্যায়ে তাওহিদ হৃদয়-জাকের আলীর প্রতিরোধ, সঙ্গে রেকর্ড জুটি। আর তৃতীয় অধ্যায়ে শুধুই হৃদয়। খোঁড়াতে খোঁড়াতে অনবদ্য এক সেঞ্চুরি।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে ঠিক এমনই ঘটনাবহুল ইনিংস খেলেছে বাংলাদেশ। টসে জিতে আগে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ ৪৯.৪ ওভার ব্যাট করে তুলেছে ২২৮ রান। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে হৃদয় করেছেন ঠিক ১০০ রান।
দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের ম্যাচটিতে হৃদয় যতটুকু রান করেছেন, শুরুর দিকে পুরো দলই এত রান করতে পারবে কি না, সংশয় ছিল। প্রথম ২ ওভারের মধ্যে ২ রানে ২ উইকেট হারানো বাংলাদেশ ৩৫ রানে হারায় পঞ্চম উইকেট। নবম ওভারের চতুর্থ বলে উইকেটসংখ্যা ৬-ও হতে পারত, যদি জাকেরের ক্যাচটা নিতে পারতেন রোহিত শর্মা।
শেষ পর্যন্ত জাকেরের ওই বেঁচে যাওয়াই বাংলাদেশকে বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার পথ করে দেয়। ষষ্ঠ উইকেটে হৃদয়-জাকের মিলে গড়েন ১৫৪ রানের জুটি। যা শুধু বাংলাদেশ দলেরই ষষ্ঠ উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি নয়, ভারতের বিপক্ষে যেকোনো দলের এবং চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ইতিহাসেই এই উইকেটে সর্বোচ্চ।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ষষ্ঠ বা এর নিচের উইকেটে এত দিন সর্বোচ্চ ছিল ২০০৬ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার জাস্টিন কেম্প ও মার্ক বাউচারের ১৩১। আর বাংলাদেশের পক্ষে এই উইকেটে সর্বোচ্চ ছিল গত ডিসেম্বরে সেন্ট কিটসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জাকের–মাহমুদউল্লাহর ১৫০*।
আজ জাকের–হৃদয়ের দেড় শ ছাড়ানো জুটিটি এসেছে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশের চেনা এক বিপর্যয়ের পরিপ্রেক্ষিতে। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ৯ আসরের ইতিহাসে প্রথম ১০ ওভারের মধ্যে ৫ বা এর বেশি উইকেট পতনের ঘটনা ঘটেছে চারবার। এর মধ্যে বাংলাদেশই তিনবার (২০০২ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৪/৬ ও ২০০৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২৬/৫)।
হৃদয়, জাকের দুজনই ফিফটি তুলে নেওয়ার আগপর্যন্ত খেলেছেন রয়েসয়ে। শেষ দিকে ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে হাত খুলতে গিয়েই জাকের ফেরেন ৬৮ রান করে। তবে হৃদয় ছিলেন শেষ ওভার পর্যন্ত।
তামিম ইকবালের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি অভিষেকে সেঞ্চুরির কীর্তি তাওহিদ হৃদয়ের।
সপ্তম ওভারে ব্যাটিংয়ে নামা হৃদয় ৪০ ওভারের পর আর ঠিকমতো দৌড়াতে পারছিলেন না। ৪৫তম ওভার থেকে আক্ষরিক অর্থেই রানের জন্য হাঁটতে বাধ্য হতে হয় তাঁকে। বেশ লম্বা সময় নিয়ে মাঠে চিকিৎসাও নেন।
৪৯তম ওভারে মোহাম্মদ শামির প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন হৃদয়। ৩৪ ওয়ানডের ক্যারিয়ারে এটি তাঁর প্রথম সেঞ্চুরি। এর আগে গত বছরের মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ৯৬ রানই তাঁর সর্বোচ্চ। সেই ইনিংসের পর চারটি ওয়ানডে খেলে কোনোটিতেই ২২ রানের বেশি করতে পারেননি এই ডানহাতি। ডিসেম্বরে চোটের কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের দলেও ছিলেন না।
আজ মাঠে ফিরেই করলেন সেঞ্চুরি, যা দুটি রেকর্ডেও তাঁর নাম নাম যুক্ত করেছে। ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১২৮ রান করেছিলেন তামিম ইকবাল, সেটি ছিল চ্যাম্পিয়নস ট্রফি অভিষেকে সেঞ্চুরি করা প্রথম কোনো বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানের রেকর্ড।
হৃদয় এখন চ্যাম্পিয়নস ট্রফি অভিষেকে সেঞ্চুরি করা দ্বিতীয় বাংলাদেশি, সব মিলিয়ে নবম। এ ছাড়া ভারতের মোহাম্মদ কাইফের (২০০২ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১১১*) পর ওপেনারদের বাইরে অভিষেকে সেঞ্চুরিতেও দ্বিতীয়।