দ্যা নিউ ভিশন

ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৫ ০৩:০১

নাহিদ–পারভেজ: তাঁরা দুজন এবারই প্রথম

নাহিদ রানা ও পারভেজ হোসেন—আগে কখনো আইসিসি টুর্নামেন্ট খেলেননি।

জীবন বদলে যাওয়ার জন্য একটা মুহূর্তই যথেষ্ট। আট বছর ওই হিসাবে তাই লম্বা সময়। কিন্তু নাহিদ রানার জীবন কতটা বদলে গেছে, তা চিন্তা করে চমকে যান তিনি নিজেও। বছর আটেক আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জে টেলিভিশনের সামনে বসে তিনি বিমোহিত হয়ে দেখেছেন, সাকিব আল হাসান–মাহমুদউল্লাহ কী করে বাংলাদেশকে তুলে দিচ্ছেন চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে।

এরপর উল্লাসে, আনন্দে আত্মহারা হয়েছিলেন দর্শক হিসেবে; বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলা তখনো তাঁর জন্য ছিল শুধুই ‘শখ’। কখনো কি ভেবেছিলেন, আট বছর পর ওই ‘শখ’ তাঁকে তুলে দেবে পরের আসরের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিগামী বিমানে? প্রশ্নটা শুনে মুখে সদ্য কৈশোর পেরোনো সরল হাসিটা হাসেন তিনি। এরপর বলেন, ‘প্রশ্নই আসে না ভাই…’

ভাবনার অতীত অনেক কিছুই এখন ঘটছে নাহিদের জীবনে। খাদ্যাভ্যাস বদলে ফেলছেন, মানতে হচ্ছে অনেক নিয়মকানুনও। সঙ্গে পুরো বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা তার কাঁধে তো আছেই। এখন যে নাহিদ আর ‘দর্শক’ নন, জাতীয় দলের ক্রিকেটার।

অনূর্ধ্ব–১৯ আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কখনোই এক নয়। ওইটা শুরুর দিকে ছিল, এটা অনেক বড় একটা মঞ্চ। এখানে চ্যালেঞ্জটা বেশি হবে অনেক।

পারভেজ হোসেন

শুধু ‘ক্রিকেটার’ হিসেবে আটকে থাকলেও হতো। কিন্তু গতিময় সম্ভাবনার যে শুরু তিনি করেছেন, তাতে তাঁর কাছে সবার প্রত্যাশাও অনেক বেড়ে গেছে। এবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফির বাংলাদেশ দলে আরেকটা ক্ষেত্রেও নাহিদের সঙ্গী শুধু একজন। প্রথমবার আইসিসি ইভেন্টে খেলতে যাচ্ছেন, নাহিদ রানা ছাড়া এমন ক্রিকেটার শুধু পারভেজ হোসেন। এটাও একটা বাড়তি রোমাঞ্চ নাহিদের জন্য, ‘সব সময় টিভিতেই দেখে এসেছি এমন টুর্নামেন্ট। এখন খেলতে যাব, ভালো লাগা তো কাজ করছেই। চেষ্টা করব দলের জন্য নিজের সর্বোচ্চটা দেওয়ার।’

নাহিদের জন্য আইসিসি টুর্নামেন্টের অভিজ্ঞতা একেবারেই নতুন হলেও পারভেজ হোসেনের ক্ষেত্রে একটা টীকা লাগছে। অনূর্ধ্ব–১৯ বিশ্বকাপের ওই স্মৃতি এখন অবশ্য বেশ দূরের ইমন ডাকনামের পারভেজের জন্য, ‘অনেক দিন হয়ে গেল, প্রায় পাঁচ বছর!’ সময়ের হিসাবটা যতই হোক, পারভেজ অথবা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্যই ২০২০ সালের ওই যুব বিশ্বকাপ ভুলে যাওয়া কঠিন। তাঁরা সবাই মিলে যে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার বিরাট একটা কীর্তিই গড়ে ফেলেছিলেন!

ওই দলের স্কোয়াডে যে, যখন, যেদিকেই যান, তাঁদের সঙ্গে কথা বললে তাই অবধারিতভাবেই চলে আসে প্রসঙ্গটি। জাতীয় দলের হয়ে প্রথমবার আইসিসি টুর্নামেন্টে যাওয়ার আগে পারভেজই মনে করিয়ে দিলেন বাস্তবতা, ‘অনূর্ধ্ব–১৯ আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কখনোই এক নয়। ওইটা শুরুর দিকে ছিল, এটা অনেক বড় একটা মঞ্চ। এখানে চ্যালেঞ্জটা বেশি হবে অনেক।’

নার্ভাস লাগছে না। চেষ্টা করব পুরো বিষয় উপভোগ করার। যেহেতু আমি প্রথমবার আইসিসি ইভেন্টে সুযোগ পেয়েছি, চেষ্টা করব দলকে সর্বোচ্চটা দেওয়ার।

নাহিদ রানা

ওই চ্যালেঞ্জ উতরে যাওয়ার চাপ পারভেজের জন্য একটু বেশিই। এখনো যে ওয়ানডে অভিষেকই হয়নি তাঁর। লিস্ট ‘এ’ রেকর্ডটা অবশ্য পারভেজের মন্দ নয়—৫৪ ম্যাচ খেলে ৩৫–এর বেশি গড়ে ৪ সেঞ্চুরিসহ ১৮৫২ রান।

একাদশে সুযোগ পেতে ওপেনিংয়ে জায়গার জন্য সৌম্য ও তানজিদের সঙ্গে তাঁকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। তা বুঝতে পারেন পারভেজও, সঙ্গে জানান একটা প্রত্যয়, ‘ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলে নিজের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করব, কীভাবে পারফরম্যান্স করলে দলের জন্য ভালো হবে।’

ম্যাচ খেলা নিয়ে তেমন শঙ্কা নেই নাহিদের। তার কাঁধে বরং দলের বড় একটা ভারই আছে। গত এক বছরে বদলে যাওয়া জীবনে প্রাপ্তি হিসেবে যোগ হয়েছে পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদের মাটিতে টেস্ট হারানোর কীর্তিতে রাখা অবদান। সাদা পোশাকে ওই পারফরম্যান্স গত বছরের নভেম্বরে তাঁকে নিয়ে আসে ওয়ানডেতেও।

চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে যাওয়ার আগে তিনটি ওয়ানডেতে তাঁর উইকেট ৪টি। কিন্তু তাতে কী! তাঁর জন্য বহুজন যে ইতিমধ্যেই বলে ফেলেছেন পুরোনো কথাটা, ‘গতি তো আর বাজারে কিনতে পাওয়া যায় না!’ তা বটে। কিন্তু ওসব নিয়ে ভাবতে গেলে বরং বিপদ। সবে তো তাঁর প্রথম আইসিসি ইভেন্ট, অনুভূতি কেমন? নাহিদ উত্তরে বলেন, ‘নার্ভাস লাগছে না। চেষ্টা করব পুরো বিষয় উপভোগ করার। যেহেতু আমি প্রথমবার আইসিসি ইভেন্টে সুযোগ পেয়েছি, চেষ্টা করব দলকে সর্বোচ্চটা দেওয়ার।’

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি দিয়ে আইসিসি ইভেন্টে অভিষেক হতে যাওয়া দুই ক্রিকেটারের অবস্থান দুই মেরুতে—একজন ওপেনার, আরেকজন ফাস্ট বোলার। টুর্নামেন্টে যাওয়ার আগে পারভেজের সময় কাটছে প্রতিপক্ষ বোলারদের বোলিংয়ের ভিডিও বিশ্লেষণে। নাহিদের কি আলাদা করে কোনো ব্যাটসম্যানের উইকেট নেওয়ার ইচ্ছা আছে? ‘নির্দিষ্ট করে কারও উইকেট নেব, এমন ইচ্ছা নেই। দলের জন্য যখন যে উইকেট পাব, ওটাই উপভোগ্য হবে আমার জন্য।’

আগেরবার সেমিফাইনাল খেলা বাংলাদেশের জন্য এবার ‘চ্যাম্পিয়ন’ হওয়ার লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন। দেশ ছাড়ার আগে বলে গেছেন, তাঁর দলের সবাই কথাটা বিশ্বাসও করেন। পারভেজের প্রত্যাশা কেমন? ‘দল ভালো করবে, এটা অবশ্যই প্রত্যাশা করি। চেষ্টা করব আমরা পরের স্টেজে যাওয়ার।’ নাহিদ রানা এ প্রশ্নের উত্তর দেন তিন শব্দে, ‘ভালো কিছুই হবে!’

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ