রিয়াল মাদ্রিদ ৩ : ১ ম্যানচেস্টার সিটি
(দুই লেগ মিলিয়ে রিয়ালের জয় ৬-৩ গোলে)
মাদ্রিদে চ্যাম্পিয়নস লিগ প্লে–অফের দ্বিতীয় লেগে খেলতে যাওয়ার আগে রিয়াল মাদ্রিদকে কথার ফাঁদে ফেলে মনস্তাত্ত্বিকভাবে এগিয়ে যেতে চেয়েছিলেন পেপ গার্দিওলা। শুরুতে নিজের জয়ের সম্ভাবনা ১ শতাংশ বললেও পরে নিজের অবস্থান থেকে সরে আসেন ম্যানচেস্টার সিটি কোচ। মিথ্যা বলছিলেন বলে মন্তব্য করেন গার্দিওলা নিজেই।
বুধবার রাতে ম্যাচ শেষে গার্দিওলার মনে হতে পারে, শেষ কথাটি তিনি হয়তো না বললেও পারতেন। শুধু কিলিয়ান এমবাপ্পেকে দেওয়ার মতো জবাবই যে ছিল না গার্দিওলার হাতে। দুর্দান্ত এক হ্যাটট্রিকে সিটির ১ শতাংশ সম্ভাবনাকে শূন্যে নিয়ে গেছেন এই ফরাসি তারকা।
সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে অবশ্য ম্যাচ আধা ঘণ্টা না পেরোতেই আক্ষরিক অর্থেই সিটির সম্ভাবনা ১ শতাংশে নেমে আসে। প্রথম লেগে ১ গোলে পিছিয়ে থাকা দলটি তখন পিছিয়ে পড়েছে ৩ গোলে। এমবাপ্পের জোড়া গোলে রিয়াল তখন এগিয়ে যায় ২-০ ব্যবধানে।
প্রথমার্ধের পর এই ম্যাচে সিটির ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দলটির অন্ধ ভক্তরাও হয়তো আর দেখেননি। ম্যাচের ফলে তো বটেই, শারীরিক ও মানসিকভাবেও রিয়ালের কাছে তখন আত্মসমর্পণ করে বসেছে সিটি। ম্যাচের পরের অর্ধটুকু তাই ছিল নিছকই আনুষ্ঠানিকতার, যেখানে শেষ পর্যন্ত রিয়ালের কাছে সিটির হার ৩-১ গোলে। দুই লেগ মিলিয়ে যা ৬-৩।
এমন হতশ্রী পারফরম্যান্সে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায়ের ফলে সিটির বাজে মৌসুমটা আরও হতাশায় ডুবে গেল। অন্যদিকে এই জয়ে প্লে–অফ দেয়াল টপকে পরের পর্বে পৌঁছে গেল বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রিয়াল।
পিছিয়ে থেকে খেলতে নামা সিটিকে আজ লড়াইয়ে ফিরিয়ে আনতে পারত একটি গোল। ম্যাচের ৫ মিনিটের মাথায় সেই গোল এসেছে বটে; কিন্তু গোলটি সিটি পায়নি, পেয়েছে রিয়াল। নিজেদের অর্ধ থেকে রাউল আসেনসিও বল বাড়ান কিলিয়ান এমবাপ্পের উদ্দেশে। লেগে থাকা দুই ডিফেন্ডারকে ছিটকে এমবাপ্পে বল তুলে দেন সিটি গোলরক্ষক এদেরসনের মাথার ওপর দিয়ে। এই গোল রিয়ালকে দুই লেগ মিলিয়ে ২ গোলের লিড এনে দেয়।
সিটির বিপদ আরও বাড়ে চোটে পড়ে একটু পর জন স্টোনস মাঠ ছেড়ে গেলে। দুই গোলে পিছিয়ে পড়া সিটিকে এ সময় একরকম পেয়ে বসে রিয়াল। একের পর এক আক্রমণে সিটির নাভিশ্বাস তুলে ছাড়ে রিয়াল আক্রমণভাগ। এমনকি ম্যাচের প্রথম ২৫ মিনিটের মধ্যে লক্ষ্যে কোনো শটও নিতে পারেনি সিটি।
সিটি কিছু করতে না পারলেও রিয়াল কোনো ছাড় দেয়নি। ৩৩ মিনিটে নিজের ও দলের দ্বিতীয় গোল করে সিটির বিদায় অনেকটাই নিশ্চিত করে দেন এমবাপ্পে। রিয়ালের আক্রমণভাগের চার তারকার প্রত্যেকের স্পর্শ ছিল এই গোলে। তবে চূড়ান্ত স্পর্শটা ছিল এমবাপ্পেরই। জোড়া গোল নিয়েই বিরতিতে যায় রিয়াল।
বিরতির পরও ম্যাচে নাটকীয় পরিবর্তন আনতে পারেনি সিটি। এ সময়ও অতিথিদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছে স্বাগতিকেরা, যার ফল রিয়াল পায় ৬১ মিনিটে। নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করে সিটির যন্ত্রণা–বেদনা আরও বাড়িয়ে দেন এমবাপ্পে।
দুই লেগ মিলিয়ে ৬-২ গোলে রিয়াল এগিয়ে যাওয়ার পর বাকি আধা ঘণ্টা খেলার জন্যই শুধু খেলেছে দুই দল। শেষ দিকে নিকো গঞ্জালেস সিটির হয়ে একটি গোলও শোধ করেন। কিন্তু রিয়াল ততক্ষণে সিটির ধরাছোঁয়ার অনেক বাইরে।
পিএসভি ৩ : ১ জুভেন্টাস
(দুই লেগ মিলিয়ে পিএসভি ৪-৩ গোলে জয়ী)
ঘরের মাঠে প্রথম লেগে ২-১ গোলের জয়ে জুভেন্টাসের শেষ ষোলো মনে হচ্ছিল হাতের মুঠোয়। কিন্তু আজ পাশার দান বদলে দিয়েছে পিএসভি। নিজেদের মাঠে অতিরিক্ত সময়ে যাওয়া ম্যাচে পিএসভি বাজিমাত করেছে ৩-১ গোলে। দুই লেগ মিলিয়ে পিএসভির জয় ৪-৩ গোলে। এর ফলে ইতালি থেকে এসি মিলানের পর জুভেন্টাসও বিদায় নিয়ে নিল।
পিএসজি ৭ : ০ ব্রেস্ত
(দুই লেগ মিলিয়ে পিএসজি ১০-০ গোলে জয়ী)
ব্রেস্তের বিপক্ষে প্রথম লেগে ৩-০ গোলে জিতেই শেষ ষোলো একরকম নিশ্চিত করে রেখেছিল পিএসজি। তবে আজ যা করল, সেটা নিশ্চিতভাবে ব্রেস্তকে আরও অনেক দিন তাড়া করবে। এবার ঘরের মাঠে পিএসজি ব্রেস্তের জালে বড় বল জড়িয়েছে ৭ বার। দুই লেগ মিলিয়ে প্লে–অফে পিএসজির জয় ১০-০ গোলে। এই জয়ের পথে একটি রেকর্ডও গড়েছে পিএসজি। এই ম্যাচে পিএসজির ৭ গোল করেছেন ৭ জন আলাদা খেলোয়াড়, যা চ্যাম্পিয়নস লিগের মঞ্চে প্রথমবার ঘটল।
বরুসিয়া ডর্টমুন্ড ০ : ০ স্পোর্তিং লিসবন
(দুই লেগ মিলিয়ে ডর্টমুন্ড ৩-০ গোলে জয়ী)
স্পোর্তিং লিসবনের মাঠে প্রথম লেগে ৩-০ গোলে জিতে অনেকটাই নির্ভার ছিল বরুসিয়া ডর্টমুন্ড। আজ দ্বিতীয় লেগে ঘরের মাঠে একটি ড্রই কিংবা ন্যূনতম ২-০ গোলের হারই ছিল যথেষ্ট ছিল। ম্যাচটা অবশ্য ডর্টমুন্ড হারেনি, ড্র করেছে। গোলশূন্য ড্রয়ের পর দুই লেগ মিলিয়ে ৩-০ গোলের জয় পেয়েছে ডর্টমুন্ড, যা তাদের নিয়ে গেছে শেষ ষোলোয়।