শেষ বলে ৪ রান। কঠিন, আবার সহজও। তবে সহজই বেশি। বল যিনিই করুন আর ব্যাট হাতে যিনিই দাঁড়ান না কেন, ঠিকঠাক ব্যাটে–বলে হলে এ রকম পরিস্থিতিতে বোলার–ব্যাটসম্যানের পরিচিতিতে কিছুই যায়–আসে না।
খুলনা টাইগার্সের অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ শেষ ওভারটা জেসন হোল্ডারকে না দিয়ে কেন মুশফিক হাসানকে দিলেন, সেই প্রশ্ন রেখেও তাই আলিস ইসলামের প্রশংসা করতে হয়। মুশফিকের শেষ বলে এক্সট্রা কাভারের ওপর দিয়ে দুর্দান্ত এক বাউন্ডারি মেরেই হাতের ব্যাটটা ছুড়ে মারলেন শূন্যে। তারপর কোথায় যে হারালেন, চিটাগং কিংসের ড্রেসিংরুম থেকে প্রায় উড়ে আসা জয়োল্লাসের ভিড়ে তাঁকে আর খুঁজেই পাওয়া গেল না। একদিকে চিটাগংয়ের ২ উইকেটের জয়ে ফাইনালে ওঠার উৎসব, আরেক দিকে হতাশায় ভেঙে পড়া খুলনা টাইগার্সের নীরব মাতম।
ফাইনালে উঠতে শেষ ২ ওভারে ২১ রান দরকার ছিল চিটাগংয়ের। ১৯তম ওভারে খুলনা টাইগার্সের পেসার হাসান মাহমুদ ৬ রান দিয়ে রোমাঞ্চকর শেষ ওভারের আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু মিরাজ বল দেন মুশফিককে, যিনি ওভারটা শুরুই করেন আরাফাত সানির ব্যাটে চার খেয়ে। পরের ২ বলে ২ আর ১। চতুর্থ বলে শরীফুল ইসলামের ব্যাকরণ–বহির্ভূত শটে ব্যাটের কানায় লেগে ফাইন লেগ দিয়ে চার।
পঞ্চম বলে শর্ট থার্ডম্যানে হোল্ডারের ক্যাচ হয়ে ফিরে যান শরীফুল। রান নিতে গিয়ে ব্যথা পেয়ে মাঠ ছেড়ে যাওয়া আলিসের শেষ বলে ফিরে গড়া কীর্তির কথা তো আগেই বলা হলো। তাতে বিপিএলের ইতিহাসে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার ফাইনালে উঠল চিটাগং কিংস। ২০১৩ সালে খেলা নিজেদের সর্বশেষ বিপিএলেও ফাইনাল খেলেছিল তারা।
প্লে–অফ পর্বে কালই সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ম্যাচটা হলো। তবে শুরুটা ছিল একপেশে ম্যাচের সম্ভাবনা জাগিয়েই। খুলনা প্রথম ১৬ ওভারে ৪ উইকেটে করে মাত্র ৯২। এর পর থেকেই রং বদলাতে থাকে ম্যাচে। কখনো খুলনার দিকে, কখনো চিটাগংয়ের দিকে বাতাস। শেষ ৪ ওভারে আর ২ উইকেট হারিয়ে খুলনা করে আরও ৭১ রান। ২৪ বলের ভোজবাজিতে পাল্টে যায় তাদের ইনিংস। অবশ্য এটাই তো টি–টোয়েন্টি! শুধু টি–টোয়েন্টিটাকে টি–টোয়েন্টি করে তুলতে জানতে হয়।
খুলনা টাইগার্সের শিমরন হেটমায়ার দেখিয়েছেন, সেটা তিনি খুব ভালোভাবেই জানেন। এরপর তা দেখিয়েছেন চিটাগং কিংসের দুই পাকিস্তানি খাজা নাফি আর হোসেন তালাতও। খুলনার ১৬৩ রানের জবাব দিতে নেমে ৩৫ রানে ২ উইকেট হারানোর পর জুটি বাঁধেন দুই স্বদেশি। ১৩তম ওভারে ২৫ বলে ৪০ রান করে তালাত আউট হওয়ার আগেই ৪২ বলের জুটিতে ৭০ রান।
কিন্তু ১৬তম ওভারে ১১৭ রানের মধ্যে ওপরের দিকের পাঁচ ব্যাটসম্যানই ফিরে যাওয়ার পর চিটাগংয়ের জয়ের সম্ভাবনা কেউ দেখেছেন বলে মনে হয় না। দলটা এই বিপিএলে খেলছেই ছয় ব্যাটসম্যান নিয়ে। বাকি একজন, অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন আর কীই–বা করবেন!
মিঠুন তেমন কিছু করেনওনি। করেছেন আরাফাত সানি আর আলিস। অষ্টম উইকেটে ২৬ রানের জুটি, পরে আবার আলিসের জয়সূচক ওই চার। সানি ১৩ বলে ১৮ ও আলিস ৭ বলে ১৭ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জয়ই শুধু এনে দেননি, চিটাগংয়ের বোলাররা ব্যাটিং বলতে কিছু পারেন না—এই অপবাদও ঘোচালেন।
খুলনার মন্থর ও কম্পিত শুরুর সঙ্গে তাল মিলিয়েই কিনা প্রথম ২১ বলে হেটমায়ার করেছিলেন মাত্র ২২। কিন্তু তাঁর ৩৩ বলে ৬৬ রানের ইনিংসে পরের ৪১ আসে মাত্র ১০ বলে। শেষ ৪ ওভারের তাণ্ডবটাও মূলত ২৯ বলে ফিফটি করা এই ক্যারিবিয়ানের ব্যাটেই।
চিটাগং পেসার খালেদ আহমেদের করা ১৭তম ওভারে আসে ২৩। জাতীয় দলের আরেক পেসার বাঁহাতি শরীফুল ইসলামের করা ১৮তম ওভারটা বেশ ভালোই ছিল। ঝড়ের মধ্যেও মাত্র ১০ রান দিয়েছিলেন, ভালো তো বলতেই হয়। অবশ্য বিনুরা ফার্নান্ডোর করা ১৯তম ওভারে আবারও টি–টোয়েন্টির বিনোদনে ভাসেন খুলনার দর্শকেরা।
২১ রান আসা পুরো ওভারটা একাই খেলেন হেটমায়ার। প্রথম ৪ বলের হিসাব—৪, ৬, ৬ ও ৪। শেষ বলে অবশ্য আউটও হয়ে যান। অবশ্য হেটমায়ার থাকলে যা হতো, না থেকেও তার চেয়ে কম হয়নি শরীফুলের দেওয়া ১৭ রানের শেষ ওভারে।
রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে তবু শেষ হাসি খুলনার নয়, চিটাগংয়ের। জিতলেই ফাইনাল—এমন ম্যাচ আগেও খেলেছিল দলটা। কিন্তু ফরচুন বরিশালের কাছে বড় ব্যবধানে হেরে তাদের অপেক্ষা বেড়েছে, যার শেষটা হলো কাল দ্বিতীয়বারের মতো বিপিএলের ফাইনালে উঠে।