বিশ্বকাপ জয়—পৃথিবীর সব ফুটবলারেরই স্বপ্ন। সেই স্বপ্নপূরণের চেয়ে মধুর অনুভূতি আর হয় না। আর স্বপ্নপূরণের পর সেটাই হয়ে পড়ে অমূল্য এক স্মৃতি, যা প্রতিদিনই স্মরণ করে ধোয়া-মোছা করতে ইচ্ছে করে, বাঁচার আনন্দকে আরও মধুর করতে ফুটবলাররা সেটা বোধ হয় করেনও। আনহেল দি মারিয়াই যেমন—কাতারে দুই বছর আগে আর্জেন্টিনার হয়ে জিতলেন বিশ্বকাপ। সে জয়ের স্মারকও আছে তাঁর বাসায়। বাকি সব চুলোয় যাক, কিন্তু ওই স্মারকটি প্রতিদিন তিনি একবার দেখবেনই। নিশ্চয়ই ভাবছেন, তথ্যটির উৎস কী?
কাতারে ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর নিজেদের ইতিহাসে তৃতীয় বিশ্বকাপ জেতে আর্জেন্টিনা। তার দুই বছর পূর্তি হলো গতকাল। এ উপলক্ষে ফাইনালে আর্জেন্টিনার হয়ে গোল করা আনহেল দি মারিয়ার সাক্ষাৎকার নিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম ‘ওলে’। সেখানে বিশ্বকাপ জয় নিয়ে নিজের সব অনুভূতি ঢেলে দিয়েছেন গত জুন-জুলাইয়ে কোপা আমেরিকা জিতে আর্জেন্টিনার জার্সি তুলে রাখা দি মারিয়া।
ফাইনালের একটি জার্সি রেখেছি নিজের জন্য। অন্যটি বাবার জন্য। সব সময়ই বলেছি, আমার বাবার স্বপ্ন ছিল খেলোয়াড় হওয়া, কিন্তু তাঁর সেই স্বপ্নপূরণ হয়নি। আমার মনে হয়, অ্যাথলেট হওয়া মানে ফুটবলার হওয়ার সেই স্বপ্নের জন্যই তিনি আমাকে অবলম্বন করে বাঁচেন।
২০২২ বিশ্বকাপ ফাইনালে নিজের জার্সি প্রসঙ্গে আনহেল দি মারিয়া
বেনফিকার ৩৬ বছর বয়সী এই উইঙ্গারের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, বিশ্বকাপ জয়ের কোন স্মারকটি ঘরে আছে, যেটা প্রতিদিন দেখেন? আর্জেন্টিনার সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলারের উত্তরটি শুনুন তাঁর মুখেই, ‘বিশ্বকাপ থেকে একটি জিনিসই আমার ঘরে এনেছি, সেটা হলো বিশ্বকাপ (রেপ্লিকা ট্রফি)। আমার মতে,এটা ঘরে রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ; যা কিছু আছে তার মধ্যে এটাই সবচেয়ে সুন্দর। এটাই একমাত্র জিনিস যা আমি প্রতিদিন দেখি। আমার চোখের সামনে থাকে প্রতিদিন, ঘুম থেকে উঠে লিভিং রুমে বিশ্বকাপ দেখাটা যে কী আনন্দের! এটা এমন কিছু যার রেশ সারা জীবন থাকবে এবং সব সময় আমার ঘরেই (বিশ্বকাপ ট্রফির রেপ্লিকা) থাকবে। আমি সব সময়ই এটা স্মরণ করব। বলতে পারেন, এমন কিছু যা চিত্তাকর্ষক।’
কাতারে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর গত বছর ২৪ মার্চ বুয়েনস এইরেসে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেছিল আর্জেন্টিনা জাতীয় দল। পানামার বিপক্ষে ২-০ গোলে জয়ের সেই ম্যাচ শুরুর আগে আর্জেন্টিনার সব খেলোয়াড়ের সামনে একটি করে বিশ্বকাপ ট্রফির রেপ্লিকা রেখে উদ্যাপন করা হয়েছিল। সম্ভবত সেই রেপ্লিকাই শোভা পাচ্ছে দি মারিয়ার ঘরে। আচ্ছা, ট্রফির কথা না হয় হলো, জার্সি? বিশ্বকাপের সেই জার্সিও তো অমূল্য স্মৃতি। সেই স্মৃতিখণ্ডটি কী করেছেন দি মারিয়া?
আর্জেন্টিনার হয়ে ১৪৫ ম্যাচে ৩১ গোল করা দি মারিয়া বলেছেন, ‘ফাইনালের একটি জার্সি রেখেছি নিজের জন্য। অন্যটি বাবার জন্য। সব সময়ই বলেছি, আমার বাবার স্বপ্ন ছিল খেলোয়াড় হওয়া, কিন্তু তাঁর সেই স্বপ্নপূরণ হয়নি। আমার মনে হয়, অ্যাথলেট হওয়া মানে ফুটবলার হওয়ার সেই স্বপ্নের জন্যই তিনি আমাকে অবলম্বন করে বাঁচেন। আমারও খুব গর্ব লাগে এই সফলতায়, তিনিও যে আমার সঙ্গে উদ্যাপন করেন, সে জন্যও। তাই যেকোনো ফাইনালেই ওই দুটি জার্সির একটি পরে আমি তাঁর কাছে যাই।’
বিশ্বকাপ জয়ের পর দুই বছর সময়ের এই ব্যবধানে দি মারিয়া কতবার সেই স্মৃতি স্মরণ করেছেন, নিশ্চয়ই তার কোনো হিসাব নেই। ফ্রান্সের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার সে ফাইনালও ছিল বিশ্বকাপ ইতিহাসেই অন্যতম সেরা। নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময় ৩-৩ গোলে ড্রয়ের পর ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে ৪-২ গোলের জয়ে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জেতে আর্জেন্টিনা। এমন এক ম্যাচ যেখানে আবার দি মারিয়া নিজেই অন্যতম নায়ক—তার ভিডিও নিশ্চয়ই অনেকবার দেখেছেন?
দি মারিয়া বলেছেন, ‘সম্ভবত দুবার। এটা নিশ্চিত যে দুবার দেখেছি। এরপর (ফাইনাল ম্যাচের ভিডিওর) বিভিন্ন টুকরো অংশ চোখে পড়েছে। গোল, উদ্যাপন—এই সবকিছুই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। সাম্প্রতিক সময়ে এগুলোই তো লোকে সবচেয়ে বেশি দেখেছে।’