আইপিএলে দল পাননি। এমনকি তাঁকে নিলামেও তোলা হয়নি। মানে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজির তাঁর প্রতি কোনো আগ্রহই ছিল না। অবশ্য এটা মোটেই অবাক করার মতো ঘটনা ছিল না।
কারণ, আইপিএল নিলাম নিষ্ঠুর এক জায়গা। এখানে অনেকের পেছনে কোটি কোটি টাকা যেমন ঢালা হয়, তেমনি অনেককে দেখলেও মুখও ফিরিয়ে নেওয়া হয়। সে হোক না অনেক বড় তারকা!
ডেভিড ওয়ার্নারের কথাই ধরুন। আইপিএল ইতিহাসে ৫ জন সেরা ক্রিকেটার নাম বললে এর মধ্যে তিনি থাকবেন। এই টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ৬২টি ফিফটি তাঁর। অধিনায়ক হিসেবে সানরাইজার্স হায়দরবাদকে চ্যাম্পিয়ন করেছেন। রান আছে সাড়ে ৬ হাজারের বেশি।
তবে এত কিছু আইপিএলে তাঁর দল পাওয়ার জন্য যথেষ্ট হয়নি। সাকিবও তাই পড়ন্ত বেলায় দল পাবেন না, এটাই স্বাভাবিক। তবে সাকিব আর ওয়ার্নারের পরিস্থিতি এখন নয়। ওয়ার্নার বিগ ব্যাশে খেলবেন, খেলতে পারবেন অন্য যেকোনো লিগে। সাকিব কোথায় খেলবেন? সাকিবের কাছেও বিকল্প আছে অনেক। তবে বেশ কয়েকটি প্রথম সারির টুর্নামেন্টে তাঁর খেলা অনিশ্চিত।
আইপিএলের পর দ্বিতীয় সেরা লিগ কোনটি? না, অবশ্যই বিপিএল নয়। মানের দিক থেকে এটা আরও অনেক পিছিয়ে। সাকিবের বিপিএলে দল পাওয়া পুরোপুরি নিশ্চিত। তবে এখানে আছে বড় বিপত্তি। দল পাওয়ার পরও সাকিব বিপিএল খেলতে পারবেন তো? শেখ হাসিনার পতনের পর আওয়ামী লীগের সাবেক এই সংসদ সদস্য জাতীয় দলের হয়ে খেলতেই তো দেশে ফিরতে পারেননি। নানা ঘটনার পর দেশের উদ্দেশে রওনা দিয়েও মাঝপথে আবার ফিরে যেতে হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সাকিব কীভাবে আগামী বিপিএলে খেলবেন?
দক্ষিণ আফ্রিকার এসএ টি-টোয়েন্টি লিগ, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইন্টারন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি, অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ—এসব টুর্নামেন্ট হবে বিপিএলের কাছাকাছি সময়ে। নিউজিল্যান্ডের সুপার স্ম্যাশও একই সময়ে হওয়ার কথা।
বিগ ব্যাশে সাকিবের জায়গা নেই। সেটা শুধু পারফরম্যান্সের জন্য নয়; ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার নৈতিক পুলিশের আপত্তির বিষয়ও আছে। অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে শাস্তি পাওয়ায় ২০২০ সালে তাঁকে লিগে নিতে আপত্তি জানিয়েছিল সিএর নৈতিক পুলিশ। মানে বলা যায়, সব মিলিয়ে সাকিবের বিগ ব্যাশের দরজা বন্ধ।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে ইন্টারন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি লিগে কোনো দলের স্কোয়াডেও সাকিব নেই। আর সম্প্রতি হয়েছে এসএ টি-টোয়েন্টি লিগের নিলাম, যেখানে সাকিব নাম দেননি। সুপার স্ম্যাশের দলগুলোর স্কোয়াড এখনো ঘোষণা হয়নি।
বাকি থাকছে পিএসএল, সিপিএলের মতো টুর্নামেন্ট। মানের বিচারে এই টুর্নামেন্ট দুটোকে ভালো বলেই ধরা হয়। সাকিবেরও এখানে খেলার ভালো সম্ভাবনা আছে; বিশেষ করে সিপিএলে। পিএসএলে এর আগে সাকিবের নিয়মিত খেলা হয়নি।
২০১৬ সালে শুরু হওয়া এই টুর্নামেন্টে সাকিব এখন পর্যন্ত খেলেছেন মাত্র ১৪ ম্যাচ। তবে এখনকার পরিস্থিতি তো অনেকটাই ভিন্ন! সিপিএলে সাকিব খেলেছেন ৩৬ ম্যাচ। সর্বশেষ খেলেছেন ২০২২ সালে। এই টুর্নামেন্টেও সাকিবকে নিয়মিত দেখা যেতে পারে। তাঁর বোলিংটা এখনো ক্যারিবীয় উইকেটে বেশ কার্যকর।
এ ছাড়া মেজর লিগ ক্রিকেট ও কানাডার গ্লোবাল সুপার লিগও সাকিবের বিকল্প হতে পারে। গত মৌসুমে লস অ্যাঞ্জেলেস নাইট রাইডার্সের হয়ে সাকিব মেজর লিগ ক্রিকেটে খেলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে থাকায় এই টুর্নামেন্ট সাকিবের জন্য খেলাটা সুবিধারও। কানাডার গ্লোবাল সুপার লিগ তো আছেই। লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগের কথা ভুললেও চলবে না। ২০২৩ সালে এই টুর্নামেন্টে সাকিব খেলেছেন।
প্রত্যাশিতভাবেই এখনকার ক্রিকেটারদের কাছে বিকল্প আছে অনেক। সাকিবের বেলাতেই এটাই সত্য। তবে প্রথম সারির লিগগুলোয় সাকিবকে আর না–ও দেখা যেতে পারে। এখন যেমন বর্তমানে সাকিব খেলছেন টি-টেন লিগে। যে টুর্নামেন্টের মান নিয়েই প্রশ্ন আছে; যদিও টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টগুলো টি-টেন লিগের মতো প্রশ্নবিদ্ধ নয়।