অধিনায়ক যান। অধিনায়ক আসেন। কিন্তু হারের পর ‘ভুল’, ‘আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসার আশা’—এসব চর্বিতচর্বণ থেকেই যায়।
নিয়মিত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন চোটে পড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বাংলাদেশ দলের অধিনায়কত্ব করছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। টেস্টে অধিনায়ক হিসেবে এ সফরই মিরাজের প্রথম অভিজ্ঞতা। সমালোচনার সুরটা তাই নরমই হতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশ যেভাবে হেরেছে, তাতে পুরোনো ব্যাধিগুলোই যে ফুটে উঠেছে আবার! অ্যান্টিগায় আজ ২০১ রানে হারের পর মিরাজের কণ্ঠেও সেগুলোই প্রতিধ্বনিত হলো।
যেমন ধরুন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৯ উইকেটে ৪৫০ রানে ডিক্লেয়ার করলেও একপর্যায়ে ২৬১ রানে হারিয়ে বসেছিল ৭ উইকেট। সেখান থেকে অষ্টম উইকেটে পেসার কেমার রোচের সঙ্গে জাস্টিন গ্রিভসের ২৮৯ বলে ১৪০ রানের জুটি। নয়ে নামা রোচ খেলেছেন ১৪৪ বল! রান করেছেন ৪৭। টেস্টে বাংলাদেশের সমর্থকদের জন্য এমন অভিজ্ঞতা নতুন নয়। প্রতিপক্ষের স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের তুলে নিলেও বাংলাদেশের বোলারদের সামনে তাঁদের বোলাররা কীভাবে যেন ব্যাটসম্যান হয়ে যান! মিরাজ মনে করেন, অ্যান্টিগা টেস্টে বাংলাদেশ এখানেই হেরেছে।
আজ হারের পর পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে মিরাজ বোলারদের প্রশংসা করে বলেছেন সে কথাই, ‘আমরা সত্যিই ভালো বোলিং করেছি। তাসকিন ৬ উইকেট পেয়েছে, কিন্তু ৭ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর তারা জুটি গড়েছে। ম্যাচটা আমরা সেখানেই হেরে গেছি।’
আমরা কিছু ভুল করেছি। কিন্তু সেটা হতেই পারে।
অ্যান্টিগায় হারের পর বাংলাদেশ অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ
অধিনায়ক এরপর আরও কিছু কথা বলেছেন। সে প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে একটি প্রশ্ন না তুললেই নয়। তাসকিন ৬ উইকেট পেয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংসে। মিরাজের দাবি অনুযায়ী বাংলাদেশ যদি এই টেস্টে ভালো বোলিংই করে থাকে, তাহলে প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরও ওয়েস্ট ইন্ডিজ কীভাবে সাড়ে চার শ রান তোলে?
ব্যাটিং নিয়ে অবশ্য অকপট স্বীকারোক্তিই দিয়েছেন মিরাজ, ‘আমরা এই ম্যাচে ভালো ব্যাটিং করিনি।’ স্কোরকার্ডেও তা পরিষ্কার। ৪৫০ রান মাথায় নিয়ে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৯ উইকেটে ২৬৯ রান তোলার পর ইনিংস ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ। তাসকিনের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫২ রানে অলআউট হওয়ার পর জয়ের জন্য ৩৩৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৩২ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। ভালো ব্যাটিং করতে না পারার ভুল স্বীকার করে মিরাজ এরপর যা বলেছেন, তাতে অবাক হতেই হয়, ‘আমরা কিছু ভুল করেছি। কিন্তু সেটা হতেই পারে।’
ক্রিকেট ম্যাচে ভুল হতে পারে, তা ঠিক। কিন্তু ‘সেটা হতেই পারে’ বলে ব্যাপারটা হালকা করার সুযোগ সামান্যই, তা–ও আবার টেস্ট ম্যাচে। মিরাজ এরপর আশার কথা শুনিয়েছেন বাংলাদেশের টেস্ট ম্যাচে হারের পর চিরায়ত সংস্কৃতি বজায় রেখেই, ‘আমরা পরের ম্যাচে শক্তভাবে ফিরতে চাই। আমরা জানি কী ভুল করেছি এবং আমাদের শক্ত হয়ে ফেরা প্রয়োজন। নিজেদের মধ্যে আমরা কথা বলব।’
বোলারদের পারফরম্যান্সে মিরাজের সন্তুষ্টি প্রকাশ হয়তো নিজেকে সান্ত্বনা দিতেই। ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘আমাদের পেস আক্রমণ আছে—তাসকিন, হাসান ভালো বোলিং করেছে। তাইজুলও প্রথম ইনিংসে ভালো বোলিং করেছে। আমি তাদের পারফরম্যান্সে সত্যিই খুব সন্তুষ্ট।’
বোলাররা ভালো বোলিংই করেছেন, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু আসল কাজটাই যে হলো না! শনিবার জ্যামাইকায় শুরু হবে দ্বিতীয় টেস্ট। সেখানে হবে কী?