লা বোমবেনারো স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে ছিল পুরো পরিবার। অবশ্য আর্জেন্টাইন ফুটবলে ‘পরিবার’—বিষয়টি বরাবরই বুঝিয়ে বলতে হয়। কারণ, সমর্থক থেকে খেলোয়াড়—সবাই নিজেদের বড় একটি পরিবারের অংশ বলেই মনে করেন। তাই আর্জেন্টিনা হারলে সেই ‘পরিবার’ এ যেমন ঝড় ওঠে, তেমনি জিতলে খুশির বাতাবরণে ছেয়ে যায় চারপাশ। লাওতারো মার্তিনেজের জন্য গ্যালারিতে এই ‘পরিবার’ তো ছিলই, তার পাশাপাশি হাজির ছিল তাঁর রক্তের সম্পর্কে গড়া পরিবারও। ইন্টার মিলান স্ট্রাইকার উপলক্ষটা কী দারুণভাবেই না কাজে লাগালেন!
গোলটি নিশ্চয়ই এতক্ষণে আপনার দেখা। না দেখে থাকলে অল্প করে বলা যায়। বক্সের বাঁ পাশ থেকে মেসির বাতাসে ভাসানো ক্রস পেয়ে শূন্যে লাফিয়ে করা বাঁ পায়ের ভলিতে গোল করেন মার্তিনেজ, যা আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের ১৯৯৯তম গোল। মার্তিনেজের (৭০ ম্যাচে) ৩২তম—এই গোলের মধ্য দিয়ে আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ গোলদাতাদের তালিকায় পাঁচেও উঠে এলেন মার্তিনেজ। সেখানে আগে থেকেই যিনি বসে আছেন, তাঁর পাশে দাঁড়ানোর অনুভূতিটাই হয়তো অন্য রকম। ডিয়েগো ম্যারাডোনা!
পরিবারকে সাক্ষী রেখে দেশের হয়ে গোলের হিসাবে ম্যারাডোনার পাশে বসা—অনুভূতিটা ঠিক কেমন? টিওয়াইসি স্পোর্টসের সঙ্গে ম্যাচ শেষে আলাপচারিতায় মার্তিনেজ সরাসরি এ প্রশ্নের উত্তর দেননি। তবে যা বলেছেন, তাতে সন্তুষ্টির রেশ ঝরে পড়ল, ‘খুশি লাগছে, কারণ পুরো পরিবার (স্টেডিয়ামে) এসেছিল। সব সময় নিজের সেরাটা দিতে চাই।’
আর্জেন্টিনার হয়ে এ নিয়ে ১৫ বার ম্যাচের প্রথম গোলটি করলেন ইন্টার অধিনায়ক। সেই গোলেই পেরুর বিপক্ষে এ বছর নিজেদের শেষ ম্যাচে দল শেষ পর্যন্ত ১-০ ব্যবধানে জেতায় মার্তিনেজের খুশি লাগাই স্বাভাবিক, ‘এই বছরটা খুব ইতিবাচক ছিল। সৌভাগ্যবশত আমরা জয় দিয়ে শেষ করতে পারলাম। পারফরম্যান্স, গোল ও ম্যাচ খেলার হিসাবে বছরটা দারুণ ছিল। আমাদের খেলা চালিয়ে যেতে হবে এবং দিনে দিনে উন্নতি করতে হবে।’
১২ ম্যাচে ২৫ পয়েন্ট নিয়ে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থেকে বছর শেষ করল আর্জেন্টিনা। লিওনেল স্কালোনির এই দলটা যে এখন সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু, সেটাও অন্যভাবে বোঝালেন মার্তিনেজ, ‘সবাই আমাদের হারাতে চায়। আর্জেন্টিনা জাতীয় দল সব সময়ই আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। উন্নতির জায়গা আছে, তবে আমাদের নিজেদের পথটা ধরে রাখতে হবে।’
৭০ ম্যাচে ৩২ গোল করা মার্তিনেজ এর আগে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার সর্বশেষ ম্যাচেও গোল করেছিলেন। তবে আসুনসিওনে সেই ম্যাচটি ২-১ গোলে হেরেছিল আর্জেন্টিনা। সব মিলিয়ে দেশের হয়ে টানা তিন ম্যাচে গোল করলেন। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে সব মিলিয়ে ১০ গোল করা মার্তিনেজ গত জুলাইয়ে কোপা আমেরিকাতেও হয়েছিলেন সর্বোচ্চ গোলদাতা (৫)। গোল করেছিলেন ফাইনালেও। আর্জেন্টিনার হয়ে এ বছর ১৬ ম্যাচে ১১ গোল করেছেন মার্তিনেজ। এ বছর আর্জেন্টিনার হয়ে তাঁর চেয়ে বেশি গোল আর কেউ করতে পারেননি। ১০ ম্যাচে ৬ গোল মেসির।
ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনার জার্সিতে গোল ৩৪টি হলেও ২টি গোল বিশ্ব একাদশ ও লিগ অব আয়ারল্যান্ড একাদশের বিপক্ষে। এ দুটি ম্যাচকে আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশন (এএফএ) অফিশিয়াল স্বীকৃতি দেয়নি। সে হিসেবে ম্যারাডোনার গোলসংখ্যা ৩২। সংবাদমাধ্যম লা নাসিওন জানিয়েছে, জাতীয় দলের হয়ে ম্যাচপ্রতি ম্যারাডোনার গোল গড় যেখানে ০.৩৭, মার্তিনেজের সেখানে ০.৪৪। তার মানে, মার্তিনেজ যে ম্যারাডোনার চেয়ে ভালো হয়ে গেলেন, তা নয় মোটেও। তবে লা নাসিওনের দাবি, ২০০৭ সালে হেরনান ক্রেসপো অবসর নেওয়ার পর স্ট্রাইকারসুলভ গোল করায় মার্তিনেজ সেই শূন্যতা পূরণ করতে পারছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনির আসার কথা থাকলেও তিনি আসেননি। তাঁর জায়গায় সহকারী কোচ ওয়াল্টার স্যামুয়েল এসে জানিয়েছেন, স্কালোনি অসুস্থতা বোধ করায় আসতে পারেননি।