বছরের বাকি এখনো ৫০ দিন, মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) এবারের আসর শেষ হতে বাকি ২৬ দিন। তার আগেই ক্লাব মৌসুম শেষ লিওনেল মেসির!
না, ‘বুড়ো বয়সে’ চোটজর্জর হয়ে পড়া মেসি নতুন করে চোটে পড়েননি। ইন্টার মায়ামি এমএলএস প্লে–অফ পর্বের প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নেওয়াতেই তাঁর সামনে এল আগাম অবকাশ যাপনের সুযোগ। তবে এমন ছুটি তিনি নিশ্চয় চাননি!
নিজেদের মাঠ চেজ স্টেডিয়ামে গতকাল মেসির গোলের পরও আটলান্টা ইউনাইটেডের কাছে ‘অঘোষিত কোয়ার্টার ফাইনালে’ ৩–২ গোলে হেরে গেছে ইন্টার মায়ামি। অথচ প্লে–অফের প্রথম রাউন্ডে মায়ামিই ছিল নিরঙ্কুশ ফেবারিট।
রেগুলার সিজনে রেকর্ড ৭৪ পয়েন্ট তুলে সাপোর্টার্স শিল্ড জিতে নেয় মায়ামি, করে সর্বোচ্চ ৭৯ গোল। দুই কনফারেন্স মিলে শীর্ষে থাকার সুবাদে আগামী বছরের ক্লাব বিশ্বকাপেও জায়গা করে নেয় দলটি।
বিপরীতে আটলান্টা ইস্টার্ন কনফারেন্স থেকে প্লে–অফ পর্বে ওঠে নবম হয়ে। তাদের পয়েন্ট ছিল ৪০। মানে মায়ামির চেয়ে ৩৪ কম। প্লে–অফের প্রথম রাউন্ডে জায়গা করে নেওয়ার আগে ওয়াইল্ড কার্ড রাউন্ডের বাধা পেরিয়ে আসতে হয় তাদের।
শুধু কি তাই? আটলান্টা ইউনাইটেড তাদের পুরো স্কোয়াডকে বছরে বেতন দেয় ১৮২ কোটি ৬১ লাখ টাকা। মেসি ইন্টার মায়ামির কাছ থেকে একাই পান ২৪৫ কোটি টাকা। লুইস সুয়ারেজ, সের্হিও বুসকেতস, জর্দি আলবার মতো তারকাদের পারিশ্রমিকের হিসাবটা না হয় বাদই থাকল। সেই আটলান্টার বিপক্ষে শুরুতে এগিয়ে গিয়েও এমএলএস থেকে বিদায় অনেকের চোখেই আসরের ইতিহাসে অন্যতম বড় অঘটন।
ইন্টার মায়ামির হয়ে এই মৌসুমে ২৫ ম্যাচে ২৩ গোল করেছেন মেসি, সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন ১৩ গোল। চোটের কারণে ও জাতীয় দল আর্জেন্টিনার খেলা থাকায় মিস করেছেন ২০ ম্যাচ।
এই অঘটনে টুর্নামেন্টের বাকি অংশ নিয়ে ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে কিছুটা হলেও আগ্রহের ভাটা পড়বে, তা বলাই বাহুল্য। কারণ, মেসি গত বছর মায়ামিতে যোগ দেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল–অর্থনীতি খোলনলচে বদলে গেছে। এমএলসের জনপ্রিয়তাও বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। মেসির ম্যাচ মানেই যেন টিকিটের জন্য হাহাকার।
মায়ামিতে নিজের প্রথম মৌসুমে ১৪ ম্যাচে ১১ গোল করেন মেসি। সতীর্থদের দিয়ে করান ৫ গোল। সেবার দলকে এনে দেন লিগস কাপের ট্রফি, যা ডেভিড বেকহামের মালিকানাধীন ক্লাবটির ইতিহাসের প্রথম শিরোপা। এবার মেসি ম্যাচ খেলেছেন আরও বেশি, গোল ও অ্যাসিস্ট করেছেন বেশি। কিন্তু ট্রফি ওই একটিই। যদিও সাপোর্টার্স শিল্ডকে শিরোপা বলার চেয়ে স্বীকৃতি বলাই শ্রেয়।
ইন্টার মায়ামি মোট ৪৫ ম্যাচ খেলে এবারের মৌসুম শেষ করল। তবে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে মেসি খেলতে পেরেছেন ২৫ ম্যাচ। অর্থাৎ, মিস করেছেন ৪৪.৪৫% ম্যাচ। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক এবার এমএলএসে মাঠে নেমেছেন ২২ বার, কনকাকাফ চ্যাম্পিয়নস কাপে ৩ বার। এ মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে তাঁর গোল ২৩টি, গোলে সহায়তা ১৩টি। তবে গতবার মেসির হাত ধরে যে লিগস কাপ জিতেছিল মায়ামি, সেই টুর্নামেন্টে এবার তিনি খেলতেই পারেননি।
মেসির এতগুলো ম্যাচ মিস করার কারণ সবার জানা। পায়ের ব্যথা, মাংসপেশিতে টান, জাতীয় দল আর্জেন্টিনার খেলা থাকা আর কোপা আমেরিকা ফাইনালের পাওয়া সেই অ্যাঙ্কেলের চোট, যা থেকে পুরোপুরি সেরে উঠে মাঠে ফিরতে ২ মাস ২ দিন লেগে গেছে তাঁর।
চোটের কারণে লম্বা সময় মাঠের বাইরে থাকার পরও এবারের এমএলএসে মেসি যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা। ২২ ম্যাচে তাঁর গোল ২১টি। সমানসংখ্যক গোল করেছেন মেসির বন্ধুপ্রতিম সতীর্থ লুইস সুয়ারেজ ও লস অ্যাঞ্জেলেস এফসির ডেনিস বুয়াঙ্গা। তবে সুয়ারেজ খেলেছেন ৩০ ম্যাচ, বুয়াঙ্গা খেলেছেন ৩৫টি।
৩০ ম্যাচে ২৩ গোল করে শীর্ষে আছেন ক্রিস্টিয়ান বেন্টেকে। বেলজিয়ামের সাবেক এই ফরোয়ার্ডের অবশ্য গোল বাড়ানোর সুযোগ নেই। তাঁর দল ডিসি ইউনাইটেড প্লে–অফ পর্বের আগেই বিদায় নিয়েছে। তবে বুয়াঙ্গার মেসি–সুয়ারেজকে তো বটেই, বেন্টেকেকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে। কারণ, তাঁর দল লস অ্যাঞ্জেলেস এফসি প্লে–অফের সেমিফাইনালে উঠে গেছে। এর অর্থ তিনি অন্তত আরও একটি ম্যাচ পাচ্ছেন।
ক্লাব ফুটবলের মৌসুম কিছুটা আগেই শেষ হওয়ায় জাতীয় দলের খেলায় পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারবেন মেসি। আগামী ২০ ও ২৫ নভেম্বর পেরু ও উরুগুয়ের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ খেলবে আর্জেন্টিনা। ১০ ম্যাচে ২২ পয়েন্ট নিয়ে দক্ষিণ আমেরিকান অঞ্চলের (কনমেবল) অঞ্চলের বাছাইয়ে শীর্ষেই আছে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।