বাংলাদেশ ২ : ১ নেপাল
দুই বছর আগে দশরথ রঙ্গশালাতেই নেপালকে কাঁদিয়ে প্রথমবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিল বাংলাদেশ। নেপাল আজ আবার কাঁদল। কিন্তু সান্ত্বনা তাদের একটাই, যোগ্যতর দল জিতেছে। স্বাগতিকদের ২-১ গোলে হারিয়ে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা ধরে রেখেছেন লাল–সবুজের অদম্য মেয়েরা। দেশের ফুটবলে যা নতুন এক ইতিহাস। বড় কোনো শিরোপা জিতে সেটি ধরে রাখার কীর্তি ছেলেরা দেখাতে পারেননি কখনো। সাবিনা খাতুনের নেতৃত্বে পেরেছেন মেয়েরা।
বিরতির পরপরই মনিকা চাকমা বক্সের ভেতরে থেকে দারুণ প্লেসিংয়ে যখন বাংলাদেশকে ১-০ গোলে এগিয়ে নেন, দশরথের ভরা গ্যালারিতে নেমে আসে নিস্তব্ধতা। আবারও কী আশাভঙ্গের বেদনায় পুড়তে যাচ্ছে নেপাল! এই হাহাকার ততক্ষণে ছড়িয়ে পড়েছে হিমালয়ের দেশটিতে। কিন্তু ৫৩ মিনিটে নেপালের আক্রমণের অন্যতম প্রাণ আমিশা কার্কি বাংলাদেশের রক্ষণ চিড়ে ভেতরে ঢুকে পড়েন। ঠান্ডা মাথায় গোলরক্ষক রুপনা চাকমার পাশ দিয়ে তাঁর প্লেসিং নিস্তব্ধ গ্যালারিকে আবার জাগিয়ে তোলে।
৮১ মিনিটে ঋতুপর্ণা চাকমার ঝলকে বাংলাদেশের সামনে খুলে যায় আরেকটি ফাইনাল জয়ের পথ। রাঙামাটির মেয়ের শট নেপালের জালে জড়াতেই সেই একই দৃশ্য। গ্যালারিতে আবার নিস্তব্ধতা। তবে বেশিক্ষণ নীরব থাকেনি। ঘরের মেয়েদের উজ্জীবিত করতে আবারও সেই ‘নেপাল, নেপাল’ স্লোগান। কিন্তু কোনো কিছুই দমাতে পারেনি বাংলাদেশকে। নেপালের মাটিতে টানা দ্বিতীয় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে জিতে নিজেদের নতুন উচ্চতায় তুলেছে বাংলাদেশের মেয়েরা।
প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের সঙ্গে পিছিয়ে পড়ে হতাশার ড্র। বাংলাদেশের সেমিফাইনালে ওঠাই তখন অনিশ্চিত হয়ে ওঠে। কিন্তু ভারতকে ৩-১ গোলে উড়িয়ে গ্রুপ সেরা হয়ে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। সেমিফাইনালে ভুটান পাত্তাই পায়নি। ৭-১ গোলের বড় জয় বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয় অনেকটাই। যার সুবাদে ফাইনালে স্থানীয়দের সব প্রত্যাশা গুঁড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
নেপাল খুব খারাপ ফুটবল খেলেছে যে তা নয়, কিন্তু বাংলাদেশ গোলের সুযোগ কাজে লাগাতে পেরেছে ভালোভাবে। বাংলাদেশের মেয়েদের ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের কাছেই নেপালকে হারতে হয়েছে আবারও। আলাদাভাবে বলতেই হবে ঋতুপর্ণার কথা। প্রথমার্ধে কিছুটা নিষ্প্রভ থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়িয়ে দলকে উপহার দিয়েছেন জয়।
সেই জয়ে নেপালিদের মন ভেঙেছে। অথচ আজকের দিনটা তাদের কাছে ছিল স্বপ্নময়। নেপালের স্থানীয় ভাষার দৈনিক কান্তুপুরের আজকের প্রথম পাতার শিরোনাম ছিল ‘এবার না হলে আর কখনো নয়’।
এই শিরোনামের মধ্যে নেপালিদের হতাশা আর আশাভঙ্গ বেদনাই যেন লুকিয়ে ছিল। তাদের আশা ছিল, নারী সাফের চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা আরও অনেক আগেই ঘরে তুলবে। কিন্তু আগের ছয় ফাইনালের পাঁচটিতে খেলে একবারও তা পূরণ হয়নি।
অবশেষে ‘একবার না পারিলে দেখো শতবার’—প্রবাদটা মনে করিয়ে দিয়ে ষষ্ঠবার সাফ নারী ফুটবলের ফাইনালে উঠে প্রাণখুলে হাসতে চেয়েছে নেপাল। কিন্তু অপেক্ষার অবসান আর হলো না। দক্ষিণ এশিয়ান নারী ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্নটাকে বাস্তব রূপ দিতে পারেনি নেপাল।
বিকেল থেকেই কাঠমান্ডুর ফুটবল-জনতা শিরোপা উৎসবের আশায় ভিড় জমান দশরথ গ্যালারিতে। ফাইনাল শুরুর দেড় ঘণ্টা আগেই ১৫ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার গ্যালারি প্রায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। অনেকের হাতে ছিল নেপালের পতাকা। স্টেডিয়ামে তৈরি হয় উৎসবের পরিবেশ। সেটির মাত্রা আরও বাড়ে ম্যাচ শুরুর পর, যেন ১২তম খেলোয়াড় হয়ে লড়ছিলেন নেপালের সমর্থকেরা। কিন্তু প্রতিপক্ষের বিপুল সমর্থকের চাপও মনিকারা জয় করেছেন দারুণভাবেই।
সাগরিকার জায়গায় ফরোয়ার্ড শামসুন্নাহার জুনিয়রকে নিয়ে একাদশ সাজান বাংলাদেশ কোচ পিটার বাটলার। কিছুটা চোট থাকায় শামসুন্নাহার সেমিতে খেলেননি। ফাইনালে ফিরে এসে চেষ্টা করছিলেন ডান দিকের উইং দিয়ে বল করে চূড়ান্ত পাস দিতে। তাঁর দুরন্ত ড্রিবলিংয়ের কাছে কয়েকবার পরাস্ত হন নেপালের ডিফেন্ডার। বাঁ দিক থেকে খেলছিলেন ঋতুপর্ণা চাকমা, তিনিও কিছু বল বাড়ান বক্সে।