ফিল সিমন্সের হয়েছে উভয়সংকট। কোচ যেহেতু, দলের সবকিছুর ব্যাখ্যা তো তাঁকেই দিতে হবে। কিন্তু সব প্রশ্নের উত্তর তাঁর কাছে না থাকাটাই স্বাভাবিক। এই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান কোচ বাংলাদেশে এসেছেন ১৬ অক্টোবর। এর পাঁচ দিনের মধ্যে শুরু হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ। ৭ উইকেটে মিরপুর টেস্ট হারার পর কাল শুরু হয়ে গেছে চট্টগ্রামে দ্বিতীয় টেস্টও।
এর মধ্যে মাঠের বাইরেও কত বিতর্ক! মিরপুর টেস্টে সাকিব আল হাসানের না খেলা নিয়ে কত কিছু ঘটে গেল! চট্টগ্রাম টেস্টের আগে জানা গেল নাজমুল হোসেন নাকি এই সিরিজের পর আর কোনো সংস্করণেই অধিনায়কত্ব করবেন না। সব মিলিয়ে এসেই ঝড়ের মধ্যে নতুন কোচ।
এদিকে চট্টগ্রামে টেস্টের প্রথম দিনেই বাংলাদেশ চাপে। প্রথম দিনে ২ উইকেটে ৩০৭ রান করে বাংলাদেশের সামনে পাহাড় তোলার অপেক্ষায় দক্ষিণ আফ্রিকা। এমন দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাধারণত কোচই আসেন খেলোয়াড়দের ঢাল হতে। আজ সিমন্স যেমন এলেন।
পরিস্থিতির কারণেই যথারীতি খেলার বাইরের বিষয়েও কথা বলতে হলো কোচকে। বাইরের ঝড়ঝঞ্ঝা খেলোয়াড়দের মনোযোগে সমস্যা করছে না তো! সিমন্সের বিশ্বাস, অন্তত দলের সঙ্গে থাকা অবস্থায় সে রকম কিছু হচ্ছে না, ‘জানি না যখন তারা দলের বাইরে থাকে, তখন মনোযোগ হারায় কি না। তবে যখন ওরা দলের সঙ্গে থাকে, আমরা চেষ্টা করি কাজের দিকেই মনোযোগটা দিতে। টেস্টের প্রস্তুতি সেভাবেই নিয়েছি। আজ সকালে যেমন ভেবেছি, আমরা কী করতে চাই, টস জিতলে কী করব…এসব। যেটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে, সেটাতেই আমরা মনোযোগ দিচ্ছি। তবে ওরা বাইরে থাকলে যদি অন্য কিছু হয়, সেটা আমি বলতে পারব না।’
জানি না যখন তারা দলের বাইরে থাকে, তখন মনোযোগ হারায় কি না। তবে যখন ওরা দলের সঙ্গে থাকে, আমরা চেষ্টা করি কাজের দিকেই মনোযোগটা দিতে।
ফিল সিমন্স, প্রধান কোচ, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল
মাত্রই দায়িত্ব নেওয়া একজন কোচের পক্ষে আসলে এসব বিষয়ে এর বেশি কিছু বলাও সম্ভব নয়। তবে টেস্টটা যে বাংলাদেশ দল চার বিশেষজ্ঞ বোলার নিয়ে খেলেছে, সেটার নিশ্চয়ই ব্যাখ্যা আছে সিমন্সের কাছে।
চট্টগ্রামের ব্যাটিং উইকেট আর প্রচণ্ড গরম আবহাওয়ায় দলে একজন বোলার বেশি দরকার ছিল কি না, আট নম্বরের জন্য কেন রাখা হলো মেহেদী হাসান মিরাজকে? তাঁকে আরেকটু ওপরে উঠিয়ে একজন ব্যাটসম্যান কম নিয়ে কি টেস্টটা খেলা যেত না! এই কন্ডিশনে বোলারদের ওপরই যেহেতু চাপ বেশি, একজন বাড়তি বোলার তো সহজ করতে পারতেন বাংলাদেশের কাজটা।
সংবাদ সম্মেলনে সিমন্স জানিয়েছেন, সব রকম পরিস্থিতি বিবেচনা করেই তাঁরা একাদশ ঠিক করেছেন। পঞ্চম বোলার নিয়ে খেলার চিন্তাও দলের ছিল এবং এটা নিয়ে অনেক আলোচনাই তাঁরা করেছেন। শেষ পর্যন্ত সে পথে না হাঁটার ব্যাখ্যা দিয়ে কোচ পরে যেটা বলার চেষ্টা করেছেন, তার অর্থ দাঁড়ায়—রক্ষণাত্মক মনোভাব থেকেই শেষ পর্যন্ত চার বোলার এবং একজন বাড়তি ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলা। তাতে টেস্টটাকে জয়ের দিকে যদি না–ও নেওয়া যায়, অন্তত ড্রয়ের চেষ্টাটা তো করা যাবে।
টেস্টের প্রথম দিনে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের কোনো সমস্যাতেই ফেলতে পারেননি বাংলাদেশের বোলাররা। প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের ভুল করার অপেক্ষায় থাকা ছাড়া তাই গত্যন্তর ছিল না। কিন্তু দিনটা এমনই খারাপ গেল যে কিছু ফিল্ডিং ব্যর্থতার কারণে সেই ভুলেরও সুযোগ নিতে পারেনি বাংলাদেশ।
তারপরও সব মিলিয়ে প্রথম দিনের খেলা নিয়ে নাকি হতাশ নন সিমন্স, ‘এটা বলব না যে আমি হতাশ। এটা দারুণ ব্যাটিং উইকেট। আমার তো মনে হয় বোলাররা যথেষ্ট পরিশ্রম করেছে এবং ভালোই বল করেছে। কিছু সুযোগ হাতছাড়া না হলে ভিন্ন পরিস্থিতি হতে পারত। চার–পাঁচটি উইকেট পড়তে পারত। কঠিন দিন ছিল, কিন্তু আমরাও অনেক সময় অন্যদের কঠিন দিন দিয়েছি। কাজেই এটা বলা ঠিক হবে না যে আমি হতাশ।’
কাল সকাল সকাল দক্ষিণ আফ্রিকার কিছু উইকেট তুলে নিয়ে দ্রুতই তাদের অলআউট করে দেওয়ার পরিকল্পনা বাংলাদেশের। এভাবে যদি সকালটাকে অন্য রকম করে দেওয়া যায়, তাহলে জয়ের চিন্তা করাটাকেও বাড়াবাড়ি মনে হয় না সিমন্সের কাছে এবং প্রথমত, সেটাই নাকি তাঁদের চিন্তা, তারপর অন্য কিছু।
এটা বলব না যে আমি হতাশ। এটা দারুণ ব্যাটিং উইকেট। আমার তো মনে হয় বোলাররা যথেষ্ট পরিশ্রম করেছে এবং ভালোই বল করেছে।
ফিল সিমন্স, প্রধান কোচ, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল
প্রসঙ্গক্রমে, উদাহরণ টেনেছেন সাম্প্রতিক পাকিস্তান–ইংল্যান্ড সিরিজে মুলতানের প্রথম টেস্টের নাটকীয় পরিসমাপ্তির, ‘টেস্টে আমরা এটাও দেখেছি একদল ৫০০ করার পর আরেক দল ৮০০ করল, এরপরও টেস্টে ফলাফল হলো। কাজেই নিজেদের পক্ষে ফল পাওয়ার দিকে সব সময়ই চোখ থাকে।’
এটা নিশ্চয়ই সিমন্সেরও ভালো করেই জানা যে চট্টগ্রামে সে রকম কিছু করতে হলে কী অসাধ্যটাই না সাধন করতে হবে বাংলাদেশকে। কিন্তু তিনি তো কোচ! ঝড়ের মধ্যে পড়া একটা দল নিয়েও তাই তাঁর কণ্ঠে আশার কথা।