দ্যা নিউ ভিশন

নভেম্বর ২৫, ২০২৪ ০৩:২৬

জামায়াতের নিবন্ধন: ২৮৬ দিন বিলম্ব মার্জনা, আপিল পুনরুজ্জীবিত

হাইকোর্ট ভবন। ফাইল ছবি

রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে দেওয়া নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণার রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল পুনরুজ্জীবিত করে আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

২৮৬ দিন দেরি মার্জনা করে আপিল পুনরুজ্জীবিত চেয়ে দলটির পক্ষ থেকে করা আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।

রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে দেওয়া নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণার হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল ও লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) গত বছরের ১৯ নভেম্বর খারিজ করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। আপিলকারীর পক্ষে সেদিন কোনো আইনজীবী না থাকায় আপিল বিভাগ ওই আদেশ (ডিসমিসড ফর ডিফল্ট) দেন।

এরপর ২৮৬ দিন দেরি মার্জনা করে আপিল এবং ২৯৪ দিন দেরি মার্জনা করে লিভ টু আপিল পুনরুজ্জীবিত চেয়ে দলটির পক্ষ থেকে পৃথক আবেদন করা হয়। আবেদন দুটি গত ১ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে ওঠে। সেদিন চেম্বার আদালত আবেদন দুটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ২১ অক্টোবর দিন রাখেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ আবেদন দুটি শুনানির জন্য ওঠে।

আদালতে আবেদনকারীপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। অন্যদিকে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড মোহাম্মদ আলী আজম।

আদেশের পর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, ‘জামায়াতের আপিল শুনানির জন্য যে দিন ধার্য ছিল, সেদিন (গত বছরের ১৯ নভেম্বর) দেশব্যাপী হরতাল ছিল, যে কারণে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হাজির হতে পারেননি। এ জন্য শুনানি মুলতবির দরখাস্তও দেওয়া হয়। এ সত্ত্বেও আপিল বিভাগ ডিসমিসড ফর ডিফল্ট হিসেবে আপিল খারিজ করে দেন।’

আপিল ও লিভ টু আপিল পুনরুজ্জীবিত চেয়ে করা আবেদন মঞ্জুরের বিষয়টি জানিয়ে শিশির মনির বলেন, ‘একটি সার্টিফিকেট আপিল। এখানে সাংবিধানিক ইস্যু জড়িত থাকায় সরাসরি আপিল করার জন্য হাইকোর্ট বিভাগই সার্টিফিকেট দিয়েছিল। অর্থাৎ লিভ টু আপিল না করে সরাসরি আপিল করা যাবে। হাইকোর্ট বিভাগ যেখানে সার্টিফিকেট দিয়েছেন, এ ধরনের মামলা শুনানি ছাড়া খারিজ করা যায় না। পরবর্তী সময়ে নিয়মিত লিভ টু আপিলও করা হয়। আপিল বিভাগ বিলম্ব মার্জনা করে আপিল ও লিভ টু আপিল পুনরুজ্জীবিত করে আদেশ দিয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘যিনি আপিলকারী ছিলেন, তিনি মারা গেছেন। বর্তমানে যিনি জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আছেন, তিনি এই মামলায় আপিলকারী হিসেবে যুক্ত হবেন। এ প্রক্রিয়ার পর আপিলের ওপর শুনানি হবে।’

নিবন্ধন নিয়ে রিট, রায় ও পরবর্তী কার্যক্রম

রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট করেন সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ ব্যক্তি। রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্টের তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ। একই সঙ্গে আদালত এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সনদ দেন, যা পরবর্তী সময়ে আপিল হিসেবে রূপান্তরিত হয়।

এর আগে রায় ঘোষণার পরপরই তা স্থগিত চেয়ে জামায়াত আবেদন করে, যা ২০১৩ সালের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের তৎকালীন চেম্বার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত ১ আগস্ট জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান। গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।

এরপর জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে জারি করা প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের গত ২৮ আগস্ট জারি করা এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ এর অঙ্গসংগঠনের সন্ত্রাস-সহিংসতার সঙ্গে সম্পৃক্ততার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। সরকার বিশ্বাস করে, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ এর অঙ্গসংগঠন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত নয়। তাই সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯-এর ১৮(১) ধারার ক্ষমতাবলে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ এর সব অঙ্গসংগঠনকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণাসংক্রান্ত ১ আগস্টের প্রজ্ঞাপন বাতিল করল।

 

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ

ঝলমলে আইপিএল নিলামের অন্য রূপ: কালো তালিকা, রাতারাতি কোটিপতি আর ক্ষমতা প্রদর্শন

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ললিত মোদি। ভারতীয় ক্রিকেট