জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির (জাপা) ছাত্রসংগঠন জাতীয় ছাত্রসমাজের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. আল মামুন ও সাধারণ সম্পাদক মো. আশরাফুল ইসলাম খান পদত্যাগ করেছেন। আজ বুধবার সকালে পার্টির চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে গিয়ে তাঁরা পদত্যাগ করেন।
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ছাত্রসমাজের দুই নেতা জাতীয় পার্টি থেকে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের দোসরদের বের করে দিয়ে দলে সংস্কারের উদ্যোগ নিতে জি এম কাদেরের কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তাতে সাড়া না পেয়ে সংগঠনের সভাপতি ও সম্পাদক পদত্যাগ করেন।
অবশ্য পদত্যাগপত্রে আল মামুন ও আশরাফুল ইসলাম খান উল্লেখ করেন, বর্তমানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জাতীয় পার্টির সাংঘর্ষিক আবস্থান হওয়ায় তাঁরা দলের সব পদ-পদবিসহ জাতীয় ছাত্রসমাজের সভাপতি ও সম্পাদক পদ থেদে পদত্যাগ করেন।
পদত্যাগপত্রে দুই নেতা লিখেছেন, ছাত্রসমাজ গত ১৭ জুলাই কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে সমর্থন জানায়। সারা দেশের সব ক্যাম্পাস ও রাজপথে আন্দোলনে থাকার জন্য নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী, ৫ আগস্ট বিজয় পর্যন্ত নেতা-কর্মীরা আন্দোলনে ছিলেন। অনেকে গ্রেপ্তার ও হয়রানির শিকার হয়েছিলেন। কিন্তু বিজয়ের পর বর্তমানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জাতীয় পার্টি সাংঘর্ষিক আবস্থানে দাঁড়িয়েছে।
সদ্য পদত্যাগী জাতীয় ছাত্রসমাজের সভাপতি মো. আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় সংগঠনের রংপুর মহানগর ও জেলার সাধারণ সম্পাদকসহ সারা দেশে ৫৬ জন নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তখন জাতীয় পার্টির শীর্ষ পর্যায় থেকে আমাদের নিজ দায়িত্বে আন্দোলন করতে বলা হয়েছিল। আমরা সেভাবেই আন্দোলনে ছিলাম। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে থাকলেও অন্য নেতারা আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁদের বের করে দিয়ে দলে সংস্কার আনতে হবে।’
এরই মধ্যে জাতীয় পার্টিকে নিয়েও রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ‘দোসর’ হিসেবে সমালোচনা করছেন। মনে করা হচ্ছে, তারই অংশ হিসেবে এ দফায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপে জাতীয় পার্টিকে ডাকা হয়নি। এ ঘটনা দলটিকে বিব্রত করেছে। ইতিমধ্যে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে এটাকে ‘অদ্ভুত’ বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এর রেশে অন্তর্বর্তী সরকারে থাকা দুজন উপদেষ্টাকে (ছাত্র প্রতিনিধি) রংপুরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন জাতীয় পার্টির নেতা ও রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। এ ঘটনায় রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় পার্টি মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিও করেছে। এই উত্তেজনার মধ্যেই ছাত্রসমাজের দুই প্রধান নেতা পদত্যাগ করলেন।
অবশ্য বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অঙ্গসংগঠনগুলো পুনর্গঠন করছি। চেয়ারম্যান তাদের ডেকে বলেছেন যে ছাত্রসমাজের কমিটি নতুন করে করব। তোমাদের অন্য জায়গায় প্রোভাইড করব। এতে হয়তো তাদের মন খারাপ হয়েছে।’
এ বক্তব্যের ২০ মিনিট পর ছাত্রসমাজের কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা করে জাতীয় পার্টি। দলে যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমের নামে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মো. মারুফ ইসলাম তালুকদারকে আহ্বায়ক, মো. আরিফ আলীকে সদস্যসচিব ও নাজমুল হাসানকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে নতুন কমিটি দেওয়া হয়। তাদের আগামী ১০ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি করে কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা দিতে বলা হয়েছে।
যদিও ছাত্রসমাজের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সকাল ১০টার দিকে বনানীর কার্যালয়ে গিয়ে পদত্যাগ করেন। এরপর তাঁরা বেলা একটার দিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের সঙ্গে দলে সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন।