সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্যে উপনীত ও ভোটার তালিকা তৈরি হলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নিউইয়র্কে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার সঙ্গে বৈঠকে এ কথা বলেছেন তিনি। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (বাংলাদেশ সময় বুধবার) জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনের এক ফাঁকে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
বাসস জানায়, বৈঠকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচন, বেসামরিক প্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন ও সংবিধানে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের সুপারিশ করার জন্য তাঁর অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত ছয়টি কমিশন সম্পর্কে কথা বলেন। তিনি বলেন, কমিশনের সুপারিশ নিয়ে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে। সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্যে উপনীত ও ভোটার তালিকা তৈরি হলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোও নির্বাচনের সময় ও সংস্কার প্রশ্নে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনা চাইছে। তবে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল সংস্কারের প্রস্তাব তৈরির আগেই এই আলোচনা চেয়েছিল। বিএনপি নির্বাচনী রোডম্যাপ তৈরির তাগিদও দিয়ে আসছে। এই প্রেক্ষাপটে নির্বাচন নিয়ে সরকারের অবস্থান জানালেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, সংস্কার শেষ করে তারপর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে, সেটাই প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে এসেছে। কিন্তু সংস্কার কতটা করা হবে, সে বিষয়েই দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা প্রয়োজন। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, একদিকে সংস্কার চাওয়া হচ্ছে, একই সঙ্গে দ্রুত নির্বাচনের চাপ দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের পরিস্থিতি সরকারের ওপর একটা চাপ তৈরি করছে।
নির্বাচন–সম্পর্কিত সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই সরকার সংস্কার ও নির্বাচন তারিখ ঠিক করবে, সেটাই প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে প্রতীয়মান হয়েছে।
সংস্কারে সহায়তার প্রতিশ্রুতি
আইএমএফের প্রধান নির্বাহী সংস্কারের উদ্যোগে সমর্থন জানিয়ে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, আইএমএফ বাংলাদেশ সরকারের জন্য আর্থিক সহায়তা দ্রুততর করবে।
প্রধান উপদেষ্টা ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে বাংলাদেশের পূর্ববর্তী স্বৈরশাসন উৎখাত করা ছাত্র নেতৃত্বাধীন গণ-অভ্যুত্থান সম্পর্কে ব্রিফ করেন। তখন ক্রিস্টালিনা তাঁকে বলেন, ‘এটি একটি ভিন্ন দেশ। এটি বাংলাদেশ ২.০।’
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পরিবহন উপদেষ্টা ড. ফাওজুল কবির খান ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান আইএমএফের প্রধানকে বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার মাত্র এক সপ্তাহ সময়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অপরাধের ‘দুর্গ’ গুঁড়িয়ে দিয়েছে।