দীর্ঘ দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে ফিরতে পারছেন না স্বদেশে। ছোট ভাই মৃত্যুবরণ করলেও শেষবারের মতো তার মুখটিও দেখতে পারেননি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার মা বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দী হয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ দেখা করতে পারেননি তার সাথেও। দলের নেতাকর্মীরা অবর্ণনীয় নির্যাতন, হত্যা, গুম-খুনের শিকার হয়েছেন। বিএনপি, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান তথা জিয়া পরিবারের আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তায় ক্ষুব্ধ ও প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে এসব করেছে পতিত স্বৈরাচার ও পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী প্রধান শেখ হাসিনা ও তার নেতৃত্বাধীন সরকার। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ দেড় দশকের আন্দোলন-সংগ্রামের পর গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়েছে শেখ হাসিনা। এমন পরিস্থিতিতে দেশে যে ধরণের পরিস্থিতির আশঙ্কা করেছিল আওয়ামী লীগ তার ছিটে ফোটাও হয়নি, বরং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কঠোর নির্দেশনা, দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং প্রতিহিংসার পরিবর্তে সহনশীল রাজনীতির কারণে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকে সারাদেশে। সেসময় বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শূণ্য দেশে পাড়া-মহল্লায় পাহাড়া দিয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। সেসময় তারেক রহমানের সেই ভূমিকা সাধারণ মানুষের মাঝে প্রশংসা কুড়িয়েছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার সেই বক্তব্য অসাধারণ, সময়োপযোগী, পরিপক্ক আখ্যা দিয়ে প্রশংসা করছেন নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে আলোচনার বিষয় ছিল তারেক রহমানের সেই বক্তব্য। এমনকি চায়ের দোকানে, বাসে, সাধারণের আড্ডায় তারেক রহমানের বক্তব্যের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন সকলেই।
সাধারণ এসব মানুষের ভাষ্য- বক্তব্যে তারেক রহমান কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ নেই, নেই কোনো অযাচিত বাগাড়ম্বর, করেছেন মার্জিত সমালোচনা, দিয়েছেন দিকনির্দেশনা। যদিও কিছুদিন আগেও ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের আরোপিত বিধিনিষেধের কারনে তিনি ছিলেন অস্পৃশ্য। তার বক্তব্য প্রচার করা যেতোনা দেশে। গত ১৭ বছর সম্মিলিত মিডিয়া ট্রায়াল চলেছে তার বিরুদ্ধে। সরকার যেভাবে তারেক রহমানকে দেখাতে চেয়েছে, যেভাবে উপস্থাপন করেছে জেন-জি’র এই প্রজন্ম তারেক রহমানকে জেনে আসছে সেভাবেই। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে তারেক রহমানের দূরদর্শী, দিকনির্দেশনামূলক, পরিপক্ক বক্তব্য, ইতিবাচক মানসিকতা, সহনশীলতা, ধৈর্য্য, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা শুনে সকলের মনেই নতুন করে জায়গা করে নিয়েছেন নির্যাতিত এই নেতা।
পল্টনের বিশাল জনসমুদ্রে তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা, নারী-শিশু, কৃষক-শ্রমিক সব শ্রেণি পেশার মানুষ বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে জনগণ বন্দুকের সামনে বুক পেতে দিতে রাজি, তবু স্বৈরশাসন মেনে নিতে রাজি নয়। তিনি বলেন, অন্যায়-অনিয়ম আর অরাজকতার বিরুদ্ধে গণবিস্ফোরণে মাফিয়া চক্রের প্রধান দেশ ছেড়ে পালানোর পর তাদের শাসন-শোষণের অবসান ঘটেছে। পতিত স্বৈরাচারের পলায়নের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক ও মানবিক দেশ গড়ার পথে প্রধান বাধা দূর হয়েছে। তবে বাধা দূর হলেও মাফিয়া চক্রের রেখে যাওয়া ১৫ বছরের জঞ্জাল দূর হয়নি।
জনগণের ভোটে জবাবদিহিমূলক একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, মাফিয়া চক্রের বেনিফিশিয়ারি অপশক্তি প্রশাসনের অভ্যন্তরে থেকে কিংবা রাজনীতির ছদ্মাবরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
তারেক রহমান বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে হওয়া গণঅভ্যুত্থানের ফসল। এই সরকারের ব্যর্থতা হবে সবার ব্যর্থতা। গণতন্ত্রকামী জনগণের ব্যর্থতা। সুতরাং অন্তর্বর্তী সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যেই বেশ কিছু ক্ষেত্রে সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। তবে, বিএনপি মনে করে সরকার এজেন্ডা সেটিংয়ে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে না পারলে অভ্যুত্থানের সাফল্য ব্যাহত করতে ষড়যন্ত্রকারী চক্র নানা সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। এর কিছু আলামত ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
দেশে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি ভোটার রয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ভোটার তালিকায় প্রায় আড়াই কোটি নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছে। ভোটার হওয়ার পর তরুণ প্রজন্ম একটি জাতীয় নির্বাচনেও ভোট দেওয়ার সুযোগ পায়নি। দেশের জনশক্তির অর্ধেক নারী এবং তারুণ্যের এই বৃহৎ অংশকে রাজনৈতিক অংশীদারত্বের বাইরে রেখে একটি বৈষম্যহীন মানবিক রাষ্ট্র গঠন সম্ভব নয় বলে মনে করেন তারেক রহমান।
উন্নত এবং নিরাপদ বাংলাদেশের জন্য আরো নতুন রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, এতে দোষের কিছু নেই। কারণ শেষ পর্যন্ত জনগণই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে তারা কাকে সমর্থন জানাবে। এ কারণে বিএনপি বারবার জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার উপর জোর দিয়েছে।
সাংবাদিক সোলাইমান সালমান তারেক রহমানের বক্তব্য শুনে এর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, রাজনৈতিক দলের প্রধানের বক্তব্য কেমন হওয়া উচিত তা আমরা এতোদিন ভুলতে বসেছিলাম। কিন্তু তারেক রহমানের বিগত কিছু দিনের বক্তব্য শুনে অবাক হচ্ছি উনি কি সুন্দর দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন, ভবিষ্যত চিন্তা-ভাবনা তুলে ধরছেন। এমন পরিপক্ক বক্তব্য নিকট অতীতে কোন নেতার কাছ থেকে শুনিনি।
পুরানা পল্টনে চায়ের দোকানে আড্ডারত দোকানি রবিউল ও মানিক একে অপরের সঙ্গে আলাপচারিতায় তারেক রহমানের বক্তব্যের প্রশংসা করে বলেন, ইউটিউবে তারা বক্তব্য শুনেছেন। অসাধারণ লেগেছে সেই বক্তব্য। কারো সম্পর্কে সেই বক্তব্যে কোন নেতিবাচক, খারাপ কথা বলেননি, নিজ দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক করেছেন, বর্তমান সরকার নিয়েই তিনি অত্যন্ত ইতিবাচক কথা বলেছেন। যা আগের সরকার প্রধান ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে উনার মন-মানসিকতা, চিন্তা-চেতনার পার্থক্য বুঝিয়ে দিয়েছেন। তারেক রহমানের বক্তব্যের একই রকম প্রশংসা শোনা যায় রাজধানীর আরো বেশকিছু চায়ের দোকানে, রিক্সা চালক থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মুখে।
সেদিন দেশের প্রায় সবকটি চ্যানেলে সরাসরি প্রচারিত হয় তারেক রহমানের বক্তব্য। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াগুলো তাদের ইউটিউবে ও ফেসবুক পেইজে আলাদা ভিডিও প্রচার করেছে। সেসব কমেন্ট ও বিভিন্ন পত্রিকার অনলাইন ভার্সনের কমেন্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তারেক রহমানকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন বিএনপির সমালোচকরাও। সামাজিক মাধ্যমে লিটন লিখেছেন, কি চমৎকার বক্তব্য, কারো সমালোচনা নেই। এটাই তো পার্থক্য। মৃনাল কান্তি লিখেছেন, নেতা এমনই হওয়া উচিৎ। দয়া করে পরিবর্তন হবেন না। সাইফুদ্দিন লিখেছেন, এবারে আমার বিশ্বাস হচ্ছে দেশের জন্য সত্যিই কিছু করবে বিএনপি। মনির হোসাইন লিখেছেন, তারেক রহমানের বক্তব্য সময়ের সাথে সাথে অনেক পরিপক্ক হয়েছে। আরিফুল ইসলাম লিখেছেন, তারেক রহমানের বক্তব্যের বেশকিছু অংশ অনেক সময়োপযোগী এবং জনগণের কণ্ঠের প্রতিধ্বনি হয়েছে। ধন্যবাদ।