দ্যা নিউ ভিশন

এপ্রিল ৯, ২০২৫ ০৪:৪৩

বাম রাজনীতি থেকে যেভাবে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা হয়ে ওঠেন আবদুল্লাহ আল নোমান

আবদুল্লাহ আল নোমান

বড় ভাই ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের নেতা। পরে তিনিও সেই সংগঠনে যুক্ত হয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ছাত্রজীবন শেষে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর হাত ধরে সক্রিয় হন শ্রমিক রাজনীতিতে। গোপনে ভাসানীপন্থী ন্যাপের রাজনীতিতে জড়িত হন। একাত্তরের রণাঙ্গনের এই মুক্তিযোদ্ধা ১৯৮১ সালে যোগ দেন বিএনপিতে। এরপর একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন সরকারের মন্ত্রিসভায়।

চট্টগ্রামের বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদের নাম আবদুল্লাহ আল নোমান। আজ মঙ্গলবার সকালে বিএনপির ভাইস এই চেয়ারম্যান ঢাকায় ইন্তেকাল করেছেন। রাজনৈতিক ঘরানার বাইরেও চট্টগ্রামে সব দলমতের মানুষের কাছে শ্রদ্ধার আসনে ছিলেন তিনি। অর্ধশতাব্দীর বেশি তাঁর রাজনীতির বয়স।

চট্টগ্রামে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম নোমান। দীর্ঘদিন চট্টগ্রামে বিএনপির রাজনীতির নেতৃত্বও ছিল তাঁর হাতে। মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার প্রায় সব জায়গায় ছিল তাঁর নেতৃত্ব। এসব এলাকায় তাঁর অনুসারীরাই নেতৃত্বের আসনে থাকতেন সব সময়। তাঁকে ছাড়া চট্টগ্রামে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচিও একসময় যেন ছিল অকল্পনীয়।

নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামে জন্ম নেওয়া আবদুল্লাহ আল নোমানের বড় ভাই আবদুল্লাহ আল হারুন ছিলেন চট্টগ্রামে ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ষাটের দশকের শুরুতে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে নোমান যোগ দেন ছাত্র ইউনিয়নে। মেননপন্থী ছাত্র ইউনিয়নের চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক, বৃহত্তর চট্টগ্রামের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

ছাত্রজীবন শেষ করে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর হাত ধরে যোগ দেন শ্রমিক রাজনীতিতে। পূর্ববাংলা শ্রমিক ফেডারেশনের সহসভাপতি ছিলেন। ১৯৭০ সালে তাঁকে ন্যাপের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। যুদ্ধ শেষে আবারও ন্যাপের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন। জিয়াউর রহমান বিএনপি গঠনের পর ১৯৮১ সালে যোগ দেন দলটিতে।

আবদুল্লাহ আল নোমান চট্টগ্রামের কোতোয়ালি আসন থেকে এ পর্যন্ত বিএনপির হয়ে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৯১, ১৯৯৬ (১৫ ফেব্রুয়ারি) ও ২০০১ সালে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর মধ্যে ১৯৯১ সালে তাঁকে সরকারের মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার গঠনের পর বিভিন্ন মেয়াদে তিনি খাদ্যমন্ত্রী, শ্রম ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী এবং বন ও পরিবেশমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।

এক–এগারোর সময় বিদেশে ছিলেন আবদুল্লাহ আল নোমান। ফিরে আসার পর দলে কোণঠাসা হয়ে পড়েন; সঙ্গে যোগ হয় শারীরিক অসুস্থতা। সরকারবিরোধী আন্দোলনের চলমান কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২০২৩ সালের ১২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় গণসমাবেশে দেখা যায়নি তাঁকে। প্রথমবারের মতো চট্টগ্রামে বিএনপির বড় কোনো কর্মসূচিতে তাঁর অনুপস্থিতি তখন নেতা-কর্মী ও বিএনপির সমর্থকদের হতাশ করে।

নোমানের অনুসারী নেতা-কর্মীরা জানান, সরকার পতনের আন্দোলনের কর্মসূচিতে অসুস্থ শরীর নিয়ে অংশগ্রহণ করেছেন নোমান। তবে নানা কারণে তাঁর অভিমানও ছিল। তাঁর হাত ধরে রাজনীতিতে আসা অনেকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ শীর্ষ পদে অবস্থান করলেও সেভাবে নোমানের মূল্যায়ন হয়নি দলে।

দীর্ঘদিন আবদুল্লাহ আল নোমানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সাত্তার। তিনি আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেহনতি মানুষের নেতা ছিলেন নোমান ভাই। চট্টগ্রামসহ বিএনপির রাজনীতিতে তাঁর শূন্যতা কখনো পূরণ হবে না। মাটি ও মানুষের এই নেতা মানুষের মনে থাকবেন অনন্তকাল।’

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, আজ বিকেলে নগরের কাজীর দেউড়িতে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল আবদুল্লাহ আল নোমানের। কিন্তু আর হয়ে ওঠেনি। এ জন্য সমাবেশ স্থগিত করা হয়েছে। আবদুল্লাহ আল নোমানের শূন্যতা দলে কখনো পূরণ হবে না।

আবদুল্লাহ আল নোমানের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে থাকা নুরুল আমিন জানিয়েছেন, আজ ঢাকার একাধিক স্থানে কয়েক দফায় জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। আগামী শুক্রবার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজানের গহিরায় আবদুল্লাহ আল নোমানের জানাজা হবে। এরপর তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফনের কথা রয়েছে।

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ

ছাত্রদলের অনুষ্ঠানে শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি, ঐক্যবদ্ধভাবে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার আশা

ছাত্রশিবির, ছাত্রদলসহ যাঁরা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছেন, তাঁরা ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী