বর্তমান সরকারকে এ দেশের ছাত্র-জনতা, রাজনৈতিক দলগুলো সবাই মিলেই ক্ষমতায় বসিয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমাদের অনেক প্রত্যাশা ছিল, যেসব জায়গায় সংস্কার প্রয়োজন, সেগুলো শেষ করে বর্তমান সরকার দ্রুত সবার ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেবে। কিন্তু এখন নতুন খেলা শুরু হয়েছে। কিছু কিছু দল বলছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে হবে। তাদের অনুরোধ করে বলতে চাই, দেশকে আর ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবেন না, নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেবেন না।’
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সহনীয় পর্যায়ে রাখা, অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, দ্রুত গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে উত্তরণের জন্য নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা, রাষ্ট্রের পতিত ফ্যাসিবাদের নানা চক্রান্তের মোকাবিলাসহ নানা দাবিতে আয়োজিত এক সমাবেশে এ কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব। ধামরাই উপজেলার যাত্রাবাড়ি মাঠে সোমবার বেলা দুইটার দিকে ঢাকা জেলা বিএনপি এ সমাবেশের আয়োজন করে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘প্রথম থেকে বলেছি, সহযোগিতা করেছি। সংস্কারের যতগুলো প্রস্তাব এসেছে, আমরা দেখছি, সেগুলো নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। সবাইকে মনে রাখতে হবে, এই সুযোগ যে আমরা পেয়েছি, এটাকে যেন আমরা হেলায় না হারাই, আমাদের শত্রুরা বিভিন্ন টোপ ফেলছে, ট্র্যাপ করছে, যাতে আমরা উত্তেজিত হয়ে যাই। আইনশৃঙ্খলা নষ্ট করি, নিজে হাতে সব তুলে নিই। কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। সবাইকে সহযোগিতা করে দেশকে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে হবে।’
যেকোনো বিষয়ে মানুষ রাস্তায় নামে, রাস্তা বন্ধ করে দেয়, এটা দায়িত্বশীলতার কাজ নয় বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটা ফ্যাসিস্টকে সরানো হয়েছে। সরকার আসছে, আমরা সরকারের সব বিষয়ে সমর্থন করি না, তাকে আমরা কিন্তু ব্যর্থও হতে দিতে চাই না। আমরা চাই, এই সরকারই যেন নির্বাচনকে সম্পন্ন করতে পারে। তাকে আমরা ব্যর্থ হতে দিতে চাই না। সহযোগিতা করতে চাই।’
গত ১৫ বছরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন ও ভোগান্তির কথা তুলে ধরে দলের মহাসচিব বলেন, হাসিনা সরকার, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে এই দেশ থেকে রাজনীতিকে চিরতরে নির্বাসিত করার জন্য, শুধু তাঁর দল থাকবে, আর কোনো দল থাকবে না, এভাবে পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল। রাষ্ট্রের সব ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে, সব ইনিস্টিটিউশন ধ্বংস করেছে, সবচেয়ে আগে ধ্বংস করেছে নির্বাচনব্যবস্থা। ২০১৪ সালে ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করে সরকার ঘোষণা করেছে। ভোটকেন্দ্রগুলোতে কুকুর ঘোরাঘুরি করেছে। শফিউল আলম প্রধান তখন বলেছিলেন, ‘কুত্তামার্কা নির্বাচন’।
রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙচুর শেখ হাসিনার অন্যায়ের ফল বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কিছুদিন আগে চোখে পড়ল, ফ্যাসিস্ট হাসিনা কান্না করতে করতে বলছে, “আমার বাবার বাড়িটা ৩২ নম্বরে আমরা দিয়েছিলাম, জাদুঘর করেছিলাম, সেটাকে পর্যন্ত ধুলায় মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেন, কী আমার অপরাধ।” অপরাধ? এটাই তো আপনি বুঝতে পারছেন না হাসিনা। আপনার কী অপরাধ? আপনি একটা জাতিকে ধ্বংসের চক্রান্ত করেছেন। আপনি একটা জাতির অধিকারকে ধ্বংস করেছেন। আপনি দেশকে বিক্রি করে দিয়েছেন। ধর্মকে ধ্বংস করতে চেয়েছেন। ইতিহাসকে বিকৃত করেছেন।’
সমাবেশ উপলক্ষে বেলা একটার পর থেকে ধামরাই, সাভারসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন। এতে করে বেলা দুইটা পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়।
বেলা দুইটার দিকে ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুন রায় চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদ (টিটু) ও নজরুল ইসলাম (আজাদ)।
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সহপরিবার কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন (বাবু), বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ধামরাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি তমিজ উদ্দিন, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সামছুল ইসলাম, ঢাকা জেলা যুবদলের সভাপতি ইয়াসিন ফেরদৌস (মুরাদ), সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব খান, ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান, সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান মোহন প্রমুখ।