বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দেশের মানুষের প্রত্যাশা হচ্ছে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেওয়া। আমাদেরও প্রত্যাশা, এই কাজ যত দ্রুত সম্ভব সেটি করুন। আর সেই নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল দেশের মানুষের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করতে সমর্থ হলে আমাদের প্রধান ও জরুরি কাজ হবে দেশ পুনর্গঠন করা।’
আজ শনিবার দুপুরে যশোর জেলা বিএনপির সম্মেলনে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এসব কথা বলেন। যশোর কেন্দ্রীয় ঈদগাহে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
তারেক রহমান তাঁর বক্তব্যে বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছরের সফল আন্দোলন–সংগ্রামের ফসল জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে খুনি-লুটেরা স্বৈরাচার দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। ওই সরকার অস্ত্রের জোরে ক্ষমতায় ছিল। বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী যারা সম্পদ লুটতরাজের বিরুদ্ধে কথা বলেছিল, দেশের মানুষের অধিকারের কথা বলেছিল, গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলেছিল, কথা বলার অধিকারের কথা বলেছিল, তাদের অনেককে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। অত্যাচারের শিকার হতে হয়েছে।
এ সময় সংস্কারের প্রসঙ্গ তুলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আজ অনেকেই সংস্কারের ভালো ভালো কথা বলছেন, বলতেই পারেন। কেননা আপনারা দেশ নিয়ে ভাবেন, দেশের কল্যাণ নিয়ে ভাবছেন। কিন্তু বিএনপির সঙ্গে তাঁদের পার্থক্য হচ্ছে, অন্যরা আজ যে সংস্কারের কথা বলছেন, বিএনপি সেই সংস্কারের কথা আজ থেকে আড়াই বছর আগে ৩১ দফার মাধ্যমে দেশবাসীর সামনে উপস্থাপন করেছে। বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শত শত নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষকে গুম-খুনের মাধ্যমে স্বৈরাচার যখন ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রেখেছিল, সেই সময় তাদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে তাদের বলেছে, “তোমরা দেশকে ধ্বংস করেছ, আমরা দেশকে পুনর্গঠন করব।” আজ অনেক ব্যক্তির কাছ থেকে সংস্কারের সুন্দর সুন্দর কথা শোনা গেলেও সেদিন তাঁদের কাছ থেকে সংস্কারের কোনো কথা শুনতে পাইনি।’
রাষ্ট্র পুনর্গঠনের বিষয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য হলো এই দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন। কোটির কাছাকাছি বেকারদের কর্মসংস্থান, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের খাল কাটা কর্মসূচি আবার চালু করা। এর মাধ্যমে কৃষকের সেচের পানির ব্যবস্থা করা। শুকিয়ে যাওয়া খাল-বিলে যাতে আবারও পানিপ্রবাহ শুরু হয়। আমাদের আগামীর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি দৃঢ় শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা, যাতে শিক্ষার সুযোগ তাদের কাছে পৌঁছে যায়। নারীর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি, যাতে তাদের ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পায়। এ দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন, যাতে চিকিৎসাসেবা নিতে আর কাউকে বিদেশে যেতে না হয়। দেশে থেকেই যেন তারা স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারে।’
বিএনপি একটি বিশাল দল উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, এই সম্মেলনে ১ হাজার ৬১৬ জন কাউন্সিলর, এঁদের মধ্যে এমন কাউকে পাওয়া যাবে না, যাঁদের বিরুদ্ধে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দেয়নি। দলের ৬০ লাখ নেতা-কর্মীর নামে এ রকম মিথ্যা ও গায়েবি মামলা রয়েছে। লাখ লাখ নেতা-কর্মীর মধ্যে সবাই সমান না উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, হয়তো কেউ কেউ বিভ্রান্ত হয়ে এমন কাজ করেছেন, যার নৈতিক কোনো ভিত্তি নেই। দল হিসেবে বিএনপির সেই সব নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা নিয়েছে। আর এটি কেবল বিএনপির দ্বারাই সম্ভব। এই নিয়ে কেউ কেউ দলের দুর্বলতা হিসেবে চিহ্নিত করে অন্য কিছু হাসিল করতে চাইছেন। তাঁদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ‘বিএনপি তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে। কেননা জনগণের দল বিএনপি মনে করে, আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে জনগণের সম্মতিতে থাকা। অর্থাৎ জনগণের সমর্থন থাকে, এমন অবস্থানে থাকা।’
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নার্গিস বেগম সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে দলের খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) অনিন্দ্য ইসলাম, কেন্দ্রীয় নেতা জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, অমলেন্দু দাস, সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান, কেন্দ্রীয় সদস্য টি এস আইয়ুব, আবুল হোসেন আজাদ, সাবিরা নাজমুলসহ দলের বিভিন্ন উপজেলা কমিটির নেতা, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দলের নেতারা বক্তব্য দেন।