দ্যা নিউ ভিশন

নভেম্বর ২৪, ২০২৪ ২০:০৫

টাকা পাচার করে হাসিনা ও তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা দেশকে ফোকলা করে গেছে: জোনায়েদ সাকি

রাজশাহী জেলা গণসংহতি আন্দোলন আয়োজিত এক নাগরিক গণসংলাপে বক্তব্য দেন জোনায়েদ সাকি। আজ শনিবার দুপুরে

আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে অন্তত ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্থ পাচার হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ও তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা এই দেশকে ফোকলা করে দিয়ে গেছে।

আজ শনিবার দুপুরে রাজশাহী নগরের সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে জেলা গণসংহতি আন্দোলন আয়োজিত এক নাগরিক গণসংলাপে জোনায়েদ সাকি এ কথা বলেন

জোনায়েদ সাকি বলেন, এই রাষ্ট্র কতিপয়ের ছিল। শেখ হাসিনার এস আলম গ্রুপ একাই ১০ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। সাত বিলিয়ন তাঁর আরও ঘনিষ্ঠজনেরা পাচার করেছেন। অন্ততপক্ষে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি পাচার হয়েছে। এই দেশের অর্থনীতির আকার ৫০০ বিলিয়ন ডলার। সেখানে ১০০ বিলিয়ন ডলার পাচার করা হলে আর কী থাকে। জমি দখল, ব্যবসা-বাণিজ্য দখল, উন্নয়নের নামে লুটপাট, বিদেশে টাকা পাচার এই ছিল ফ্যাসিস্ট সরকার।

জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘পুরো রাষ্ট্রে তারা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। আর লুটের ভাগ-বাঁটোয়ারা করেছে। এই ব্যবস্থা টিকিয়ে রেখে তারা মনে করেছিল, এটা তাদের চিরস্থায়ী ব্যবস্থা। তারা ভেবেছিল ছাত্রদেরও দমিয়ে রাখা যাবে। ১৪ জুলাই ছাত্রদের অপমান করল। তাদেরকে রাজাকার বলা হলো। মানুষের জীবনের চেয়ে মানুষের সম্মান বড়। যখন সম্মানে আঘাত লাগে, তখন জীবন দিতে প্রস্তুত থাকে। ছাত্রছাত্রীরা বেরিয়ে এসে জবাব দিয়ে দিয়েছে। ছাত্ররা থেমে থাকেনি। আমাদের তরুণেরা জীবন দিয়েও এই দেশের মর্যাদা রক্ষা করতে পারে, তার প্রমাণ জুলাই গণ-অভ্যুত্থান। শেখ হাসিনা গণহত্যা চালিয়েও তাঁর ক্ষমতা রাখতে পারেননি।’

গণসংহতি আন্দোলনের সংগঠক মহব্বত হোসেন ও নাদিম সিনার সঞ্চালনায় রাজশাহী জেলা গণসংহতি আন্দোলনের আহ্বায়ক মুরাদ মোর্শেদ নাগরিক গণসংলাপে সভাপতিত্ব করেন।

গণসংলাপে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘২০১৮ সালের ভোট ডাকাতির পর বিএনপির মতো একটি বড় রাজনৈতিক দল উপলব্ধি করেছে, এই রাষ্ট্রব্যবস্থা বহাল রেখে আর একটিও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। তারাও রাষ্ট্রব্যবস্থা মেরামতের ২৭ দফা ঘোষণা করেছিল। ৩১ দফা যুগপত আন্দোলনের কর্মসূচি এসেছে। আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, এই বন্দোবস্ত একটি ফ্যাসিবাদ বন্দোবস্ত। এটা কতিপয় লুটপাটকারীর বন্দোবস্ত। তারা শুধু টাকা পাচার করেছে। তাই নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ততে পৌঁছাতে হবে। আমরা আনন্দিত এই জন্য যে আজকে ছাত্ররাও এই দাবি তুলেছে। অভ্যুত্থানের আগে শিক্ষার্থীরা এক দফার ঘোষণা করে বলেছিল, তারা ফ্যাসিবাদ সরকারের পদত্যাগ চায়, ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থার বিলোপ চায়। এই সংবিধান, আইনকানুন সবকিছু ফ্যাসিস্ট। এগুলোর সবকিছু সংস্কার করতে হবে। এ জন্য একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্ত দরকার। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানও বলেছেন, আমাদেরকে একটা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে যেতে হবে।’

রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান কলুষিত করা প্রত্যেককে বিচারের আওতার আনার দাবি জানিয়ে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘একটা সরকার তার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানকে কলুষিত করেছে। যেসব কর্মকর্তা এটা করেছেন, তাঁদের প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনতে হবে। প্রত্যেকের কাছে বার্তা থাকা দরকার, কোনো সরকারি কর্মকর্তা যদি কোনো অবৈধ সরকারের পা চেটে দেশকে বিপর্যয়ের দিকে নেন, এটা সবার খেয়াল রাখা দরকার। রাষ্ট্রটা এ কারণে বদল দরকার। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো তরুণেরা ’৫২ সালে, ’৬৯ সালে, ’৭১ সালে ও ৯০ সালে রক্ত দিয়েছে কিন্তু জন-আকাঙ্ক্ষা পরে আর থাকেনি।’

’৭২ সালের সংবিধানে ৭১-এর জন-আকাঙ্ক্ষাকে অস্বীকার করা হয়েছে দাবি করে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘সবকিছু বেহাত হয়ে যেতে পারে। আমরা নব্বই আন্দোলনের একজন কর্মী। কিন্তু দেখেছি কীভাবে তা বেহাত হয়েছে। কিন্তু অন্য অভ্যুত্থানের চেয়ে ’২৪-এর আন্দোলনের একটি অন্তত পার্থক্য রয়েছে। আমাদের ৫৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান সংকটের মূল উৎস এই সংবিধান, সেটাকে চিহ্নিতই করতে পারেনি। কিন্তু ’২৪ সালে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা, রাজনৈতিক দল মনে করেছে এই রাষ্ট্রটাকে বদলাতে হবে। ’৭২ সালে যে সংবিধান করা হয়েছে, সেখানে ’৭১-এর মানুষের জন-আকাঙ্ক্ষাকে অস্বীকার করা হয়েছে। এই সংবিধান মানেই হলো যিনিই প্রধানমন্ত্রী হোক, তিনিই সব জবাবদিহির ঊর্ধ্বে। তিনি সংবিধানের ঊর্ধ্বে। রাষ্ট্র তার পকেটে থাকে। যার প্রমাণ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। ’৭৫ সালেও বাকশাল হয়েছিল। ’৭৫-এর বাকশাল ছিল ’৭২-এর সংবিধানের ধারাবাহিকতায়। ’৭২-এর ক্ষমতাকাঠামো অনিবার্য করে তুলেছে ’৭৫-এর বাকশালকে। একইভাবে শেখ হাসিনাকেও।’

নাগরিক গণসংলাপে আরও বক্তব্য দেন সাংগঠনিক সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জুলহাসনাইন বাবু, রাজশাহী জেলার সদস্যসচিব জুয়েল রানা, নদীগবেষক ও লেখক মাহবুব সিদ্দিকী, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়ক মাহমুদ জামান কাদেরী, জাতীয় নদী বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি এনামুল হক প্রমুখ।

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ