নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মতামত ও প্রস্তাব চাইবে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। লিখিত মতামত চেয়ে শিগগিরই দলগুলোর কাছে চিঠি দেওয়া হবে। তবে আওয়ামী লীগ ও তাদের জোটসঙ্গীদের কাছ থেকে মতামত নেওয়া হবে না। কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন দু-এক দিনের মধ্যে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ ২২টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে মতামত চেয়ে চিঠি দেবে। কোন কোন দলের কাছ থেকে মতামত চাওয়া হবে, সে বিষয়ে ওই কমিশনকে সরকারের দিক থেকে একধরনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এখন নির্বাচন কমিশনে আওয়ামী লীগসহ ৪৮টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধিত আছে। নিবন্ধিত সব দলকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে না। আবার নিবন্ধিত নয়, এমন কোনো কোনো দলও চিঠি পাবে। অবশ্য চাইলে এর বাইরে যেকোনো দল, সংগঠন বা ব্যক্তি সংস্কার বিষয়ে তাদের মতামত বা প্রস্তাব দিতে পারবে। ডিজিটাল মাধ্যমে সবার মতামত ও প্রস্তাব দেওয়ার সুযোগ আছে।
সংস্কার কমিশন রাজনৈতিক দলসহ সবার মতামত চায়। যাতে একটি যুগোপযোগী ও কার্যকর নির্বাচনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় সুপারিশমালা তৈরি করা যায়।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের প্রায় দুই মাস পর গত ৩ অক্টোবর নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। এই কমিশন মূলত নির্বাচনসংশ্লিষ্ট আইন-বিধিগুলো পর্যালোচনা করছে। পাশাপাশি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের বিষয়ে মানুষের মতামত নিচ্ছে। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ, মেসেঞ্জার এবং ই-মেইলে মতামত দেওয়া যাচ্ছে। ২২ অক্টোবর মতামত নেওয়া শুরু হয়। ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত মতামত দেওয়া যাবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট মতামত ও প্রস্তাব নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো আলোচনা বা সংলাপ করবে না সংস্কার কমিশন। তাদের কাছ থেকে শুধু লিখিত মতামত বা প্রস্তাব নেওয়া হবে। এ ছাড়া সাবেক নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, সাংবাদিকসহ কিছু অংশীজনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করবে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। সাবেক তিনজন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে আলোচনা করার কথা রয়েছে কমিশনের। তবে এর মধ্যে গত তিনটি নির্বাচন কমিশনের কেউ নেই। আগামীকাল একজন সাবেক সিইসির সঙ্গে আলোচনায় বসবে সংস্কার কমিশন।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, সংস্কার কমিশন রাজনৈতিক দলসহ সবার মতামত চায়। যাতে একটি যুগোপযোগী ও কার্যকর নির্বাচনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় সুপারিশমালা তৈরি করা যায়।
আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রস্তাব জমা দেবে কমিশন। এরপর সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রস্তাব তৈরির ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয় পর্যালোচনা করবে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। ইতিমধ্যে সংবিধানের নির্বাচনসংক্রান্ত বিধান, জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সব আইন ও বিধি, নির্বাচনসংক্রান্ত সব ফরম পর্যালোচনা করছে কমিশন।
বিদ্যমান নির্বাচনপদ্ধতি, নির্বাচন পরিচালনা ব্যবস্থা, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ এবং প্রবাসী ও নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় আইন ও কারিগরি দিকও পর্যালোচনা করছে সংস্কার কমিশন। তারা বাংলাদেশে অতীতে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনগুলো মূল্যায়ন করে নির্বাচনের দুর্বলতা ও শিক্ষণীয় বিষয়গুলোও চিহ্নিত করবে।
বিভিন্ন দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া পর্যালোচনা এবং শিক্ষণীয় দিকগুলো চিহ্নিত করার কাজও করবে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। এ ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের সুপারিশও থাকবে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, মাঠ প্রশাসন ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিবন্ধকের কার্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের লক্ষ্যে প্রস্তাবনা তৈরি করা হবে। এ বিষয়গুলো সংস্কার কমিশনের কার্যপরিধির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।