আওয়ামী লীগসহ ১১টি দলকে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে অনুমতি না দিতে অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনা চেয়ে গতকাল সোমবার উচ্চ আদালতে যে রিট হয়েছিল, সেখানে দলের তালিকায় কর্নেল (অব.) অলি আহমদের লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং সিপিবি ও বাসদের নাম দেখে ‘বিব্রত’ হয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। এখন একটি সুন্দর প্রক্রিয়ায় ‘গুছিয়ে’ রিট করার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতাদের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নাসীরুদ্দীন এ কথা বলেন। এর আগে অবশ্য রিট আবেদনকারীদের (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন নেতা) আইনজীবী আহসানুল করিম গতকালের ওই দুটি রিট না চালানোর কথা জানিয়েছেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘যে রিট করা হয়েছে, তার বেসিক প্রশ্নটা ছিল বিগত তিনটি নির্বাচন অবৈধ হবে কি হবে না৷ কিন্তু এখানে আরও অনেকগুলো বিষয় এসেছে। যাঁরা রিটটা করেছেন, তাঁদের কনসেনট্রেশনের (মনোযোগ) ঘাটতি ছিল। তাই আমরা তাঁদের রিটটা বাতিল করতে বলেছি।’
এই রিটের বিষয়ে তাঁদের কোনো ফোরামে কোনো আলোচনাই হয়নি বলে জানান নাসীরুদ্দীন। তিনি বলেন, ‘যাঁরা রিট করেছেন, তাঁরাও আশ্চর্য হয়েছেন, কীভাবে সেখানে দুটি দলের নাম এসেছে। আইনজীবীর কাছে তাঁরা এর ব্যাখ্যা চেয়েছেন। আইনজীবীকে এর ব্যাখ্যা দিতে হবে। দলের লিস্টে কর্নেল অলি আহমদ, সিপিবি-বাসদের নামগুলো আমাদের বিব্রত করেছে। সেই জায়গা থেকে তাঁদের সঙ্গে কথাবার্তা ও আলোচনা করে সবকিছু হওয়া উচিত ছিল বলে আমরা মনে করি। যেহেতু এটা হয়নি, আমরা দায়িত্ব নিয়েছি, রিট হোক, যা-ই হোক, সবকিছু যাতে একটা সুন্দর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আগায়।’
বিগত তিনটি নির্বাচন রিটের কেন্দ্রীয় বিষয় ছিল জানিয়ে নাসীরুদ্দীন বলেন, ‘কিন্তু এখানে আইনজীবী বা যাঁরা রিট করেছেন, তাঁদের কোনো ভুল–বোঝাবুঝি হয়ে থাকতে পারে৷ দ্বিতীয়ত, এ বিষয়ে আরও ভাবা উচিত ছিল।’
রিটের বিষয়টি নিয়ে গতকাল রাতে বৈঠকে বসেছিলেন বলে জানান নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী৷ তিনি বলেন, ‘আমরা আরও বৈঠক করব যে কীভাবে একটি সুন্দর প্রক্রিয়ায় গুছিয়ে রিটটা করা যায়। যাতে এ ধরনের রিটকে খারিজ বা বাদ দেওয়ার যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, এই পরিস্থিতিতে আমাদের না পড়তে হয়।’
এ সময় ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া নিয়েও সমালোচনা করেন নাসীরুদ্দীন। তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের যে বিষয়টা এসেছে, যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেখানেও আমরা ক্রিটিক করেছি। একটা তদন্ত কমিশন বা গণকমিশনের মাধ্যমে এই বিষয়গুলো…৷ আমরা যে দাবিগুলো জানিয়েছিলাম, সেগুলোর ব্যাপারে আমরা ঐক্যবদ্ধ। কিন্তু কী প্রক্রিয়ায় হচ্ছে, সেই প্রক্রিয়াগুলো আমাদের দেখিয়ে দিচ্ছে যে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা এখনো বিরাজমান। সবাই যাতে ন্যায়বিচার পায়, সেই প্রক্রিয়ার দিকে আমাদের যেতে হবে। এটা জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদেরই আকাঙ্ক্ষা।’
বৈঠকের পর বাম গণতান্ত্রিক জোটের আলাদ ব্রিফিংয়েও রিটের প্রসঙ্গটি ওঠে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স) বলেন, গতকাল থেকে রিট নিয়ে কথা হচ্ছে। আমরা মনে করি, এটা বাংলাদেশের নীতিনিষ্ঠ রাজনীতি ও বাম আন্দোলনের প্রতি একটা আঘাত। এ ধরনের আঘাত সম্পর্কে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। কোনো অপশক্তি বামপন্থীদের নীতিনিষ্ঠ জায়গা থেকে সরাতে পারবে না।