যৌক্তিক সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন না হলে বিএনপি ঘরে বসে চিনাবাদাম খাবে না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেছেন, যৌক্তিক সময় অতিক্রান্ত হলে জনগণনির্ভর বিএনপি অবশ্যই ঘরে বসে থাকবে না।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মুহাম্মদ আকরম খা হলে জাগ্রত বাংলাদেশের উদ্যোগে ‘দেশে বর্তমান প্রেক্ষাপটে অন্তবর্তীকালীন সরকার ও রাজনৈতিক দলের করণীয়’ শীর্ষক এ আলোচনা সভা হয়। এতে বক্তব্য দেন গয়েশ্বর রায়।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা কী চাই? শুধু একটা অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশের মালিক জনগণ ভোট দিয়ে একটি সংসদ ও সরকার গঠন করবে। এটাই তো বিপ্লবের মূল বক্তব্য। এ কারণে ওনাদের মতো(অন্তবর্তীকালীন সরকারের) জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’
নির্বাচন করার জন্য যতটুকু সময় দরকার, সেই সময়টুকু বিএনপি দেবে বলে উল্লেখ করে গয়েশ্বর রায় বলেন, সেই সময় অতিক্রান্ত হলে জনগণনির্ভর বিএনপি অবশ্যই ঘরে বসে চিনাবাদাম খাবে না। প্রকৃত বাস্তবতায় যেটা করার, সেটা ভবিষ্যতে করব।
গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘আপাতত আমরা কিছুদিন দেখি। তারপর যা করিয়াছি অতীতে, ভবিষ্যতে তা–ই করিব। মৃত্যুর পরোয়ানা আমাদের কাছে বড় না। মরতে যখন প্রস্তুত আছি, মারতে আমাদের কেউ পারবে না।’
‘কিছু দলের কর্মকাণ্ডে মনে হয় ক্ষমতায় গেছে’
কোনো রাজনৈতিক দলের নাম উল্লেখ না করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘কিছু রাজনৈতিক দল আছে, তাদের কর্মকাণ্ড দেখলে মনে হয়—ক্ষমতায় আসছে…তাদের মাপটাই অন্য রকম। তাদের নাম নাইবা বললাম।’
একই সঙ্গে গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘তারা নির্যাতিত নিঃসন্দেহে। তবে এ দেশটা স্বাধীন করে নাই, আমরা করেছি। যারা স্বাধীন করেছে, তারা বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী এবং এই স্বাধীনতার নেতৃত্ব ও যুদ্ধের আহ্বান, স্বাধীনতার আহ্বান করেছিলেন সেই জিয়াউর রহমান…দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তিনিই।’
গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ নেওয়া এই সরকারের দায়িত্ব আছে বলে আমার মনে হয় না। দেখি মাঝেমধ্যে কিছু লোক যায়–আসে। তারা একটু পুলকিত হয় যে এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সাথে ছবি তোলে। আমাকে অনেকে জিজ্ঞাসা করে, আপনাকে দেখার মতো অবস্থা হয় নাই, না দেখাই ভালো।’
নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে
গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘যা–ই করেন….আফটার এফেক্ট কী হবে…, কাজকে ঘৃণা করেন, জাতিকে নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘যারা এখনো বিভিন্ন সংগঠনের নামে অত্যাচার করছে, মানুষ খুন করছে, লুট করছে, তারা তো আরামেই আছে। তাদের ঘরে ঘরে বিচার করেন। অর্থাৎ অন্যায় করলে তার পরিণাম কী হয়, দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। এতগুলো লোক সীমান্ত অতিক্রম করল, এতগুলো লোক দেশ-বিদেশে গেল…. কার বদৌলতে? কে তাদের পালাতে উৎসাহিত করেছে, সাহায্যে করেছে, এর জবাব কে দেবে?’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো কেন এখনো প্রত্যাহার হয়নি, তা নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে প্রশ্ন রাখেন গয়েশ্বর রায়। তিনি বলেন, ‘কেন এখনো দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাগুলো প্রত্যাহার হয়নি। সে জন্য বলছি, সরকার বদলে গেছে, কিন্তু তুমি আমি একই আছি…কাছে আর দূরে।’
দেশে যাতে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির এই নেতা।
‘জাগ্রত বাংলাদেশ’–এর সভাপতি জহিরুল ইসলাম কলিমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, নির্বাহী কমিটির সদস্য আলমগীর হোসেন, জাগ্রত বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোজাম্মেলন হোসেন শাহীন প্রমুখ বক্তব্য দেন।