রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি ও স্রোতের গতি বাড়ায় গত তিন দিন ধরে ভাঙন শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় দুটি বসতভিটা ও ২০ একর কৃষিজমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। গতকাল রোববার চারটি পরিবার অন্যত্র সরে গেছে। ভাঙনের আতঙ্কে পদ্মাপারের মানুষ রাতে ঘুমাতে পারছেন না।
গতকাল বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, গোয়ালন্দের দেবগ্রাম ইউনিয়নের দেবগ্রাম ও কাওয়ালজানি এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। পদ্মার পানি বাড়ার সঙ্গে স্রোত বৃদ্ধি পাওয়ায় বসতভিটা ও কৃষিজমি দ্রুত বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নদীর তীরবর্তী পরিবারগুলো ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে, আর তাদের চোখের সামনে কৃষিজমি হারিয়ে যাচ্ছে। ভাঙন পরিস্থিতি দেখতে নানা বয়সী লোকজন দূর-দূরান্ত থেকে এসেছেন, কেউ কেউ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সাহায্য করছেন।
৮০ বছর বয়সী সনেকা বেগম মেয়ের বসতঘর ভাঙার খবর শুনে দেবগ্রামে এসেছেন। তিনি জানান, “অনেক আগে নদী আমাদের বাড়ি নিয়ে গেছে, আর আজ মেয়ের বাড়ি হারানোর খবর শুনে এসেছি। এখানে এসে দেখলাম, দুই দিনেই সব শেষ হয়ে গেছে।”
খবির সরদারের বাড়ি নদী থেকে মাত্র ১০ গজ দূরে অবস্থান করছে। একসময় তার বাড়ি ছিল নদী থেকে এক মাইল দূরে। তিনি জানিয়েছেন, “ভাঙনের কারণে কোথায় যাব তা ঠিক করতে পারছি না। শ্বশুরবাড়ির লোকজন ও পরিবারের সদস্যরা এসে সাহায্য করছে।”
কাওয়ালজানির সালাম সরদার বলেন, “বাড়ি ও জিনিসপত্র দ্রুত সরাতে হচ্ছে। প্রতিবেশীরা একই পরিস্থিতিতে আছেন। ভিটা রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না, দ্রুতই সব নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।”
দেবগ্রামের কুদ্দুস সরদার জানান, তাঁর বাড়ি নদী থেকে প্রায় ২০০ গজ দূরে হলেও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। তিনি বলেন, “আমরা ২০ বছর আগে ভাঙনের শিকার হয়ে দেবগ্রামে এসেছিলাম, কিন্তু এখানেও ভাঙন শুরু হয়েছে।”
দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম বলেন, পদ্মার পানি বাড়ার সঙ্গে স্রোত বৃদ্ধির কারণে ভাঙন বাড়ছে। তিন দিনের ভাঙনে দেবগ্রাম ও কাওয়ালজানির অন্তত ২৫ একর কৃষিজমি বিলীন হয়েছে। এ অঞ্চলের শতাধিক পরিবার ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র জানান, পানি বৃদ্ধির সঙ্গে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে এবং বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসককে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছেন।