ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী বন্ধন পরিবহনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিএনপির দুটি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটেছে। রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে দফায় দফায় এই সংঘর্ষের ফলে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে এবং শ্রমিক ইউনিয়নের অফিসে ভাঙচুর চালানো হয়েছে।
বর্তমানে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বন্ধন বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এই রুটে সিটি বন্ধন পরিবহনের নিয়ন্ত্রণে ছিলেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি জুয়েল হোসেন এবং আওয়ামী লীগ নেতা আইউব আলী। বিএনপি সরকারের সময়ে এই পরিবহনটি বন্ধন পরিবহন নামে পরিচিত ছিল এবং এর নিয়ন্ত্রক ছিলেন মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মাহাবুব উল্লাহ তপন।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সিটি বন্ধন পরিবহনের দখল নেন লিটন হোসেন ও দেলোয়ার হোসেন, যারা কারাবন্দী সাবেক ছাত্রদল নেতা জাকির খানের অনুসারী। রবিবার দুপুরে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে তপনের ভাগ্নে সাখাওয়াত হোসেন রানাসহ অন্যান্য পরিবহন নেতারা সিটি বন্ধন-এর নাম পরিবর্তন করে শুধু বন্ধন পরিবহন লেখেন এবং ভাড়া ৫৬ টাকা থেকে ৫৪ টাকা নির্ধারণ করেন।
পরে, জাকির খানের অনুসারী মহানগর স্বেচ্ছাসেবকদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়ার নেতৃত্বে শতাধিক নেতাকর্মী বাস কাউন্টারের সামনে জড়ো হন। এ সময় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে, এবং কাউন্টারে থাকা বাস মালিক রুহুল আমিনকে মারধর করা হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। জাকির খানের সমর্থকরা বন্ধন পরিবহনের কাউন্টার ও চেয়ার ভাঙচুর করে।
পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন। তবে বিকেল ৪টায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা চলে গেলে আবারও দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়, এতে অন্তত ১৫ জন আহত হন। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে বন্ধন পরিবহনের পরিচালক দেলোয়ার হোসেন বলেন, তারা নিয়মমাফিকভাবে বাস চলাচল শুরু করেছিলেন, কিন্তু তপনের লোকজন এসে দখল নিতে চাইলে সংঘর্ষ বাধে।
মাহাবুব উল্লাহ তপন জানান, তাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে এবং অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং আটজনকে আটক করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার (এসপি) প্রত্যুষ কুমার মজুমদার জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় আটককৃতদের থানায় নিয়ে আসা হয়েছে, তবে এখনো কোনো মামলা দায়ের হয়নি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মাহমুদুল হক বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পাঠানো হয় এবং বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।