কুমিল্লা নগর ও আশপাশের এলাকাগুলোতে হঠাৎ করে গ্যাস সরবরাহ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন গ্রাহকেরা। বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে হোটেল-রেস্তোরাঁ, কলকারখানা, সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতেও মিলছে না গ্যাসের দেখা। হঠাৎ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী।
কুমিল্লাসহ আশপাশের ছয়টি জেলায় গ্যাস সরবরাহ করে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (বিজিডিসিএল)। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের ভাষ্য, চট্টগ্রামের উৎসমুখে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) টার্মিনালে সমস্যা দেখা দেওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আজ সোমবার রাতের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশাবাদী তাঁরা। রোববার গভীর রাত থেকে হঠাৎ করে গ্যাস সরবরাহ কমে যেতে শুরু করে বলে জানিয়েছেন গ্রাহকেরা। সোমবার ভোর থেকে গ্যাসের দেখাই মিলছে না। এতে গ্যাস ব্যবহারকারীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
বেলা ১১টার দিকে কুমিল্লা নগরের অশোকতলা এলাকার বাসিন্দা মাইন উদ্দিন বলেন, ‘রাতেও গ্যাস ছিল। সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনি ভোর থেকে গ্যাস নেই। পরে বাধ্য হয়ে হোটেল থেকে আনা খাবার দিয়ে পরিবারের লোকজনসহ নাশতা করেছি। হঠাৎ করে এভাবে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। আমরা দ্রুত সমস্যার সমাধান চাই।’
একই রকম ভোগান্তির কথা জানালেন নগরের ছোটরা এলাকার বাসিন্দা সানজিদা আক্তার। নগরের হাউজিং এলাকার ভাড়াটে রাবেয়া বেগম বলেন, ‘১০ বছর ধরে কুমিল্লা শহরে ভাড়া বাসায় থাকি। কয়েক মাস পরপর এভাবে গ্যাসের সমস্যা দেখি। অথচ এই সমস্যা দূরীকরণে তেমন কোনো ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। রোববার রাতে বাসায় মেহমান এসেছে। হঠাৎ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় রান্নাবান্না করতে পারিনি। তাই হোটেল থেকে সকালের নাশতা ও দুপুরের খাবার এনেছি। বিকেলে ও রাতে কী করব জানি না।’
বিষয়টি নজরে আনা হলে সোমবার বেলা দেড়টার দিকে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস বিভাগের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মীর ফজলে রাব্বি বলেন, সাগরে নিম্নচাপের কারণে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় এলএনজি রূপান্তরের টার্মিনালের উৎসমুখে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এর ফলে গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। বিশেষ করে কুমিল্লা, চাঁদপুরসহ কয়েকটি স্থানে গ্যাস সরবরাহে বেশি বিঘ্ন ঘটেছে। সাময়িক এই সমস্যা দ্রুত সমাধানে কাজ চলছে। আজ রাতের মধ্যে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।
বিজিডিসিএল সূত্র ও গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হঠাৎ করে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কুমিল্লা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেডে), বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন (বিসিক) শিল্পনগরী কুমিল্লাসহ বিভিন্ন কলকারখানায় উৎপাদনের পাশাপাশি গৃহস্থালি কাজ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহ না থাকায় নগরের বাসাবাড়িতে কোথাও চুলা জ্বলেনি। সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতেও গ্যাস সরবরাহ নেই। এতে কুমিল্লা নগরসহ বিভিন্ন উপজেলা সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চলাচল কমে গেছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে বাখরাবাদ গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে।
বাখরাবাদ গ্যাসের কর্মকর্তা প্রকৌশলী মীর ফজলে রাব্বি জানান, বিজিডিসিএলের আওতাধীন কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর জেলায় দৈনিক গ্যাসের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৫৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে ২৪০ থেকে ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। প্রাপ্ত গ্যাসের ৭০ শতাংশ যাচ্ছে ১৩টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে, বাসাবাড়িতে যাচ্ছে ১৫ শতাংশ। আর সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে ৭ শতাংশ এবং বাকিগুলো কুমিল্লা ইপিজেড, বিসিকসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানা, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোম্পানির আওতাধীন বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালীর ছয় জেলার মধ্যে ৪ লাখ ৮৮ হাজার ২৮টি গৃহস্থালি গ্যাসের সংযোগ আছে। ১৩টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ছাড়াও রয়েছে ৯১টি সিএনজি ফিলিং স্টেশন, ৫৭৫টি ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প, ১ হাজার ৫৬৩টি হোটেল-রেস্তোরাঁ, ৮১টি ক্যাপটিভ পাওয়ার, ১৮৪টি শিল্পকারখানা ও একটি সার কারখানা।
কুমিল্লা শহরতলির ধর্মপুর এলাকার বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, ‘চলতি বছরেই এভাবে দুই–তিনবার হঠাৎ করে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। যার কারণে ওই সময় সিলিন্ডার গ্যাস ও চুলা কিনেছিলাম। আজকে সেটাই কাজে লেগেছে। যদিও এতে প্রতিনিয়ত খরচ বাড়ছে। আমরা এমন সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই। যদি কোনো কারণে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করতে হয়, তাহলে বিষয়টি যেন আগে থেকেই গ্রাহকদের জানানো হয়।’