সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রাজধানীতে আরও চারটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে তিনটি হত্যা মামলা, অন্যটি হত্যাচেষ্টার। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত ও রাজধানীর বিভিন্ন থানায় এসব মামলা হয়েছে। এ ছাড়া সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আরও একটি হত্যা মামলা নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে আদালতে।
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এর পর থেকে আজ রোববার পর্যন্ত তাঁর নামে ১৪৫টি মামলা হওয়ার তথ্য জানা গেছে। এর মধ্যে ১৩১টিই হত্যা মামলা।
সর্বশেষ পাওয়া মামলাগুলোতে অভিযোগ আনা হয়েছে, গত ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা–কর্মীরা ও পুলিশ নির্বিচার গুলি চালিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া তাঁর সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগসহ ১৪–দলীয় জোটের নেতা, পুলিশের সাবেক আইজিপি, সাবেক ডিএমপি কমিশনারকে আসামি করা হয়েছে।
যাত্রীবাড়ীতে শাহীন হত্যা মামলা
যাত্রাবাড়ীতে মো. শাহীন (৪০) নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৮৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। শাহীনের স্ত্রী স্বপ্না বেগম বাদী হয়ে গতকাল শনিবার যাত্রাবাড়ী থানায় এ মামলা করেন। মামলায় স্বপ্না উল্লেখ করেন, ৫ আগস্ট বিকেলে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন তাঁর স্বামী। সেদিন বিকেলে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে ছাত্রলীগ, যুবলীগের সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এতে গুলিবিদ্ধ হন শাহীন। পরে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এই মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও আসাদুজ্জামান খান, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, সিআইডির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ আলীকে আসামি করা হয়েছে।
শাকিল হত্যায় মায়ের মামলা
রিকশাচালক মো. শাকিলকে হত্যায় শেখ হাসিনাসহ ৪০ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে মামলা হয়েছে। শাকিলের মা হেলেনা বেগম বাদী হয়ে গত বৃহস্পতিবার এ মামলা করেন। মামলায় হেলেনা বেগম উল্লেখ করেন, তাঁর ছেলে রিকশা চালিয়ে পরিবারকে সহযোগিতা করতেন। গত ১৮ জুলাই সকালে গ্যারেজ থেকে রিকশা নিয়ে বের হন। বেলা ২টার দিকে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে ছাত্রদের আন্দোলনে ছাত্রলীগ–যুবলীগসহ পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এতে শাকিল গুলিবিদ্ধ হন। পরে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক মন্ত্রী বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে আসামি করা হয়েছে।
মোহাম্মদ আলী হত্যায় আদালতে মামলা
এ ছাড়া মোহাম্মদ আলীকে (১৮) হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ৮৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। নিহত মোহাম্মদ আলীর বাবা মমিন মিয়া বাদী হয়ে ঢাকার সিএমএম আদালতে গত বৃহস্পতিবার এ মামলা করেন। মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, ৫ আগস্ট সকাল ৯টার সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে অংশ নেন মোহাম্মদ আলী। যাত্রাবাড়ীর মাছের আড়তের সামনের সড়কে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পুলিশ তাঁকে গুলি করে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে আসামি করা হয়েছে।
হত্যাচেষ্টার মামলা
রুবেল মিয়া নামের এক যুবককে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪৮ জনের বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় মামলা হয়েছে। আজ রোববার ভুক্তভোগী রুবেল বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় এ মামলা করেন। মামলায় রুবেল মিয়া দাবি করেছেন, ১৯ জুলাই বিকেল ৪টার দিকে বাড্ডার আফতাবনগর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। এ সময় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সন্ত্রাসীরা নিরীহ আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এতে তিনি গুলিবিদ্ধ হন।
মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান, হাসানুল হক ইনুকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার আবেদন
কাফরুলে কিশোর রাব্বি মাতবরকে (১৪) হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। রাব্বি মাতবরের মা ফিরোজা বেগম বাদী হয়ে আজ রোববার এ আবেদন করেন। শুনানি নিয়ে এ–সংক্রান্ত মামলা হয়েছে কি না, সেটি ১২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জানানোর জন্য কাফরুল থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মামলায় ফিরোজা বেগম উল্লেখ করেন, ১৯ জুলাই রাতে কাফরুলের ঢাকা মডেল ডিগ্রি কলেজের সামনে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা গুলি করে। এতে রাব্বি মাতবর গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানকে আসামি করার আবেদন করা হয়েছে।