চট্টগ্রাম নগরে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ গত কয়েক দিনে কিছুটা বেড়েছে। তবে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অন্তত ২৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে খোলা সয়াবিন তেল। যদিও দুই দিন আগেও দাম ছিল আরও পাঁচ টাকা বেশি।
গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের সম্মেলনকক্ষে ভোজ্যতেল এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেন ও জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে খোলা সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করে দেন।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, আগামী ১০ এপ্রিল পর্যন্ত আমদানিকারকেরা ১৫৩ টাকা দরে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল সরবরাহ করবেন। পাইকারি পর্যায়ে তা ১৫৫ এবং খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১৬০ টাকা বিক্রি করা যাবে। যদিও সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের বাজারে খোলা সয়াবিনের মূল্য নির্ধারণ করা রয়েছে ১৫৭ টাকা এবং বোতলজাত সয়াবিন ১৭৫ টাকা।
মঙ্গলবার সার্কিট হাউসের সভার এক পর্যায়ে জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, ‘আমি দেখতে চাই, রাষ্ট্রের শক্তি বেশি না ব্যবসায়ীদের শক্তি। তেলের সাপ্লাই যদি পর্যাপ্ত না হয়, তবে গুদাম পর্যায়ে অভিযান চালানো হবে। কীভাবে ভোক্তা তেল পাবে, সেই ব্যবস্থা করুন। না হয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা নেবে। আর কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’
হুঁশিয়ারি মানা হচ্ছে না খুচরায়
জেলা প্রশাসকের ঘোষণার দুই দিন পরও খুচরা বাজারে তেলের দাম কমেনি। তবে আজ শুক্রবার নগরের বহদ্দারহাট, চকবাজার, চন্দনপুরাসহ আশপাশের বাজার ও খুচরা দোকানে নির্ধারিত দামে তেল বিক্রি হতে দেখা যায়নি। বাজারে খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার বিক্রি হয়েছে ১৮৫ টাকা দরে। তবে পাইকারি বাজারে কমেছে খোলা তেলের দাম। পাইকারি বিক্রেতারা ১৫৫ থেকে ১৫৬ টাকার মধ্যেই তেল বিক্রি করছেন।
খুচরা বাজারে বোতলজাত সয়াবিন ২০০ টাকার আশপাশে বিক্রি হচ্ছে। তবে গুটিকয়েক দোকানে ১৮৫ টাকা দরেও বিক্রি হতে দেখা গেছে। যদিও সেখানে চাহিদার তুলনায় তেল কম। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাঁরা আগে বাড়তি দামে তেল কিনেছেন, তাই এখন বাড়তি দামে বিক্রি করছেন। নতুন তেল এলে নির্ধারিত দামেই বিক্রি করবেন।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. আমিনুর রহমান বলেন, পাইকারি বাজারে কমে গেছে। খুচরায় হয়তো এখনো কিছুটা বাড়তি। সরকারের উচিত খোলা তেল বিক্রি বন্ধ করে পলিব্যাগ ও বোতলজাত করার নির্দেশ দেওয়া। তখন যেহেতু মেয়াদের বিষয় থাকবে, মজুত করা যাবে না।
জানতে চাইলে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের অভিযানে আমরা অধিকাংশ বাজারে দাম কম পেয়েছি। কয়েকটি বাজারে দাম বেশির খবর যেহেতু পাওয়া গেছে, আমরা ম্যাজিস্ট্রেট পাঠাব।’
বোতলজাত তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হচ্ছে
গত কয়েক দিনে বাজারে বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ বেড়েছে। গত বুধবার বাজার পরিদর্শনে গিয়ে চট্টগ্রাম মেয়র শাহাদাত হোসেনও একই কথা জানিয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল দেখতে পেয়েছি। আমি আশাবাদী, আরও বেশি সয়াবিন তেলের বোতল পাওয়া যাবে।’
একই কথা জানিয়েছেন টি কে গ্রুপের বিক্রয় প্রতিনিধি নিউটন মল্লিক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বহদ্দারহাট বাজারে গত দু-তিন দিনে ৫০০ কার্টন সয়াবিনের সরবরাহ আদেশ হয়েছে। সেগুলো বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। অতিরিক্ত দাম নেওয়া হচ্ছে না।
নগরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাজারে বোতলজাত সয়াবিনের সংকট অনেকটা কৃত্রিম। গত এক সপ্তাহে বিভিন্ন অভিযানে এর প্রমাণও পাওয়া গেছে। অভিযানে গিয়ে, দোকানে মজুত করা সয়াবিন তেলের বোতল খুঁজে পেয়েছেন ম্যাজিস্ট্রেটরা। এ ছাড়া বাড়তি দামে সয়াবিন বিক্রির প্রমাণও পেয়েছেন।
সবশেষ গতকাল নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল লুকিয়ে রাখার কারণে মেসার্স জেকে ট্রেডার্সকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এর পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় অতিরিক্ত দামে সয়াবিন তেল বিক্রির অপরাধে জরিমানা করেছেন জেলা প্রশাসনের টাস্কফোর্স।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রায় প্রতিটি দোকানে সয়াবিনের মজুত পেয়েছি। তারা মজুত করে রাখে। আমরা বাজারে অভিযান পরিচালনা করছি। এটি অব্যাহত থাকবে।’