দেশের চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর পদত্যাগের দাবি উঠেছে। এ দাবিতে বিভিন্ন স্থানে নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘গতকাল (রোববার) রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে যে আন্দোলন হয়েছে, সে আন্দোলনে আমাদের সংহতি রয়েছে। কারণ, সামগ্রিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আমরা সিভিল পোস্ট থেকে চেষ্টা করছি আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক করতে। জনজীবনে যেন গণ–আতঙ্ক না ছড়ায়, সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি।’
আজ সোমবার দুপুরে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নাগাইশ ফয়েজিয়া রাজ্জাকিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার ২০২৫ সালের দাখিল পরীক্ষার্থীদের বিদায় ও মিলাদ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। হাসনাত ওই অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ছিলেন।
অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন হাসনাত আবদুল্লাহ। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গতকাল রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে যে আন্দোলন হয়েছে, সে আন্দোলনে আমাদের সংহতি রয়েছে। কারণ, সামগ্রিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আমরা সিভিল পোস্ট থেকে চেষ্টা করছি আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক করতে। জনজীবনে যেন গণ–আতঙ্ক না ছড়ায়, সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি।’
রাজধানীর বনশ্রীতে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর ওপর হামলা প্রসঙ্গে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘বনশ্রীতে যে ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি অপ্রত্যাশিত। সেটিকে দোষ দেওয়ার যে প্রবণতা, রাজনৈতিকভাবে সব বিষয় দেখা—এ করেছে, ও করেছে, আমি করি নাই, এই জায়গা থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে। ছিনতাইকারীকে ছিনতাইকারী হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময় ধরে মানুষ ফ্যাসিবাদী শাসনের মধ্য দিয়ে গেছে। সার্বিক বিষয়গুলোতে মানুষ মেন্টালি ট্রমাটাইজড।’
জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জাতীয় সংসদ সদস্যদের প্রভাব বিস্তারের একটি প্রবণতা থাকে। আমরা অতীতে দেখেছি, তাঁদের (সংসদ সদস্য) আত্মীয়স্বজন, ভাইকে দিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসব বিষয় একটা আধিপত্য রাখার চেষ্টা করা হয়। সেই প্রভাব থেকে উত্তরণের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় পর্যায়ে নির্বাচন দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছে কি না, সেটি মাঠপর্যায়ে পর্যবেক্ষণের জন্য স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হয়ে যাওয়া উচিত। কারণ, আমাদের অতীতের যেই অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাতে খুব বেশি সুখস্মৃতি নেই। আমরা দেখেছি যে স্থানীয় সরকারব্যবস্থায় জাতীয় সংসদ সদস্য যাঁরা হন, তাঁদের একটি অপ্রত্যাশিত প্রভাববলয় থাকে।’
ইসলামি আলোচক মাওলানা মোস্তাক ফয়েজীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রফিকুল ইসলাম ফয়েজী। এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ব্রাহ্মণপাড়ার শশীদল আলহাজ আবু তাহের কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আবুল হোসেন।
অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, মেধাবীরা পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়লে অযোগ্য শাসকেরা সমাজ শাসন করতে থাকে। দুর্নীতির সঙ্গে আপস করা যাবে না উল্লেখ করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের এ সমন্বয়ক বলেন, ‘সবাইকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে থাকতে হবে। দুর্নীতির সঙ্গে কখনোই আপস করা যাবে না। এখান যাঁরা শিক্ষার্থী আছেন, পড়াশোনায় আপনাদের কোনো সমস্যা হলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। কারণ, আমরা চাই না মেধাবীরা ঝরে পড়ুক। আপনারা প্রায়ই দেখবেন অযোগ্য ক্ষমতাবান ব্যক্তিদেরই মসজিদ কমিটির সভাপতি বানানো হয়, তাঁদেরকে যেখানে–সেখানে চেয়ার দিতে হয়। কারণ, মেধাবীরা যখন পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়েন, তখন অযোগ্য শাসকেরা সমাজ শাসন করতে থাকে।’
হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘আপনার মধ্যে যদি তথ্যের ভান্ডার থাকে, তাহলে যেকোনো জায়গায় আপনি মোকাবিলা করতে পারবেন। সে জন্য আপনাকে প্রচুর পড়াশোনা করতে হবে। যতই কষ্টই হোক, পড়াশোনা ছাড়া যাবে না। শিক্ষার্থীদের ভালোভাবে পড়াশোনা করে জ্ঞান বৃদ্ধি করতে হবে। আপনারা বিনয়ী হবেন, বিনয়ী হলেই আপনারা অনেক বড় মানুষ হতে পারবেন। জীবনে কখনো কষ্ট থাকবে, কখনো ভয় থাকবে, কখনো আতঙ্ক থাকবে; কিন্তু দিন শেষে আমাদের সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে হবে।’