বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, যদি আবার কখনো ফ্যাসিজমের উত্থান ঘটে, কোনো ধরনের ডিক্টেটরের উত্থান ঘটে, ২১ ফেব্রুয়ারি এ দেশের দামাল ছেলেদের, এ দেশের মানুষদের আবারও রাজপথের লড়াইয়ে নামতে উদ্বুদ্ধ করবে।
আজ শুক্রবার সকালে মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। আজ সকাল আটটার কিছু পর শহীদবেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিএনপি।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রাস্তায় দাঁড়াতে সাহস জুগিয়েছে। এই পথ ধরেই নব্বইয়ের অর্জন তৈরি করেছি। এরশাদের মতো একজন ঘৃণ্য স্বৈরশাসকের পতন ঘটানো হয়েছে। এরই পথ ধরে এক ভয়ংকর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা যে ১৭ বছর জনগণের কাঁধের ওপর অত্যাচার করে রাষ্ট্রক্ষমতায় দখলে ছিলেন, সেই রক্তপিপাসু আওয়ামী ফ্যাসিবাদের জননী শেখ হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হন ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট। এগুলোর সবকিছুতেই ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের প্রেরণা জুগিয়েছে, উদ্বুদ্ধ করেছে, সংগ্রামের পথে শামিল করেছে।’
রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, ‘বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি সকল সময় সকল যুগে অত্যাচারীর বিরুদ্ধে, নিপীড়নের বিরুদ্ধে এ দেশবাসীকে, বিশ্ববাসীকে প্রেরণা জুগিয়েছে—কী করে অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে হয়; কী করে ভাষার অধিকার, মানুষের সকল অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে হয়। আজও ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের কাছে এক সুমহান প্রেরণার উৎসস্থল। দেশবাসী এদিনকে একদিকে যেমন দুঃখের দিন মনে করে, অন্যদিকে প্রেরণা ও গৌরবের দিন মনে করে। বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারির আন্দোলনের সোপান বেয়েই দেশে ছাত্র আন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন, স্বাধীনতাসংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে।’
নির্বাচন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বের বিষয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘এ সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং তার সঙ্গে আরও কিছু আনুষঙ্গিক কিছু কাজ আছে, বিভিন্ন সংস্কার আছে, যেটা প্রয়োজনীয় সংস্কার, সেটা আমার মনে হয় যে সময় আছে, সে সময়ের মধ্যে করা সম্ভব। কিন্তু জনগণকে আশ্বস্ত করতে হবে। দেশের জনগণ ও তরুণ প্রজন্ম আজ যাদের ১৮ বছর বয়স, যাদের ২১ বছর বয়স, তারা কেউ ভোট দিতে পারেনি। ভোট কী তারা জানে না।’
রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, ‘গণতন্ত্র ধ্বংস করতে নির্বাচন ধ্বংস করেছে, ভোট ধ্বংস করেছে। সুতরাং এগুলোকে নিশ্চিত করতে, জনগণের মধ্যে আস্থা তৈরি করতেই একটি অবাধ–সুষ্ঠু নির্বাচন, একটি ইনক্লুসিভ নির্বাচন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে। এটা এ সরকারের দায়িত্ব। আগে স্থানীয় সরকার না পরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন—এ বিতর্কে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমার মনে হয় অংশগ্রহণ করা উচিত নয়। এ সরকারকে জনগণের ক্ষমতা জনগণকে ফিরিয়ে দিতে হবে। জনগণ নিরপেক্ষ ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন করবে।’
লড়াই কি আরও করেই যেতে হবে, জানতে চাইলে রুহুল কবির রিজভী বলেন, লড়াই শুধু রাজপথের না। লড়াই করা হচ্ছে গণতান্ত্রিক যে ব্যবস্থা, সেটার জন্য লড়াই করতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, মানবিক সাম্য নিশ্চিত করতে, ন্যায়বিচার নিশ্চিতে, বৃহৎ গণতন্ত্র নিশ্চিতে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
এ সময় বিএনপির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির, হাবিবুন নবী খান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দীন, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন, বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন, উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এরপর প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ও এর থানা কিংবা ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা–কর্মীরা পর্যায়ক্রমে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে থাকেন। সর্বশেষ সাড়ে ৯টার দিকে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে গণমাধ্যমে কথা বলেন উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক।