দ্যা নিউ ভিশন

নভেম্বর ২৫, ২০২৪ ০৪:৪৬

বন্যায় ফেনী–নোয়াখালীর ৯০ শতাংশ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত

ত্রাণ সংগ্রহ করে বাড়ির দিকে যাচ্ছেন এক নারী। শুক্রবার ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চিত্র।

বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফেনী ও নোয়াখালী জেলা। দুই জেলার ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ বন্যায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধ্বংস হয়েছে ৪৮ শতাংশ বাড়িঘর। এ ছাড়া দুই জেলার পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা ও সুপেয় পানির সুবিধা শতভাগ অচল হয়েছে। চলমান বন্যা নিয়ে আজ মঙ্গলবার অক্সফাম বাংলাদেশ প্রকাশিত জরুরি চাহিদা নিরূপণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদন বলা হয়েছে, বন্যার পানি ধীরে ধীরে নামতে শুরু করায় বন্যাকবলিত এলাকাগুলোর ক্ষতচিহ্ন ক্রমে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। দুর্গতদের মধ্যে জীবিকা হারানো ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দুই জেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর ৭২ শতাংশ প্রতিদিন দুই বেলা খেতে পারছে, যা পর্যাপ্ত নয়। পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় খোলা জায়গায় মলত্যাগ বাড়ছে, যা ডায়রিয়া ও কলেরার মতো পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এসব রোগে অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছে।

ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার বন্যাদুর্গত হোসনে আরা (৩৮) নিজের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘বন্যার সময় পরিবার নিয়ে আমরা ছাদে থাকতাম। আমাদের কাছে বিশুদ্ধ খাবার পানি বা খাবার কিছুই ছিল না। টয়লেটও ডুবে গিয়েছিল, এ ক্ষেত্রে মেয়েদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নিশ্চিত সম্ভব হতো না। আমরা কেবল রাতের বেলা শাড়ি দিয়ে ঘিরে টয়লেটের কাজ সারতাম। অনেকেই অসুস্থ হয়ে যেত। এ ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। এই বন্যা আমাদের সবকিছু শেষ করে দিয়েছে।’

ভয়াবহ বন্যায় ফেনীর আবদুল করিম (৫২) জীবিকা ও ঘরবাড়ি সব হারিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এবারের মতো ভয়াবহ বন্যার পানি আগে দেখিনি।’

হোসনে আরার মতো করিমও বন্যায় পরিবার নিয়ে ঘরের ছাদে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাঁর ছোট একটি সবজির দোকান ছিল, যা তার পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস, সেটি নষ্ট হয়ে গেছে বন্যায়। এখন সবকিছু আবার নতুন করে শুরু করতে হবে তাঁকে।

অক্সফামের কান্ট্রি ডিরেক্টর আশিষ দামলে বাংলাদেশের বন্যা সম্পর্কে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে এমন পরিস্থিতি বাংলাদেশে আগে দেখা যায়নি। বন্যায় লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘরবাড়ি ও কৃষিজমি ডুবে গেছে। জীবিকা হারিয়েছে লাখ লাখ মানুষ। গবাদিপশুর ক্ষয়ক্ষতি, দুর্গত জনগোষ্ঠীকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিয়েছে।

অক্সফামের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া এই বন্যায় ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ ১১ জেলার বিশাল অংশ পানির নিচে তলিয়ে যায়। বাস্তুচ্যুত হয় পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ। এই বন্যায় প্রায় ৫৮ লাখ মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অবকাঠামো, বাড়িঘর, কৃষি ও মৎস্য খাত। এসব ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে দুর্গত জনগোষ্ঠীদের জরুরি ও ধারাবাহিক মানবিক সহায়তা প্রয়োজন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশেষ করে দুর্গত জনগোষ্ঠীর জন্য জরুরিভাবে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি, নগদ অর্থসহায়তা, খাদ্য ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী প্রয়োজন। মধ্য মেয়াদে ঘরবাড়ি মেরামত, পানি ও পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার এবং খাদ্য উৎপাদনে কৃষি উপকরণ সরবরাহ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন ও টেকসই সমাধানে ওয়াশ–সুবিধা (পানি, পয়োনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা) নিশ্চিত করা, কমিউনিটি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ ও আয়মূলক কার্যক্রম প্রচার করা জরুরি।

অক্সফামের পক্ষ থেকে বলা হয়, বন্যার শুরু থেকেই তারা বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে জরুরি সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি, শুকনা খাবার, ওরস্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিরতণ ও মোবাইল চার্জিং স্টেশন সহায়তা দিয়েছে। এখন তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে ভেঙে পড়া ঘরবাড়ি পুনর্নির্মাণ, নিরাপদ পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী প্রদান ও খাদ্য সরবরাহ করার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। তবে বন্যার ক্ষয়ক্ষতির অবস্থার তুলনায় তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি প্রয়োজন মেটাতে আরও বেশি সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে।

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ

ঝলমলে আইপিএল নিলামের অন্য রূপ: কালো তালিকা, রাতারাতি কোটিপতি আর ক্ষমতা প্রদর্শন

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ললিত মোদি। ভারতীয় ক্রিকেট