শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী ছানার পায়েস ভৌগলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। জেলা প্রশাসনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিল্প মন্ত্রণালয় ছানার পায়েসকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন পেটেন্ট, শিল্পনকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান স্বাক্ষরিত জিআই নিবন্ধন সনদ শেরপুর জেলা প্রশাসনের কাছে পৌঁছেছে।
জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, তুলসীমালা চালের পর এবার শেরপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী ছানার পায়েসকে ভৌগলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ফলে দুগ্ধজাত খাদ্য হিসেবে পরিচিত ছানার পায়েস কৃষিনির্ভর শেরপুর জেলার অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। দেশের সব জেলাসহ সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে এই মিষ্টি বিদেশেও রপ্তানি করা সহজতর হবে।
শেরপুর শহরের মুন্সিবাজার ঘোষপট্টি এলাকার প্রসিদ্ধ দুর্গাচরণ মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী মঙ্গল চন্দ্র ঘোষ বলেন, শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী ছানার পায়েস জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় মিষ্টি ব্যবসায়ীরা আনন্দিত। ফলে ভোজনরসিকদের মধ্যে ছানার পায়েসের চাহিদা আরও বাড়বে এবং দেশ-বিদেশে শেরপুরের সুনামও ছড়িয়ে পড়বে।
শেরপুরের ছানার পায়েসের ঐতিহ্য শত বছরের পুরোনো। ব্রিটিশ আমলে এই মিষ্টি প্রথম তৈরি হয় শেরপুরের ঘোষপট্টিতে। তখন হাতে গোনা দু-একটি দোকানে এই মিষ্টি হতো। এখন জেলা সদরেই অন্তত ২০টি দোকানে ছানার পায়েস হচ্ছে। এসব দোকানে প্রতি কেজি ছানার পায়েশ ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। এ ছাড়া শেরপুরের ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী, নকলা ও নালিতাবাড়ী উপজেলাতেও এই মিষ্টি পাওয়া যায়।
দুর্গাচরণ মিষ্টান্ন ভান্ডারের কারিগর রিপন চন্দ্র ভদ্র জানান, ছানার পায়েস তৈরি করতে দুধ, চিনি, ময়দা, এলাচ ইত্যাদি প্রয়োজন। প্রথমে উচ্চ তাপমাত্রায় দুধ জ্বাল দিয়ে ক্ষীর করা হয়। এরপর আলাদাভাবে দুধ থেকে ছানা কেটে তাতে সামান্য ময়দা মিশিয়ে ছোট ছোট গুটি করা হয়। এই গুটিগুলো চিনিমিশ্রিত শিরায় ভিজিয়ে আগে তৈরি করে রাখা ক্ষীরে ছেড়ে হালকা তাপমাত্রায় জ্বাল দেওয়া হয়। এভাবেই তৈরি হয় এই সুস্বাদু মিষ্টি।
রিপন বলেন, এক কেজি ছানার পায়েস তৈরি করার জন্য দুই কেজি দুধ, আধা কেজি চিনি, সামান্য পরিমাণ ময়দা ও ১০ থেকে ১৫ গ্রাম এলাচি লাগে।