বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন প্রয়োজনে নানা পরীক্ষা চালান, এবং অনেক পরীক্ষাই বছরের পর বছর চলতে থাকে। এমন একটি পরীক্ষা রয়েছে, যা শত বছর ধরে চলছে এবং আরও এক শতাব্দী ধরে চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এই দীর্ঘস্থায়ী পরীক্ষার জন্য গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লিখিয়েছেন। প্রায় ১০০ বছর ধরে চলমান এই পরীক্ষার নাম ‘পিচ ড্রপ’।
১৯২৭ সালে অস্ট্রেলীয় পদার্থবিদ থমাস পার্নেল এই পরীক্ষা শুরু করেন। মূলত, পিচ নামক পদার্থের তারল্য এবং ভিস্কোসিটি (সান্দ্রতা) পরিমাপ করাই ছিল পরীক্ষার লক্ষ্য। পিচ, যা আলকাতরা থেকে উদ্ভূত এবং পৃথিবীর সবচেয়ে ঘন তরল হিসেবে পরিচিত, এটি রাস্তার কাজে ব্যবহৃত হয় এবং নৌকায় পানিরোধী হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
পার্নেল পরীক্ষার জন্য পিচের একটি নমুনা গরম করে কাচের ফানেলে আটকে দেন এবং তিন বছর অপেক্ষা করে পিচটিকে ঠান্ডা ও স্থির হতে দেন। ১৯৩০ সালে তিনি ফানেল থেকে জমে থাকা বাষ্প বের করে পরীক্ষাটি শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতে, এটি মূলত একটি প্রদর্শনীর অংশ ছিল এবং বিশেষ পরিবেশগত বিষয় মাথায় রেখে পরীক্ষা চালানো হয়নি। তবে, সময়ের সঙ্গে পিচের প্রবাহের হার তাপমাত্রা ও ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে পরিবর্তিত হতে থাকে।
পার্নেলের পর ১৯৬১ সালে অধ্যাপক জন মেইনস্টোন এই পরীক্ষার তত্ত্বাবধান করেন এবং ৫২ বছর ধরে পরীক্ষা চালিয়ে যান। পরীক্ষার শুরু থেকেই পিচ ধীরে ধীরে ফানেল থেকে পড়তে শুরু করে, তবে প্রথম ফোঁটা পড়তে আট বছর সময় লেগেছিল। পরবর্তী পাঁচটি ফোঁটা পড়তে আরও ৪০ বছর পার হয়। বর্তমান বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই দশকের মধ্যে আরও একটি পিচের ফোঁটা পড়বে। পিচের সান্দ্রতা পানির তুলনায় প্রায় ১০ হাজার কোটি গুণ বেশি, তাই এভাবে ধীরে ধীরে ফোঁটা পড়ছে।
এখনো ফানেলে যথেষ্ট পরিমাণে পিচ রয়েছে, যা দিয়ে আরও ১০০ বছর পরীক্ষাটি চালানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। এখন সবাই তাকিয়ে আছে, কবে শেষ হবে এই অদ্ভুত পরীক্ষা।
সূত্র: এনডিটিভি