চট্টগ্রাম ওয়াসা ২০১৮ সালে নগরবাসীকে দূষণ থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে একটি পয়োনিষ্কাশন প্রকল্প শুরু করে, কিন্তু নির্মাণকাজ শুরু হতে প্রায় তিন বছর সময় লাগে। ফলে প্রকল্পের নির্ধারিত মেয়াদে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি, এবং এখন এই বিলম্বের ফলে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০০ কোটি টাকা।
‘চট্টগ্রাম মহানগরের পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর একনেক অনুমোদন দেয়। প্রথমে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা, কিন্তু এখন তা বেড়ে ৪ হাজার ৪০৮ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। তবে এই অতিরিক্ত ব্যয় এখনও চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়নি।
প্রকল্পের ডিপিপিতে বলা হয়েছিল, ২০২৩ সালের মধ্যে পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার নির্মাণকাজ শেষ হবে, তবে তা বাস্তবায়িত হয়নি। দুই দফা মেয়াদ বাড়ানোর পরও প্রায় অর্ধেক কাজ বাকি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ওয়াসার অদক্ষতা ও দুর্বল পরিকল্পনার কারণেই নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। তাদের মতে, প্রকল্পের ডিপিপিতে বছরের ভিত্তিতে কাজের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা থাকলেও, ওয়াসা শুরু থেকেই তা অনুসরণ করতে পারেনি।
প্রকল্পের কার্যক্রমের শুরুতে দেরি হওয়ার পেছনে একাধিক কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হয় ২০১৯ সালে, কিন্তু ঠিকাদার নিয়োগে সময় লেগে যায় আরও এক বছর। ২০২২ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি প্রতিষ্ঠান ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পরও প্রকল্পের কাজ শুরু হয়, অনুমোদনের প্রায় তিন বছর পর। এর ফলে প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পূর্ণরূপে ধীরগতিতে চলে যায়।
বর্তমানে, প্রকল্পের অধীনে ৬৬ কিলোমিটার (৩৩%) পয়োনালা বসানো হয়েছে এবং পয়ঃশোধনাগারের নির্মাণকাজও এখনো শেষ হয়নি। মোট কাজের অগ্রগতি ৫১% হয়েছে এবং বাকি কাজ সম্পন্ন হতে আরও অন্তত দেড় বছর সময় লাগবে।
এ বিষয়ে ওয়াসার প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, ডলার সংকটের কারণে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে। শুরুতে ডলার ৮০ টাকায় হিসাব করা হলেও এখন তা ১২০ টাকা হয়ে গেছে। তবে তিনি বলেছেন, করোনার প্রভাব এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ভিসা মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে কাজ শুরু হতে দেরি হয়েছে।
এদিকে, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মুহাম্মদ রাশিদুল হাসান মনে করেন, দেরিতে প্রকল্প শুরু হওয়ার কারণে রাষ্ট্রীয় সম্পদ অপচয় হয়েছে। তিনি বলেন, প্রকল্পের প্রাথমিক পরিকল্পনা ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সময় ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য আগেভাগে প্রস্তুতি নেয়া উচিত ছিল।
তিনি আরও বলেন, যদি ডিপিপি অনুসরণ করা হতো, তবে ব্যয় বেড়ে ২০০ কোটি টাকার বেশি হতো না, কারণ ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর মার্কিন ডলারের সংকট শুরু হলেও, প্রকল্পের বেশিরভাগ কাজ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল।