আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভকে ‘স্বৈরাচারী, অত্যাচারী ও নিপীড়ক’ বলে মন্তব্য করেছিলেন সুইডিশ পরিবেশ আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, যিনি বাকুতে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে আসতে চাননি। থুনবার্গ এই মন্তব্যও করেছিলেন যে, আজারবাইজানকে সম্মেলনের আয়োজনের সুযোগ দেওয়া উচিত হয়নি।
এই মন্তব্যে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট বেশ রেগে যান, তবে গ্রেটা থুনবার্গ তাঁর পথে চলতে থাকেন, জর্জিয়া থেকে আর্মেনিয়ায় চলে যান— এমন একটি দেশ, যেখানে আজারবাইজানের সঙ্গে চিরকালীন শত্রুতার সম্পর্ক রয়েছে।
থুনবার্গের কঠোর ভাষার পর আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালেও শুক্রবার, সম্মেলনের পঞ্চম দিনে, তিনি পরিবেশকর্মীদের বিক্ষোভের জন্য অনুমতি দেন। এখন পর্যন্ত অনেক পরিবেশ সংগঠন এই ধরনের অনুমতির জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়লেও, প্রেসিডেন্ট আলিয়েভ এতদিন পর্যন্ত তাদেরকে অনুমতি দেননি। তবে, বিশ্বনেতারা বাকু ত্যাগ করার পর পরিবেশকর্মীরা তাদের বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে পারলেন, যখন সম্মেলন কার্যক্রম প্রায় শেষ হয়ে গেছে।
এদিন, পরিবেশকর্মীরা অলিম্পিক স্টেডিয়ামে নিজেদের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করেন। যদিও এটি অলিম্পিক স্টেডিয়াম নামকরণ হলেও, বাকু কখনো অলিম্পিক গেমস আয়োজন করেনি, এবং ভবিষ্যতেও তার কোনো সম্ভাবনা নেই। দীর্ঘদিন পর এই স্টেডিয়ামে পরিবেশকর্মীরা বিক্ষোভের অনুমতি পেয়েছেন, যেখানে সাধারণত পুলিশের উপস্থিতি থাকত এবং তারা বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিত।
পরিবেশকর্মীরা ব্যানার, পোস্টার, প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে তাদের প্রতিবাদ জানিয়ে সম্মেলনের মূল স্থানে নাচ-গান করেন, এবং কেউ কেউ বড় বড় পোস্টার সাজিয়ে নীরবে বসে থেকেছেন, যাতে জীবাশ্ম জ্বালানির ক্ষতিকর প্রভাব তুলে ধরা হয়।
আজারবাইজানের শাসক ইলহাম আলিয়েভ অবশ্য এর পরেও একেবারে নিরুৎসাহিত নন। ২০০৩ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর থেকে তিনি কোনো বড় রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হননি। নিজের ক্ষমতাকে তিনি চিরস্থায়ী করতে সংবিধান পর্যন্ত পরিবর্তন করেছেন। তার বেপরোয়া মনোভাবের কারণে এমন বিক্ষোভের পরও তাঁর কিছুই যায় আসে না।
আলিয়েভ সম্মেলনের শুরুতে জাতিসংঘের সাধারণ সম্পাদক আন্তোনিও গুতেরেসকে সর্তক করে বলেছিলেন, তাকে তেলের দেশের বাদশাহ হিসেবে গালমন্দ করা ঠিক নয়। তার মতে, পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি তেল উৎপাদনকারী দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র, আর আজারবাইজান তার ৩০ ভাগেরও কম তেল উৎপন্ন করে। এছাড়া, তিনি আরও বলেন, তেল ও গ্যাস তার নিজের সৃষ্টি নয়, তা ঈশ্বরের দান।
এদিকে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ আগেই ‘কপ২৯’ সম্মেলনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তবে তাঁর পরিবেশমন্ত্রী অ্যাগনেস প্যানিয়ার রুনাশের যোগ দেওয়ার কথা ছিল। সম্মেলনের মাঝখানে আলিয়েভ ফ্রান্সকে একহাত নেন, অভিযোগ করেন যে ফ্রান্স তাদের উপনিবেশগুলোতে পরিবেশ আন্দোলনকারীদের দমন করে রেখেছে। এর পরই ফ্রান্স এই সম্মেলন বর্জন করে। তবে আলিয়েভ তাতে কিছুতেই বিচলিত হননি, কারণ তিনি জানতেন সম্মেলন আয়োজনটাই ছিল তার প্রধান উদ্দেশ্য এবং সে ক্ষেত্রে তিনি সফল হয়েছেন।
এখন প্রশ্ন হলো, সম্মেলন চলছেই, দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তবে আদৌ কি কোনো অর্থায়ন হবে? এখন পর্যন্ত তেমন কোনো ইতিবাচক লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। পরিবেশকর্মীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে তাদের মতামত জানিয়েছেন, কিন্তু তা বিশ্ব নেতাদের বা সম্মেলন আয়োজকদের টনক নড়াতে পারেনি।
এদিকে, ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী দুই হাজার পাবলিক লিস্টেড কোম্পানির মধ্যে ১,১৪৫টি ‘নেট জিরো’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু ২০২৩ সালের জুন থেকে এই পরিমাণ কার্বন নির্গমন ০.৮ শতাংশ বেড়েছে। এমন হারে তাপমাত্রা বাড়লে, আগামী ৫০ থেকে ৭৫ বছরের মধ্যে মালদ্বীপ ও সুন্দরবন সমুদ্রের তলায় চলে যাবে।
এই পরিস্থিতির মধ্যে, দূষণ ছড়ানোর জন্য দায়ী দেশগুলো, যেমন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, চীন, ফ্রান্স বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বাকু সম্মেলনকে কেন গুরুত্ব দেয়নি, তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে, গ্রহীতাদের মধ্যেও সহযোগিতার জন্য আগ্রহের অভাব অনেক প্রশ্ন তৈরি করছে।
তবে পরিবেশ আন্দোলনকারীরা তাঁদের মত প্রকাশে খুশি। বিক্ষোভের মাধ্যমে তারা আগত বিপদের ছবি তুলে ধরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।