সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুক, আপনাকে প্রতিনিয়ত এক ধরনের চাপ অনুভব করায়—‘হয়তো আপনিও এখন ওই জায়গায় থাকতে পারতেন’, ‘আপনি যদি তমুক কাজটা করতে পারতেন’, ‘অমুকের মতো সঙ্গী পেলে আপনার জীবন আরও ভালো হতো’। এই ধরনের চিন্তা আপনার বর্তমান জীবন থেকে সন্তুষ্টি খুঁজতে বাধা দেয়। আপনি অবচেতনভাবে অন্যদের জীবনে সন্তুষ্টি খুঁজতে শুরু করেন এবং এতে আপনার নিজের জীবনকে অসন্তুষ্টি এবং অতৃপ্তির মধ্যে আটকে ফেলেন। এক কথায়, ফেসবুকের মিথ্যা সুখের ধারণা আপনাকে ক্রমাগত অসুখী করে তোলে।
মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে কোনো কিছু সার্চ করতে গিয়ে আপনি সময়ের পটভূমি হারিয়ে ফেলেন এবং এক ঘণ্টারও বেশি সময় কাটিয়ে দেন, যার পর আপনি বুঝতে পারেন, এই সময়টা মোটেও সুখকর নয়। এই প্রক্রিয়ায়, আপনি ক্রমাগত আপনার লক্ষ্যের থেকে পিছিয়ে পড়েন এবং নিজের মনোযোগ কমে যাওয়ার কারণে মানসিক চাপ, উদ্বেগ, হতাশা ও অনিদ্রা বাড়তে থাকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সময় কাটানোর পর সেসবের নেতিবাচক প্রভাব আপনার শারীরিক স্বাস্থ্যেও পড়তে পারে, যেমন—স্থূলতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য এবং সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর তথ্যের সংখ্যা বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের একটি ২০২১ সালের প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে,
১. দিনে ৩ ঘণ্টার বেশি সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাটানো কিশোরদের মধ্যে বিষণ্নতা ও উদ্বেগের ঝুঁকি দ্বিগুণ।
২. ১৩-১৭ বছর বয়সী ৪৬% কিশোর তাদের শরীরের গঠন নিয়ে নেতিবাচক ধারণায় ভুগছে, এবং ৬৪% ঘৃণাভিত্তিক কন্টেন্টের সম্মুখীন হচ্ছে।
৩. ৫০% টিনএজার বলেছেন যে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে বের হয়ে আসা তাদের জন্য খুব কঠিন।
এই সমস্যা এখন আরও বাড়ছে। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব বাথের গবেষণায় দেখা গেছে, যদি কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার না করে, তবে তিনি সপ্তাহে গড়ে ৯ ঘণ্টা অতিরিক্ত সময় পান।
আরেকটি গবেষণায় বলা হয়েছে, আপনার সময় এবং শক্তি সবচেয়ে বেশি অপচয় হয় তিনটি খাতে: প্রথমত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দ্বিতীয়ত অতিরিক্ত চিন্তা, এবং তৃতীয়ত অর্থহীন সম্পর্ক। এসবই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সাথে গভীরভাবে সংযুক্ত।