বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেছেন, সময়মতো ইন্টারভেনশন তথা খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। বুধবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে মোতালিব টাওয়ারে অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লিনিক্যাল অ্যান্ডোক্রাইনোলজিস্ট এন্ড ডায়াবেটোলজিস্ট অব বাংলাদেশ (এসেডবি) মিলনায়তনে ‘ডায়াবেটিস ও সুস্থতা: শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এম এ হালিম খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এসেডবি প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. এমডি ফরিদ উদ্দিন। অনুষ্ঠানে ডায়াবেটিসের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রেক্ষাপট: বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য রাখেন এসেডবির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক ডা. ইন্দ্রজিৎ প্রসাদ, বাংলাদেশে সরকারি হাসপাতালে ডায়াবেটিসের চিকিৎসার বর্তমান চিত্র নিয়ে অধ্যাপক ডা. এ কে এম আমিনুল ইসলাম, ডায়াবেটিসের অপচিকিৎসা নিয়ে অধ্যাপক ডা. মীর মশাররফ হোসেন এবং সুচিকিৎসার চ্যালেঞ্জ নিয়ে অধ্যাপক ডা. রুহুল আমিন।
বক্তারা জানান, বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে ডায়াবেটিস এখন একটি মহামারী রোগে পরিণত হয়েছে। দুই দশক আগেও তুলনামূলকভাবে অল্প পরিচিত হলেও, বর্তমানে এটি শুধু উন্নত দেশ নয় বরং উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশেও স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে ব্যাপকভাবে আলোচিত। শুধু শহরাঞ্চলেই নয়, গ্রামাঞ্চলেও ডায়াবেটিস আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। তারা আরও জানান, বিশ্বে বর্তমানে প্রায় ৫০ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং ২০৩০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা বেড়ে ৬০ কোটিতে পৌঁছতে পারে। সত্তরের দশকে বাংলাদেশে ডায়াবেটিসের হার ছিল মাত্র ২ শতাংশের মতো, যা বর্তমানে ঢাকা শহরে প্রায় ১০ শতাংশে পৌঁছেছে এবং প্রিডায়াবেটিসের হার আরও ১০ শতাংশ।
সাম্প্রতিক এক গবেষণার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রামাঞ্চলেও ডায়াবেটিসের হার ৫-৮ শতাংশের কাছাকাছি। বাংলাদেশে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের হার উন্নত বিশ্বের তুলনায় অনেক বেশি। নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মধ্যে স্থূলতা এবং কায়িক পরিশ্রমের প্রতি অনীহার কারণে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ছে। এভাবে ডায়াবেটিস বাড়তে থাকলে, দেশের অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে এসেডবির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. মো. ফরিদ উদ্দীন বলেন, ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যা দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কার্যক্ষমতা হ্রাস করে এবং হার্ট অ্যাটাক, কিডনি ফেলিউর, অন্ধত্ব, পায়ের পচন এমনকি পা কেটে ফেলা পর্যন্তও ঘটাতে পারে। তিনি আরও বলেন, এত বড় বৈশ্বিক এই জটিল স্বাস্থ্য সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিরোধে জনসচেতনতা এবং জনসম্পৃক্ততা অপরিহার্য। সময়মতো ইন্টারভেনশন (খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন) গ্রহণের মাধ্যমে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও প্রতিকারে সামাজিক সচেতনতার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ডায়াবেটিস রোগীর সার্বিক কল্যাণে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, আলেম সমাজ এবং প্রচার মাধ্যমকে এগিয়ে আসতে হবে।
ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে এসেডবি বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে বর্ণাঢ্য কর্মসূচির মাধ্যমে দিবস উদযাপন, দেশব্যাপী সচেতনতামূলক পোস্টার বিতরণ, এবং ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ডায়াবেটিস বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রচার।