পদ্মা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যাওয়া শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পাইনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখন প্রতিদিন নদী পাড়ি দিয়ে অস্থায়ী স্থানে আসছে। বিদ্যালয়ের নিজস্ব কোনো ভবন না থাকায়, শিক্ষা কার্যক্রম চলছে খোলা আকাশের নিচে এবং একটি টিনশেডের নিচে। গত এক মাস ধরে বিদ্যালয়টি পদ্মার বুকে বিলীন হলেও, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত পাইনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রথম নদীভাঙনের কবলে পড়ে ১৯৯৫ সালে, এরপর ২০০৭ সালে আবার ভেঙে যায়। ২০১৩ সালে নতুন করে চরপাইনপাড়া এলাকায় ৫টি কক্ষ নির্মাণ করে বিদ্যালয়টি চালু করা হয়েছিল। কিন্তু গত বর্ষার ভাঙনে বিদ্যালয়ের মাঠ ও টিনশেড ঘরটি বিলীন হয়ে গেলে, বিদ্যালয়ের কার্যক্রম সাময়িকভাবে নদীর দক্ষিণ তীরে নাওডোবা এলাকায় স্থানান্তর করা হয়।
এখন বিদ্যালয়ের প্রায় সব শিক্ষার্থীই পদ্মার চরের পাইনপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তারা প্রতিদিন প্রায় ২ কিলোমিটার জলপথ নৌকা দিয়ে পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে আসছেন। তবে নদী পারাপারে ভয় পাওয়ায়, প্রাক্-প্রাথমিক ও প্রথম শ্রেণির অনেক ছাত্র-ছাত্রীকে বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছেন না তাদের অভিভাবকেরা।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পাইনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন নাওডোবা এলাকার একটি খালি জমিতে, যেখানে কোনো টয়লেট বা অন্যান্য সুবিধা নেই। পঞ্চম শ্রেণির ৪০ জন শিক্ষার্থীকে একত্রে পাঠদান দেয়া হচ্ছে। টানা সূর্যের মধ্যে শিশুদের পড়াশোনা চলছে এবং খোলা আকাশের নিচে তারা শিক্ষকের নির্দেশনা অনুযায়ী পাঠ নিচ্ছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম মিয়া জানান, বিদ্যালয়ের ভবন না থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে বড় ধরনের সমস্যা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, “আমরা শীঘ্রই চূড়ান্ত পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে চাই, কিন্তু কোথায় স্কুলটি পুনরায় চালু করা যাবে, সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। জেলা ও উপজেলা কর্মকর্তাদের জানিয়েছি, কিন্তু তাদের কাছ থেকে কোনো সমাধান আসেনি।”
জাজিরা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিয়ামত হোসেন জানান, তিনি বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে যাননি এবং স্কুলটির কার্যক্রম বন্ধ হয়েছে কি না, সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানেন না। তিনি বলেন, “আমি শুনেছি, একটি স্কুল নদীভাঙনের শিকার হয়েছে, কিন্তু সেটি দেখতে যেতে পারিনি।”
এদিকে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী রায় বলেছেন, “আমি দুই সপ্তাহ আগে এখানে যোগদান করেছি। কেউ আমাকে বিদ্যালয়টির বিষয়ে কিছু জানায়নি, তবে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।”