দ্যা নিউ ভিশন

নভেম্বর ২৪, ২০২৪ ২৩:২৮

গণহত্যায় সমর্থন, যৌন হয়রানি, অনিয়ম ও অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগে রাবি অধ্যাপকের অপসারণের দাবি উঠেছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. মুসতাক আহমেদের অপসারণ দাবি করেছে শিক্ষার্থীরা। তার বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার গণহত্যায় সমর্থন ও উসকানি দেওয়াসহ মোট চারটি অভিযোগ আনা হয়েছে। আজ রবিবার দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন। অভিযোগের কপি উপাচার্য দপ্তর ও বিভাগের সভাপতির কাছেও জমা দেওয়া হয়েছে। ড. মুসতাকের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা গণহত্যায় সমর্থন ও উসকানি দেওয়ার পাশাপাশি একাডেমিক অনিয়ম-দুর্নীতি, যৌন হয়রানি, এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।

 

শিক্ষার্থীরা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন, জুলাই-আগস্ট মাসে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের সময় ড. মুসতাক আহমেদ তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আন্দোলনের বিরুদ্ধে একাধিক উসকানিমূলক ও অনৈতিক ভাষায় পোস্ট দেন, যা সরকারকে গণহত্যায় উসকে দেয়। এ ছাড়াও, একাডেমিক পরিসরে নিয়মিত ক্লাস না নেওয়া, শিক্ষার্থীদের অপমান করা, পরীক্ষায় খাতায় অনৈতিক সুবিধা দেওয়া, হুমকি-ধামকি দেওয়া, বিভাগের অর্থ তছরুপ করা, নারী শিক্ষার্থীদের হয়রানি করা এবং অপছন্দের শিক্ষার্থীদের কম নম্বর দেওয়ার অভিযোগও আনা হয়েছে।

 

ড. মুসতাকের ছাত্র-জনতার গণহত্যায় সমর্থন ও উসকানির বিষয়ে শিক্ষার্থীরা জানান, আন্দোলন চলাকালীন তিনি তার ফেসবুকে একটি পোস্টে লিখেন, “যারা নিজেদের রাজাকার-আলবদর দাবি করতে পারে, আমি কে রাজাকার, তুমি কে রাজাকার বুলি আওড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উত্তাপ ছড়াতে পারে, তাকে/তাদেরকে পড়ানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর হইনি। আমার পেছনে রাষ্ট্র বিনিয়োগ করেছে, এই পর্যায়ে আসতে।” এ ছাড়াও, তিনি গত ১৭ জুলাই ঢাবি ও সারাদেশে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলাকে সমর্থন দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন, “অপারেশন চলছে। কাটাছেঁড়া। যাকে বলে ব্যবচ্ছেদ। এক একটি কনুই ব্যাংকের (ব্যাঙ) ব্যবচ্ছেদ করে বিভিন্ন অংশ দেখার কাজ চলছে। একটু দূরে থাকুন।”

 

একাডেমিক দুর্নীতির বিষয়ে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, একটি সেমিস্টারে ন্যূনতম ক্লাসের সংখ্যা না নিয়ে তিনি সাধারণত পাঁচ থেকে সাতটি ক্লাসের মাধ্যমে কোর্স শেষ করেন। এই ক্লাসগুলোও রুটিন না মেনে নিজের সুবিধামতো সময়ে নেন। ক্লাসের সময় শিক্ষার্থীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় এবং ক্লাসের সময়সীমা মাত্র ২০ থেকে ২৫ মিনিট। এমনও নজির রয়েছে যে, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে অপেক্ষা করছেন, অথচ তিনি চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছেন।

 

শিক্ষার্থীরা আরও উল্লেখ করেছেন, তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলকভাবে খাতা মূল্যায়নের অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলে তিনি তাদের বিশেষ সুবিধা দেন এবং তাদের মাধ্যমে পুরো ব্যাচের ওপর নজরদারি করেন। এই নজরদারির তথ্যের ভিত্তিতে তিনি অন্যান্য শিক্ষার্থীদের খাতা মূল্যায়ন করেন, যা অনেক শিক্ষার্থীকে প্রাপ্য নম্বর থেকে বঞ্চিত করে। ক্লাসে তিনি প্রায়ই বলেন, “পরীক্ষার নম্বর খাতায় থাকে না, মাথায় থাকে।” এই উক্তি বিভাগের মধ্যে সর্বজনবিদিত।

 

নারী শিক্ষার্থীদের হয়রানির বিষয়ে অভিযোগ করা হয়েছে যে, ড. মুসতাক প্রায়ই অপ্রয়োজনে রাতবিরাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ) নারী শিক্ষার্থীদের মেসেজ করেন, যা তাদের জন্য বিব্রতকর।

 

অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, তাদের কাছে সুস্পষ্ট তথ্য আছে যে, বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে (৫ মে ২০২১-৪ মে ২০২৪) ড. মুসতাক আহমেদ বিভিন্ন তহবিল থেকে ৯ লাখ ৮১ হাজার টাকা তছরুপ করেছেন। বিভাগের সভাপতি পরিবর্তন হওয়ার পর তার এই অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারি ধরা পড়ে এবং নতুন সভাপতি বিষয়টি রেজিস্ট্রারকে জানিয়েছেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তিনি এই অর্থ ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করলেও এখনো সম্পূর্ণ টাকা ফেরত দেননি।

 

এ ছাড়া এক অছাত্রকে ছাত্রলীগের নেতা বানাতে সহযোগিতার অভিযোগও করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, ২০২৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বিভাগের সান্ধ্য মাস্টার্স প্রোগ্রামের জরুরি সভায় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আসাদুল্লাহ হিল গালিবের ভর্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ার পরেও ড. মুসতাক আহমেদ তাকে ছাত্রলীগের সম্মেলনের আগের দিন ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে পেছনের তারিখ (২৪ আগস্ট ২০২৩) দেখিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে ছাত্রত্বের প্রত্যয়নপত্র প্রদান করেন।

 

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে অধ্যাপক মুসতাক আহমেদের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ