দ্যা নিউ ভিশন

এপ্রিল ১৯, ২০২৫ ০৮:৫১

কুড়িগ্রামে নদী ভাঙনে হাজারো পরিবার হয়ে পড়েছে নিঃস্ব

কুড়িগ্রামে তিস্তা নদীর ভাঙনে নিঃস্ব পরিবারগুলো নদী ভাঙন রোধের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছে। গত মঙ্গলবার দুপুরে রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নে তিস্তাপাড় থেকে তোলা।

কুড়িগ্রাম জেলার নদ-নদীগুলোর ভাঙনে অনেক পরিবার তাদের বসতবাড়ি হারাচ্ছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, গত এক মাসে নদীভাঙনে প্রায় এক হাজার পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়েছে।

রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চর খিতাব খাঁ গ্রামের বাসিন্দা আবদুল হামিদ (৬৮) একজন ক্ষতিগ্রস্ত। তার ছিল সাতটি ঘরের একটি পাকা বাড়ি এবং চার একর ফসলি জমি। গত বন্যায় তিস্তা নদীর ভাঙনে তার বাড়ি ভেঙে গেছে। বর্তমানে পরিবারের আট সদস্যসহ বাঁধের রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন এবং দিনমজুরি করে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। তিনি বলেন, “তিস্তা নদী আমাদের প্রজন্মের বসতভিটা ভেঙে দিয়েছে, এখন আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই।”

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে রাজারহাট উপজেলায় তিস্তা নদীর ভাঙনে ৩ শতাধিক পরিবার, ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে প্রায় ২৫০ পরিবার, চিলমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নে গাজীরপাড়া, শাখাহাতির চর, মোনতোলার প্রায় ৩০০ পরিবার, রৌমারী উপজেলার চর শৌলমারী উপজেলার সোনাপুরে শতাধিক পরিবার এবং কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের প্রথম আলো চরে শতাধিক ও যাত্রাপুর ইউনিয়নের ভগবতীপুর ইউনিয়নের প্রায় ১০০ পরিবার বসতভিটা হারিয়েছে। এসব পরিবার অন্যের জমিতে ও বাঁধের রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে। অনেকেই মাথা গোঁজার ঠাঁই না পেয়ে অন্য জেলায় চলে গেছেন।

রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের তিস্তাপাড়ে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন দেখা গেছে। গত ১৫ দিনে ওই এলাকার শতাধিক বসতবাড়ি ভেঙে গেছে। ভাঙনের শিকার মানুষ বাঁধের রাস্তায় এবং অন্যের আঙিনায় অস্থায়ী বাসস্থান গড়ে নিয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তিস্তার ভাঙনে চর খিতাব খাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রামহরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর খিতাব খাঁ, গতিয়াশাম, কালিরহাট, রামহরিপাড়া, নামাভরাট গ্রাম ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।

সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের প্রথম আলো চরের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান জানান, জুলাই মাসে বন্যার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত চরের শতাধিক পরিবার ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে গেছে। প্রথম আলো চরে আলোর পাঠশালা, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দুটি সোলার পাম্প, ঈদগাহ মাঠ ও তিন শতাধিক বসতবাড়ি ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।

চিলমারী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে চিলমারী ইউনিয়নের মোনতোলা, শাখাহাতি, গাজীপাড়ায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন চলছে। গত এক মাসের ভাঙনে প্রায় ৩০০ বসতবাড়ি, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ ও বাজার ভেঙে গেছে। নদীর ভাঙনরোধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বাবলু মিয়া জানান, গত এক মাসে ইউনিয়নের ২৫০টি বাড়ি নদীতে ভেঙে গেছে। এখনও ইউনিয়নের খুদিরকুটি, উত্তর বালাডোবা, মোল্লারহাট এলাকার ৫০০ পরিবার ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে বেগম নুর নাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোল্লারহাট বাজার, খুদিরকুয়ি বাজার ও বিদ্যালয় বিলীন হয়ে যাবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কুড়িগ্রাম কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, গত এক মাসে কুড়িগ্রাম জেলার নদ-নদীগুলোর চার কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছিল। এর মধ্যে পাঁচটি পয়েন্টে ভাঙন মোকাবিলায় কাজ চলমান রয়েছে।

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ

ছাত্রদলের অনুষ্ঠানে শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি, ঐক্যবদ্ধভাবে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার আশা

ছাত্রশিবির, ছাত্রদলসহ যাঁরা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছেন, তাঁরা ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী