এখন পরিষ্কার হচ্ছে, রাশিয়ার কাজানে ব্রিকস সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের মধ্যে বৈঠকের তাগিদেই পূর্ব লাদাখে বোঝাপড়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলএসি) আসলে কী পরিবর্তন ঘটেছে? সফরের আগে এই সীমান্ত বোঝাপড়ার ঘোষণার পেছনে কার আগ্রহ—ভারত, নাকি চীন? এর উত্তর এখনও অজানা।
প্রধানমন্ত্রী মোদির সফরের ঠিক আগে লাদাখে সমঝোতার ঘোষণা প্রথম দেয় ভারত। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি পৃথকভাবে জানান, এলএসি সংঘাত ও উত্তেজনা নিরসনে টহলদারির এলাকা নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। এই বোঝাপড়া এলএসি থেকে সেনা সরানোর কাজে সহায়ক হবে এবং ২০২০ সালের সংঘর্ষের আগে স্থিতাবস্থায় ফেরার সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে।
এখনও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চীনও একই কথা জানিয়েছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, দুই দেশ একাধিক বিতর্কিত বিষয় সমাধানে পৌঁছেছে, যার মধ্যে এলএসি টহলদারি ও নজরদারি অন্তর্ভুক্ত। চীনের বিবৃতির পর বিক্রম মিশ্রি জানান, কাজানে মোদি ও সি-এর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে।
স্পষ্টতই দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের তাগিদেই এই বোঝাপড়ার ঘোষণা হয়েছিল, তবে সেই তাগিদ কার বেশি—এটি নিয়ে গবেষণা শুরু হয়ে গেছে। গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো, দুই দেশের কেউই স্পষ্টভাবে বলেনি, ওই সমঝোতার প্রকৃত রূপ কী। কোন কোন এলাকায় কী ধরনের সমঝোতা হয়েছে, কোথায় ভারতীয় বাহিনী টহলদারি চালাতে পারবে, এবং পূর্বের ‘বাফার জোন’গুলোর অবস্থা কী—এসব বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি।
গতকাল বুধবার বিকেলে কাজানে মোদি-সি বৈঠকটি ছিল পুরোপুরি দ্বিপক্ষীয় এবং কূটনৈতিক পরিভাষায় ‘স্ট্রাকচার্ড’। তবে বৈঠকের পর কোনো যৌথ বিবৃতি না আসায় প্রশ্ন উঠেছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বোঝাপড়াকে ‘চুক্তি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, অথচ চীনের বিবৃতিতে এটি ‘গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ফলে বোঝাপড়ার প্রকৃতি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, বিশেষ করে পাঁচ বছর পর অনুষ্ঠিত হওয়া এই দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের প্রেক্ষাপটে।
প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় এই ‘চুক্তি’ বা ‘গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি’র চরিত্র নিয়ে জানতে চেয়েছে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ এক বিবৃতিতে ছয়টি প্রশ্ন তুলেছেন এবং দাবি করেছেন, এলএসি নিয়ে চীনের সঙ্গে যে বোঝাপড়া হয়েছে, তা দেশবাসীকে বিস্তারিত জানানো হোক।
তিনি জানতে চান, ভারতীয় বাহিনী ডেপসাংয়ের পাঁচটি টহল পয়েন্টে টহল দিতে পারবে কি না। এছাড়া ডেমচকের তিনটি টহল পয়েন্ট এবং প্যাংগং হ্রদের ফিঙ্গার–৮ পর্যন্ত টহলদারির বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
অন্যদিকে, ভারত বারবার বলেছে যে, ২০২০ সালের পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরতে না পারলে সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না। পাঁচ বছর ধরে এ কারণে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা বন্ধ ছিল। সেনাপ্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদীও এই অবস্থানের কথা নিশ্চিত করেছেন।
এই চুক্তির ফলে কাঙ্ক্ষিত স্থিতাবস্থা ফিরে এল কি না, কাজান থেকে ফিরে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে হবে।