একজন নারী সমুদ্রের তলদেশে ডুব দিচ্ছেন, অন্য একজন পাহাড়ের পথে ছুটছেন। আরেকজন দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে অংশ নিচ্ছেন দেশ-বিদেশের রেসে। এই তিনজন নারীর পরিচয় বাংলাদেশি, যারা নতুন প্রজন্মের অদম্য উদাহরণ। একজন স্কুবা ডাইভিং করছেন, অপরজন অর্ধদূরত্বের আয়রনম্যান প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়েছেন, এবং তৃতীয়জন আন্তর্জাতিক কার রেসিংয়ে অংশ নিচ্ছেন। এদের নিয়ে এবারের আয়োজন।
মালয়েশিয়ায় গিয়ে আধুনিক ডুবুরি হওয়ার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন জান্নাতি হোসেন। সেখানে গাইড ও প্রশিক্ষক হিসেবেও কাজ করেছেন এবং অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। জান্নাতুল নাঈম তার ডাইভ মাস্টার হওয়ার গল্প শুনেছেন। সামুদ্রিক অ্যানিমোন, ক্লাউন ফিশ, সিন্ধুঘোটকসহ নানা ধরনের মাছ হাতের কাছে। ক্লাউন ফিশগুলো প্রবালে লুকিয়ে থাকে, মাথা বের করে আবার চলে যায়। প্রথমবার সমুদ্রে ডুব দেওয়ার অভিজ্ঞতা ছিল সত্যিই অনন্য, মনে হচ্ছিল আমি মহাকাশে ভেসে রয়েছি।
ডুবুরির জীবন শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে। সেখানে প্রবালপ্রাচীর সংরক্ষণে সচেতনতা তৈরির একটি কর্মসূচিতে অংশ নেন। দায়িত্ব ছিল পানির নিচের ময়লা পরিষ্কার করা এবং কচ্ছপ সংরক্ষণে কাজ করা। তখন তার সাঁতারের দক্ষতা খুবই সীমিত ছিল, কিন্তু নেতৃত্ব দিতে গিয়ে ঝাঁপ দিতে বাধ্য হন।
মালয়েশিয়ায় গিয়ে স্কুবা ডাইভিং শেখার সিদ্ধান্ত নেন। তার প্রথম কোর্সের পরই গভীর সমুদ্রের জীবন তাকে মোহিত করে। দ্বিতীয় কোর্সে রাতের সাগরে ডুব দিতে গিয়ে প্রথমে ভয় পেলেও ধীরে ধীরে তা কাটিয়ে উঠেন। এখন রাতের সমুদ্রে ডুব দেওয়া তার প্রিয় কাজ।
বর্তমানে তিনি সনদধারী ডাইভিং শিক্ষক। তার শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে তিনটি কোর্স সম্পন্ন করেছেন। ডাইভ মাস্টার কোর্সটি সম্পন্ন করতে তার প্রায় দুই মাস লেগেছিল, যেখানে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া ছিল আবশ্যক।
ডাইভিং শেখার জন্য মালয়েশিয়া অন্যতম সেরা দেশ। এককভাবে শিখলে খরচ হয় প্রায় পাঁচ হাজার মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত, আর দলগতভাবে শিখলে খরচ কমে যায়।
ডুব শিক্ষক হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি তার লক্ষ্য ২০২৫ সালের মধ্যে প্রশিক্ষক ও কোর্স পরিচালকের সনদ অর্জন করা। দেশে একটি ডাইভ শপ খুলে সাগরের তলদেশের জীবনের প্রতি ভ্রমণকারীদের আকৃষ্ট করতে চান। সেন্ট মার্টিন দ্বীপে বিদেশি পর্যটক বাড়ানোর জন্য স্কুবা ডাইভিং একটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারে, কারণ সাগরের তলদেশ দেখা ভ্রমণপিপাসুদের কাছে একটি স্বপ্নের মতো।