ভারতের প্রখ্যাত শিল্পপতি রতন টাটা ৯ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি শুধু ব্যবসায়িক সফলতার জন্যই পরিচিত ছিলেন না, দানশীলতার জন্যও তার বিশেষ সুনাম ছিল। ২০০৭ সালে, একটি ভারতীয় সাময়িকী *মানিলাইফ* -এ রতন টাটা তাঁর শিক্ষাজীবন থেকে নিজের ধীরে ধীরে গড়ে ওঠার কথা তুলে ধরেছিলেন। তাঁর সেই অভিজ্ঞতার চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।
### “আমার চাওয়া ছিল শুধুই একটা চাকরি”
রতন টাটা জন্মগ্রহণ করেছিলেন মুম্বাইয়ে, তবে তার সঠিক জন্মতারিখ তার স্পষ্ট মনে নেই (তিনি হাসতে হাসতে বলেছিলেন)। তিনি বড় হয়েছেন টাটা হাউসে, যা তার দাদা নির্মাণ শুরু করেছিলেন কিন্তু শেষ দেখে যেতে পারেননি।
রতন টাটার বাবা চেয়েছিলেন, তিনি যেন প্রকৌশলী হন। তাই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটিতে যন্ত্রকৌশলে পড়াশোনা শুরু করেন। তবে, প্রকৃতপক্ষে তার আগ্রহ ছিল স্থাপত্যবিদ্যায়, তাই পরবর্তীতে তিনি স্থাপত্যে স্থানান্তরিত হন এবং স্নাতক সম্পন্ন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে সাত বছর লেগে গেলেও তার কর্নেলের সময়টি ছিল দারুণ, যদিও তিনি ঠান্ডা আবহাওয়াকে একদমই পছন্দ করতেন না। তাই লস অ্যাঞ্জেলেসে একটি স্থাপত্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি খুঁজে নিয়েছিলেন এবং সেখানে বেশ ভালো ছিলেন। তবে, ভারতে ফিরে আসার কোনো ইচ্ছা না থাকলেও, তার দাদি অসুস্থ হওয়ায় এবং জেআরডি টাটার অনুরোধে ছয় মাসের জন্য টেলকো (বর্তমানে টাটা মোটরস)-তে কাজ করতে ভারতে ফিরে আসেন।
### কঠিন শুরুর দিন
১৯৬২-৬৩ সালে টেলকোতে তাঁর ছয় মাস ছিল রতন টাটার জন্য খুব কঠিন সময়। কোনো কাজের দায়িত্ব ছিল না, এমনকি বসার জায়গাও ছিল না। তবে, তিনি সেই কঠিন সময়েও প্রচুর কিছু শিখেছেন। এরপর টাটা স্টিলে যোগ দেন এবং সেখানে কিছু দায়িত্ব নিয়ে কাজের প্রতি মনোনিবেশ করেন।
### লোকসান থেকে লাভের পথে
রতন টাটাকে নেলকো (ন্যাশনাল রেডিও অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস কোম্পানি)-এর পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তখন নেলকো লোকসানের মধ্যে ছিল। কিন্তু তার নেতৃত্বে রেডিওর বাজারে নেলকোর শেয়ার ২ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে উঠে আসে। যদিও ব্যবসা বড় করার জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ টাটা থেকে পাননি, তবুও তিনি সংস্থাকে লাভজনক করতে সক্ষম হন।
### টাটা ইন্ডাস্ট্রিজের জন্য কৌশল
১৯৮২ সালে যখন রতন টাটার মা ক্যানসারে আক্রান্ত হন, তখন তিনি টাটা ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। সেই সময় হাসপাতালেই বসে তিনি প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি কৌশলগত পরিকল্পনা তৈরি করেন। যদিও প্রথমে বোর্ড সেই পরিকল্পনা নাকচ করে দেয়, তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে যান এবং টাটা ইন্ডাস্ট্রিজকে উচ্চ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এগিয়ে নিতে সক্ষম হন।
সর্বশেষে, রতন টাটার চিন্তাধারা এবং পরিকল্পনা তার সময়ের থেকে অনেকটাই এগিয়ে ছিল, যা ভারতীয় শিল্পক্ষেত্রকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেয়।