দ্যা নিউ ভিশন

নভেম্বর ২৫, ২০২৪ ০৭:৫৫

তাঁরা পড়াশোনা করেন, আবার প্রতিমাও গড়েন।

শারদীয় দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির এক বিশাল আয়োজন শুরু হয়। এতে যুক্ত থাকেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরাও। তাঁদেরই একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের দেবাশিষ দাস। ২০১৫-১৬ সেশনের ভাস্কর্য বিভাগের এই শিক্ষার্থী জানান, “খুব ছোটবেলায়, ক্লাস থ্রি বা ফোরে পড়ার সময় ঠাম্মার তৈরি মাটির চুলা থেকে মাটি নিয়ে ছোট ছোট প্রতিমা বানানোর চেষ্টা করতাম। ২০১৩ সালে উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার সময় বড় প্রতিমা বানাতে চেয়েছিলাম, কিন্তু প্রশিক্ষণ বা সাহসের অভাবে সেটা সম্ভব হয়নি। তবে ২০১৪ সালে ঠাম্মার উৎসাহে বড় আকারের প্রতিমা বানানো শুরু করি। তখনো প্রশিক্ষণ বা সহকারী ছিল না, ঠাম্মাই সবকিছুতে সাহায্য করেছিলেন—বাঁশের কাঠামো থেকে মাটি দিয়ে অবয়ব তৈরি পর্যন্ত।”

 

দেবাশিষের তৈরি প্রতিমা মণ্ডপে দেওয়া নিয়ে চিন্তিত থাকলেও মা এগিয়ে আসেন। তাঁর চেষ্টায় সূর্যতরুণ ক্লাব দেবাশিষের প্রতিমাটি পছন্দ করে এবং সেই বছর তাদের পূজায় দেবাশিষের তৈরি প্রতিমা ব্যবহার হয়। বগুড়ার এই তরুণ প্রায় ১০ বছর আগে প্রতিমা তৈরি শুরু করেন, যা প্রথম দেখাতেই প্রশংসিত হয় এবং পরিচিতি বাড়ে। এরপর ২০১৬, ২০১৮, ২০২০ ও ২০২১ সালে বগুড়ার বিভিন্ন মণ্ডপে তাঁর তৈরি প্রতিমায় পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

 

দেবাশিষের মতোই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র সঞ্জয় কুমার সূত্রধর প্রতিমা তৈরিতে আগ্রহী হন। যদিও তাঁর যাত্রা শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর। ২০১৫ সালে প্রথম ফরমায়েশি কাজ দিয়ে তিনি প্রতিমা বানানো শুরু করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় সেই প্রতিমায় পূজা হয়, এবং ২০১৬ ও ২০১৮ সালে সেখানেই সরস্বতীর প্রতিমা বানান। প্রথম প্রতিমাটি কাগজ দিয়ে তৈরি হয়েছিল, এবং বড় ভাইদের সহযোগিতায় কাজটি সম্পন্ন করেন।

 

প্রতিমা বানানোর সময় বিশেষ কোনো অনুভূতি কাজ করে কি না জানতে চাইলে দেবাশিষ বলেন, “প্রতিমা তৈরি করার সময় মনে হয়, তিনি একই সঙ্গে আমার মা এবং মেয়ে। আমি তাঁকে নিজ হাতে গড়ছি, এই অনুভূতিটা অসাধারণ। যখন আমার তৈরি প্রতিমার পায়ে হাজার হাজার ফুল-বেলপাতার অঞ্জলি দেওয়া হয়, তখন যে অনুভূতি হয়, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।”

 

সঞ্জয় জানান, তাঁর প্রতিমা তৈরির আগ্রহ জন্মায় সিরাজগঞ্জে ছোটবেলায় পালদের কাজ দেখে। “পূজার আগে পালরা এসে প্রতিমা বানিয়ে দিত, আমি বসে বসে কাজগুলো খেয়াল করতাম। কাঠামো তৈরি থেকে শুরু করে রং করা পর্যন্ত প্রতিটা ধাপ আমি দেখতাম, তখন থেকেই প্রতিমা বানানোর আগ্রহ জন্মায়।” সেই আগ্রহ থেকেই তিনি চারুকলায় ভর্তি হন। তবে চারুকলার পড়াশোনা এবং প্রতিমা তৈরির মধ্যে পার্থক্য নিয়ে তিনি বলেন, “চারুকলার পড়াশোনা আর প্রতিমা বানানো পুরোপুরি আলাদা। চারুকলায় পড়লেই প্রতিমা বানানো যায় না। তবে ছোটবেলার ধারণাগুলো অনেকটাই বদলে গেছে এখানে পড়ার পর।”

 

দেবাশিষ ও সঞ্জয় দুজনই এবার প্রতিমা বানাতে পারেননি, তাঁরা দুজনই গবেষণার কাজে ব্যস্ত। তবে ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে আবারও প্রতিমা বানানোর ইচ্ছা রয়েছে তাঁদের।

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ

ঝলমলে আইপিএল নিলামের অন্য রূপ: কালো তালিকা, রাতারাতি কোটিপতি আর ক্ষমতা প্রদর্শন

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ললিত মোদি। ভারতীয় ক্রিকেট