দ্যা নিউ ভিশন

নভেম্বর ২৫, ২০২৪ ০৯:৪৮

চট্টগ্রামের সন্তান তৈয়ব যুক্তরাষ্ট্রের একটি শহরের মেয়র হয়ে নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন

২০২৩ সালের ২৭ জুন, নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বইমেলার শেষ দিন, আমি কবি বন্ধু এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকা **মনোমানচিত্র**-এর সম্পাদক আলী সিদ্দিকীর সঙ্গে পেনসিলভানিয়া যাই। নিউইয়র্ক থেকে প্রায় ১৬৭ কিলোমিটার দূরে, শান্ত শহর ল্যান্সডেলে তাঁর বাসা। সেখানে কবিতা, গান আর আড্ডার মধ্যে দিনগুলো কাটছিল। হঠাৎ এক বিকেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাধবচন্দ্র দাশ ফোন করলেন। কয়েক বছর ধরে তিনি এখানকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করছেন। তাঁর বাসাও পেনসিলভানিয়ায়, তবে ফিলাডেলফিয়া সিটির কাছে মিলবোর্ন শহরে। তিনি আমাদের তাঁর বাসায় আমন্ত্রণ জানালেন, আমরাও সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করি।

 

নির্ধারিত দিন আমরা আলীকে নিয়ে রওনা দিলাম। পথে হঠাৎ দেখলাম এক সড়কের নাম ‘বাংলাদেশ’। আমি চিৎকার করে আলীকে বললাম, “দেখ দেখ!” আলী হেসে বললেন, “এই চমকটা তোমার জন্য রেখেছিলাম। আমরা এখন যে শহরে ঢুকলাম, সেটার নাম মিলবোর্ন, আর এর মেয়র একজন বাংলাদেশি—চট্টগ্রামের মাহবুবুল আলম তৈয়ব।” বুঝলাম, এই সড়কের নামকরণের পেছনে সেই মেয়রেরই হাত রয়েছে। পরে মাধবের বাসায় গিয়ে জানতে পারি যে, এই মিলবোর্নে প্রায় আট হাজার বাংলাদেশির বাস। এখানে মেয়রসহ পাঁচজন কাউন্সিলম্যানই বাংলাদেশি। বাংলাদেশি প্রবাসীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মেয়র তৈয়ব এক সড়কের নাম ‘বাংলাদেশ অ্যাভিনিউ’ করে দেন।

 

মেয়রের সঙ্গে দেখা হওয়ার আগেই তাঁর জীবনের গল্প শুনে ফেলি। মাহবুবুল আলম তৈয়ব চট্টগ্রামের দক্ষিণ মধ্যম হালিশহরের মানুষ। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এসে প্রথমে ফিলাডেলফিয়ায় স্থায়ী হন এবং পরবর্তীতে মিলবোর্নে চলে আসেন। সেখানে আসার পর থেকেই তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। স্থানীয় বাংলাদেশিদের সমর্থনে ২০১৫ সালে কাউন্সিলম্যান নির্বাচিত হন এবং ২০২১ সালে ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়র হিসেবে শপথ নেন।

 

তৈয়বের কাছ থেকে জানতে চাইলাম, আমেরিকার মাটিতে সড়কের নাম বাংলাদেশ রাখার চিন্তা কীভাবে এলো? তিনি বলেন, “আমি চেয়েছিলাম, বাংলাদেশি হিসেবে একটা স্মারক রেখে যেতে, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের মনে রাখে।” তাঁর মেয়র হওয়ার পেছনে প্রেরণা ছিলেন আগের মেয়র টমাস ক্রেমার, যিনি তৈয়বকে পরবর্তী মেয়র হিসেবে প্রস্তুত হতে সবসময় উৎসাহ দিতেন। ক্রেমারের অনুরোধেই তৈয়ব মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং জনগণের সমর্থন নিয়ে জয়ী হন।

 

তৈয়বের সাফল্যের এই গল্প শুনতে শুনতে বিকেল গড়িয়ে গেল। তবে মেয়র আমাদের ছাড়লেন না। তিনি আমাদের তাঁর বাসায় আমন্ত্রণ জানালেন, যেখানে নানা পদের বাঙালি ও আমেরিকান খাবারের আয়োজন ছিল। এই দিনটির স্মৃতি আমার মনে চিরকাল অম্লান হয়ে থাকবে, ঠিক যেমন ‘বাংলাদেশ অ্যাভিনিউ’ নামক সড়কটি মাইলফলক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ

ঝলমলে আইপিএল নিলামের অন্য রূপ: কালো তালিকা, রাতারাতি কোটিপতি আর ক্ষমতা প্রদর্শন

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ললিত মোদি। ভারতীয় ক্রিকেট